প্রতিদিনের মতো বুধবার সকালে ১১টা নাগাদ এ জে সি বসু রোড ও ডি এল খান রোডের মোড়ে ডিউটি করছিলেন ভবানীপুর ট্রাফিক গার্ডের ওসি বিপ্লব সিংহ। সঙ্গে ডিসি ট্রাফিক (৩) কমল থাপা। তিন দিন ধরে নাগাড়ে বৃষ্টি হলেও ১১টা নাগাদ বৃষ্টিটা একটু ধরে এসেছিল। কর্তব্যরত ওই দুই পুলিশ অফিসারের কাছে ছাতা ছিল না। ভিজেই ডিউটি করছিলেন তাঁরা। এমন সময়ে তাঁদের সামনে এসে দাঁড়াল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গাড়ি।
কালীঘাট থেকে মহাকরণ যাওয়ার পথে মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি ওই পথ দিয়ে রোজই যায়। রোজই বিপ্লববাবু তৎপরতার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি ওই ক্রসিং পার করে দেন। হঠাৎ এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর গাড়ি থেমে গেল কেন?
বিপ্লববাবু দেখলেন, শুধু গাড়ি থেমে যাওয়াই নয়, গাড়ির সামনের সিট থেকে নেমে এলেন ‘ম্যাডাম’। বিপ্লববাবু জানান, হঠাৎ ম্যাডামকে নামতে দেখে তিনি হকচকিয়ে যান। বিপ্লববাবু বলেন, “ভাবলাম মুখ্যমন্ত্রী হয়তো কিছু নির্দেশ দেওয়ার জন্য দাঁড়ালেন। তাই সঙ্গে সঙ্গে ম্যাডামের নির্দেশ পালন করার জন্য অতিরিক্ত সতর্ক হয়ে যাই। কিন্তু দেখলাম ম্যাডামের হাতে রাখি।”
বিপ্লববাবু জানালেন, মুখ্যমন্ত্রী তাঁর নাম ধরে ডেকে বললেন, “হাত দেখি।” হাত বাড়াতেই মুখ্যমন্ত্রী তাঁর হাতে রাখি পরিয়ে দিলেন। বিপ্লববাবুর কথায়, “আমার হাতে রাখি পরিয়ে ম্যাডাম বললেন, ‘ভাল থাকবেন।’ এর পরে কমল থাপার হাতেও রাখি পরিয়ে ম্যাডাম গাড়িতে উঠে চলে গেলেন।” |
পুলিশকর্মীদের হাতে রাখি পরিয়ে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার, মহাকরণে। —নিজস্ব চিত্র |
মুখ্যমন্ত্রী হঠাৎ গাড়ি থেকে নেমে তাঁকে রাখি পরিয়ে দেবেন, সেটা বোধ হয় ভাবতেই পারেননি বিপ্লববাবু। তিনি বলেন, “আমি জানি প্রতি বছর রাখির দিন ম্যাডাম মহাকরণে অনেককে রাখি পরান। কিন্তু গাড়ি থেকে নেমে এ ভাবে আমাকে রাখি পরাবেন, ভাবতেই পারিনি। এতটাই অভিভূত হয়ে যাই যে, ওঁকে কিছু বলতেও পারিনি।”
মুগ্ধতার রেশ থেকে যাওয়ায় মুখ্যমন্ত্রীকে কিছু বলতে না পারলেও খুব যত্নের সঙ্গে সারাদিন রাখিটি হাতে বেঁধে রাখেন বিপ্লববাবু। ভবানীপুর ট্রাফিক গার্ডের সহকর্মীদেরও দেখান। বলেন, “এটা স্মৃতি করে রাখব।”
এ দিকে মহাকরণের বিভিন্ন দফতরের কর্মী, পুলিশ, নিরাপত্তারক্ষী, সাংবাদিকদেরও রাখি পরান মুখ্যমন্ত্রী। বেলা তখন প্রায় ১২টা। রাখি পরে মুখ্যমন্ত্রীকে প্রণাম করেন অনেকে। তিনি কারও মাথায় হাত রেখে বা থুতনিতে হাত দিয়ে আশীর্বাদ করলেন, কাউকে আবার পায়ে হাত দেওয়ার আগেই তাড়াতাড়ি উঠিয়ে প্রতি নমস্কারে হাতজোড় করলেন। স্যালুট নিলেন পুলিশকর্মীদের। রাখি পরাতে-পরাতেই ঘরে এক জনকে বললেন, “রাখি ফুরিয়ে যাচ্ছে কিন্তু, আরও কিনে আনতে হবে।” সন্ধ্যায় রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের হাতেও রাখি পরিয়ে আসেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিন বাগুইআটি থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে রাখি পরাতে এসেছিল চার বছরের ঐশানী বাগুই। ভিড়ের মধ্যে থেকে তাকে আলাদা ভাবে ডেকে নেন মুখ্যমন্ত্রী। তার রাখি পরে নিজেও ছোট্ট মেয়ের কব্জিতে রাখি বেঁধে দেন। সঙ্গে দেন ঝকমকে কাগজে মোড়া উপহার। |