রাজ্যশাসনে গতি আনতে মন্ত্রী-আমলাদের সঙ্গে ইতিমধ্যেই বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই বৈঠকেই তিনি জেলাশাসকদের জানিয়ে দিয়েছেন উন্নয়নের কাজকর্ম খতিয়ে দেখতে অক্টোবরের গোড়া থেকেই আবার জেলা সফর শুরু করবেন। আর মুখ্যমন্ত্রীর সেই সফরের আগেই জেলা জুড়ে বিভিন্ন অসমাপ্ত কাজে অগ্রগতি আনতে চাইছেন হাওড়ার নতুন জেলাশাসক শুভাঞ্জন দাশ। আজ, বৃহস্পতিবার তিনি জেলার সমস্ত মহকুমাশাসক, বিডিও এবং বিভিন্ন দফতরের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করবেন।
জেলাশাসকের দফতর সূত্রের খবর, শরৎ সদনের ‘পথের দাবি’ সভাগৃহে আয়োজিত ওই বৈঠকে মূলত রাস্তা, স্বাস্থ্য ও নিকাশি পরিষেবার উপরে জোর দেওয়া হবে। নতুন জেলাশাসক হিসেবে হাওড়ার দায়িত্ব নেওয়ার পরেই শুভাঞ্জনবাবু ওই তিনটি বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করেন। তাতেই হাওড়া, বালি ও উলুবেড়িয়া পুরসভার বিভিন্ন রাস্তা, হাসপাতালের বেহাল অবস্থাটা স্পষ্ট হয়ে যায়। পাশাপাশি, সোমবার থেকে ভারী বৃষ্টির ফলে গোটা হাওড়া জলমগ্ন হওয়ায় নিকাশির প্রকৃত চিত্রটাও তাঁর কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়।
বুধবার শুভাঞ্জনবাবু বলেন, “কোন কাজে কী সমস্যা রয়েছে, কেন কাজটা হচ্ছে না, তা জানার জন্যই এই বৈঠক ডেকেছি। প্রতিটি দফতরের মধ্যে সমন্বয় তৈরির জন্যও এই বৈঠক জরুরি।” হাওড়ায় উন্নয়ন মূলক কাজে বিভিন্ন দফতরের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। আর তাই সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে বলেও মনে করেন জেলাশাসক। পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলা জুড়ে যে সমস্ত প্রকল্পের শিলান্যাস করেছেন সেগুলি কতটা এগিয়ে, সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের কাছে বৈঠকে জানতে চাইবেন তিনি। যেমন, সাঁকরাইলে জরি হাবের কাজ এতটুকুও এগোয়নি বলেই তিনি রিপোর্ট পেয়েছেন। কেন সেখানে কোনও কাজ হয়নি, সেই বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে। ‘‘অবিলম্বে কাজ শুরু করিয়ে, সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সেখানে জরি শিল্পীদের পুর্নবাসন শুরু করা যাবে বলেই আশা করছি,’’ মন্তব্য করেন শুভাঞ্জনবাবু।
জেলা জুড়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের মধ্যে রাস্তার মেরামতিকেই অগ্রাধিকার দিতে চাইছেন জেলাশাসক। তিনি জানান, কোন এলাকায় কোন কোন রাস্তা খারাপ রয়েছে, তার একটি তালিকা চাওয়া হবে সংশ্লিষ্ট বিডিও এবং আধিকারিকদের কাছে। নির্দিষ্ট একটি সময়ের মধ্যেই তা জেলাশাসকের কাছে জমা দিতে হবে। এর পরে গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার অনুযায়ী রাস্তা মেরামতির কাজ শুরু হবে। তিনি বলেন, “টাকার জন্য কিংবা অন্য কোনও দফতেরর সহযোগিতা নিয়ে সমস্যা হলে তা মেটানোর জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।”
হাওড়া পুরসভার সঙ্গে ‘হাওড়া ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট’-এর (এইচআইটি) সমন্বয়ের অভাবে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ থমকে রয়েছে বলেও জানতে পেরেছেন শুভাঞ্জনবাবু। পাশাপাশি, হাওড়ার বিভিন্ন রাস্তা বিভিন্ন দফতরের অধীনে রয়েছে। পুরসভা কিংবা পঞ্চায়েতের সঙ্গে সেই সমস্ত দফতরের কোনও সমন্বয় না থাকায় রাস্তাগুলি সারানো হচ্ছে না। যেমন, পঞ্চাননতলায় তিন বছর ধরে ভূগর্ভস্থ নিকাশি নালার কাজ চলছে। আজও এইচআইটি তা শেষ করতে না পারায় রাস্তার বেহাল অবস্থা। আবার পূর্ত দফতরের সঙ্গে হাওড়া ও বালি পুরসভার চাপান-উতোরের জেরে জিটি রোডে মরণফাঁদ তৈরি হয়েছে। নিকাশি সমস্যা মেটাতে হাওড়া ও বালি পুরসভার ভূমিকা কী, তা-ও খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়াও স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে হাওড়া, বালি, উলুবেড়িয়ায় হাসপাতালগুলির অবস্থা নিয়েও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান জেলাশাসক। |