রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে মারধর ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় গ্রেফতারি এড়িয়ে আগাম জামিনের আবেদন করেছিলেন দুই মূল অভিযুক্ত ছাত্র। বিশ্বজিৎ দে ওরফে বাপ্পা ও সিমিওন সোরেন নামে ওই দুই অভিযুক্তের আগাম জামিনের আবেদন বুধবার খারিজ করে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। ফলে তাঁদের গ্রেফতার করতে আর বাধা রইল না পুলিশের।
বিচারপতি নিশীথা মাত্রে এবং বিচারপতি কাঞ্চন চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন জানিয়েছে, নিগৃহীতা ছাত্রীর অভিযোগ নিয়ে পুলিশের আরও বিশদ ভাবে তদন্ত চালানো দরকার। তাই অভিযুক্ত দুই ছাত্রকে আগাম জামিন দেওয়া যাবে না।
২৯ জুলাই বিকেলে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন গেটের সামনে থেকে এমএ পরীক্ষার্থী ওই ছাত্রীকে চ্যাংদোলা করে তুলে নিয়ে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ঘরে তিন ঘণ্টা আটকে রেখে মারধর ও শ্লীলতাহানি করা হয় বলে অভিযোগ। ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক ছাত্রী এবং ছয় ছাত্রের বিরুদ্ধে সে-রাতেই মারধর, শ্লীলতাহানি এবং টাকা ও সোনার গয়না ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন নিগৃহীতা ছাত্রী।
পুলিশ জানায়, ওই ছাত্রী লিখিত ভাবে জানান, বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ পরীক্ষা দিয়ে মেসে ফেরার জন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের বাসস্টপে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিশ্বজিৎ দে ওরফে বাপ্পা এবং অন্য ছ’জন তাঁকে ঘিরে ধরেন। বিশ্বজিৎ তাঁর চুলের মুঠি ধরেন। অন্যেরা তাঁকে চ্যাংদোলা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে নিয়ে যান। লিখিত অভিযোগে ছাত্রীটি জানান, তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১৩ নম্বর ঘরে জোর করে ঢুকিয়ে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেন ওই ছাত্রেরা। অন্য এক ছাত্রীও ওই ঘরে ঢুকে পড়েন। তাঁরা তাঁর জামাকাপড় ধরে টানাহ্যাঁচড়া করতে থাকেন। তিনি প্রতিবাদ করায় বিশ্বজিৎ তাঁর গলা চেপে ধরেন। তাঁর মুখ চেপে ধরেন অন্য এক জন। তার পরে তাঁকে নাগাড়ে কিল, চড়, লাথি, ঘুষি মারা হয়। লোহার রড দিয়েও পেটানো হয় বলে অভিযোগ।
ঘটনার পাঁচ দিন পরে অভিযুক্ত তিন ছাত্র শ্রীজীব শীল, কানু মণ্ডল ও শঙ্খ তালুকদারকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু মূল অভিযুক্ত তথা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল পরিচালিত ছাত্র সংসদের নেতা বিশ্বজিৎ ও সিমিওনকে পুলিশ ধরেনি। অভিযোগ ওঠে, শাসক দলের ছাত্রনেতা বলেই বিশ্বজিৎদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। পুলিশ জানায়, ওই ঘটনায় মৌলী বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তন্ময় আদিত্য দাস নামে দুই ছাত্রছাত্রীর বিরুদ্ধেও এফআইআর করা হয়েছে। থানায় অভিযোগ করার পরেও তাঁকে ক্রমাগত শাসানো হতে থাকে বলে জানান লাঞ্ছিতা ছাত্রী। তিনি এতই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন যে, কয়েকটি পত্রের পরীক্ষা না-দিয়েই মেস ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরে যান।
ওই ছাত্রীর অভিযোগ পেয়ে পুলিশ তাঁকে শিয়ালদহ আদালতে নিয়ে গিয়েছিল। বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দি দিয়ে হামলার ঘটনার কথা জানান তিনি। ওই ছাত্রী এ দিনও দাবি করেন, ‘‘আমি সিঁথি থানার পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে যা জানিয়েছি, বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দি দিয়েও তা-ই বলেছি।”
|