চার দিকে শুধু জল আর জল। পথঘাট, খাল, ঘরবাড়ি— সবই জলের তলায়। জল কোথাও বুক, কোথাও বা কোমর অবধি। যাতায়াতের ভরসা কয়েকটি ডিঙি নৌকো ও ভেলা। আর সেই নৌকোয় চাপিয়েই জলে ডোবা ঘর থেকে রান্নার জিনিসপত্র, জামাকাপড় নিয়ে অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গায় এসে আশ্রয় নিতে হচ্ছে বাসিন্দাদের।
বন্যাপ্লাবিত গ্রাম নয়। এ দৃশ্য হাওড়ার ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বপাড়া এলাকার ভূতবাগান, পেয়ারাবাগান অঞ্চলের। সেখানে গত তিন দিন ধরে একই অবস্থায় হাজার তিনেক মানুষ। বুধবার বৃষ্টির পরিমাণ কমলেও ওই এলাকাগুলি থেকে জল নামা তো দূর, উল্টে বেড়ে চলেছে। বাড়ছে আতঙ্কও।
এলাকার বাসিন্দা প্রবীর রায় বললেন, “গত তিন দিন ধরে কারও উনুনে হাঁড়ি চড়েনি। পানীয় জলও নেই। নৌকো করে উঁচু জায়গা থেকে শুকনো খাবার ও জল এনে খেতে হচ্ছে আমাদের।” প্রবীরবাবুর মতো অশোক কর্মকার, গোপাল মজুমদার, কৃষ্ণ মণ্ডলদেরও অভিযোগ, এই ক’দিনে কোনও সরকারি ত্রাণ আসেনি। |
ভেসে যায় আদরের নৌকো। বুধবার, হাওড়ার টিকিয়াপাড়ায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার |
দেওয়া হয়নি পানীয় জল ও ত্রিপল। একই অভিযোগ হাওড়ার অন্তত ১০টি জলমগ্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের। তাঁদের অভিযোগ, দু’দিন হয়ে গেলেও প্রশাসন শুকনো খাবার দূরের কথা, পানীয় জলের ব্যবস্থাও করেনি। ফলে বাসিন্দাদের পানীয় জল ও শুকনো খাবার কিনে খেতে হচ্ছে।
পুরসভাও মানছে, ত্রাণের কাজ ঠিক মতো শুরু করা যায়নি। কারণ কিছু ত্রিপল এবং ওআরএস ছাড়া পুরসভার ভাঁড়ারে কিছু নেই। তাই এ দিন জেলাশাসককে ফোন করে ত্রাণের জন্য আরও ত্রিপল এবং জলের পাউচ চেয়েছেন মেয়র মমতা জায়সবাল। এ দিন জেলাশাসক শুভাঞ্জন দাস বলেন, “মেয়রের সঙ্গে কথা হয়েছে। পুরসভার চাহিদা মতো ত্রাণ যাতে সরবরাহ করা হয়, তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
হাওড়া পুরসভা সূত্রে খবর, এ দিন অধিকাংশ ওয়ার্ডে জল নামলেও অন্য কয়েকটি ওয়ার্ডে জল ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। কারণ হিসেবে পুরসভার এক ইঞ্জিনিয়ার জানান, ওই ওয়ার্ডগুলির ঢাল গঙ্গার দিকে, তাই অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকার জল ওই সব ওয়ার্ডে এসে জমা হচ্ছে। গঙ্গার জলস্তর বেড়ে থাকায় জল যেতে পারছে না গঙ্গায়। ফলে ওই এলাকাগুলিতে জল বেড়ে যাচ্ছে। পুরসভা সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত বালিটিকুরির রামকৃষ্ণপল্লি, বকুলতলা, কাশীপুর, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বেলগাছিয়া, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বেলিলিয়াস রোড, বেলিলিয়াস লেন, পঞ্চাননতলা, উত্তর হাওড়ার ১ থেকে ৩ নম্বর ওয়ার্ড, ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নস্করপাড়া, মহীনাথ পোড়েল লেন, ঘোষপাড়া, ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কাঁকড়াপাড়ার অবস্থা উদ্বেগজনক।
বৃষ্টি থামলেও বিভিন্ন ওয়ার্ডে পরিস্থিতি যে ভয়াবহ, তা মানছেন মেয়র। তাঁর অভিযোগ, বিভিন্ন সরকারি দফতরের সমন্বয়ের অভাবেই হাওড়া শহরের এই হাল। তিনি বলেন, “গতকালও কেএমডব্লিউএসএ-র ৪টি পাম্প চলেছিল। কিন্তু আজ দু’টি পাম্প খারাপ হয়ে যাওয়ায় উত্তর হাওড়ার পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। অন্য দিকে, হাওড়া উন্নয়ন সংস্থা কদমতলার কাছে নিকাশি নালার কাজ গত তিন বছর ধরে শেষ করেনি। ফলে মধ্য হাওড়ার বিস্তীর্ণ এলাকার জল ড্রেনেজ ক্যানাল দিয়ে গঙ্গায় যেতে পারেনি। এটা বিভিন্ন দফতরের সমন্বয়ের অভাবের জন্যই হচ্ছে।” মেয়র জানান, জল নামানোর জন্য এ দিন পুরসভার ৩২টি পাম্পের মধ্যে ২৯টি চালানো হয়েছে। |