কড়েয়া এলাকার বাসিন্দা আমিনুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনায় কড়েয়া থানার অভিযুক্ত পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, দু’সপ্তাহের মধ্যে তা জানানোর জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। আলাদা ভাবে হলফনামা দিতে হবে কলকাতা পুলিশকেও। আমিনুলের মৃত্যু নিয়ে সিবিআই তদন্তের আর্জি জানিয়ে যে-মামলা হয়েছে, বুধবার তারই শুনানিতে এই নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। চার সপ্তাহ পরে মামলাটির ফের শুনানি হবে।
২০১২ সালের অক্টোবরে কড়েয়ার বাসিন্দা শাহজাদা বক্সের বিরুদ্ধে এলাকার দুই নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। পুলিশ জানায়, নির্যাতিতাকে অভিযোগ দায়ের করতে সাহায্য করেছিলেন আমিনুল। তার পরে আমিনুলের বিরুদ্ধেই পাল্টা ডাকাতির মামলা দায়ের করে তাঁকে নানা ভাবে হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত গায়ে আগুন দিয়ে আত্মঘাতী হন আমিনুল। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, আমিনুলের আত্মহত্যার জন্য দায়ী পুলিশকর্মীদের আড়াল করছেন তদন্তকারীরা। তাই এই তদন্তের দায়িত্ব সিবিআইয়ের হাতে দেওয়ার আবেদন নিয়ে তাঁরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন।
বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন ওই দুই নাবালিকাকে হাইকোর্টে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। যে নাবালিকা আমিনুলের সাহায্যে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেছিল, বিচারপতি তার কাছে জানতে চান, সে অভিযুক্ত শাহজাদাকে চেনে কি না? তার বয়স কত, তা-ও জানতে চান তিনি। মেয়েটি বিচারপতিকে জানায়, তার বয়স ১৬। শাহজাদাকে একই পাড়ার ছেলে হিসেবে সে চেনে। শাহজাদা পুলিশের ‘সোর্স’ হিসেবে কাজ করত বলেও জানায় সে।
আর এক নাবালিকাকে অবশ্য কিছুই জিজ্ঞাসা করেননি বিচারপতি। মেয়েটি হাইকোর্টে এলেও এ দিন তার চোখেমুখে ছিল আতঙ্কের ছাপ। তা দেখে বিচারপতি বলেন, মেয়েটি মানসিক ভাবে ভীষণ বিপর্যস্ত। তাই তিনি তাকে কোনও প্রশ্ন করবেন না। তবে তিনি মেয়েটির বাবা ও মায়ের কাছে জানতে চান, তাঁরা কেন মেয়ের ডাক্তারি পরীক্ষা করাতে আপত্তি করেছেন? মেয়েটির বাবা তাঁকে বলেন, শাহজাদার বিরুদ্ধে তাঁদের কোনও অভিযোগ নেই। তাই তাঁরা মেয়ের ডাক্তারি পরীক্ষায় রাজি হননি।
দু’জনের সঙ্গে কথা বলার পরে আদালতেরও মনে হয়েছে, শাহজাদা পুলিশের ‘সোর্স’ হওয়ায় পুলিশের পক্ষে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত করা কতটা সম্ভব, তা খতিয়ে দেখা উচিত। অভিযুক্ত পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের ক্ষেত্রে সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা স্পষ্ট না-হওয়ায় বিচারপতি এ ব্যাপারে সরকারকে হলফনামা দিয়ে সব জানাতে বলেন।
আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী নৌশাদ খান অভিযোগ করেন, কলকাতা পুলিশ আমিনুলের বিরুদ্ধে ডাকাতির সাজানো মামলা এনে তদন্ত শুরু করেছিল। তাই কলকাতা পুলিশকে দিয়ে ঘটনার তদন্ত করানো হলে সত্য প্রকাশিত হবে না। রাজ্যের জিপি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সিবিআইয়ের হাতে এই রাজ্যেই এত মামলা রয়েছে যে, তারা বিব্রত। তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে রাজ্য পুলিশের কাছেই সহায়তা চায়। হাইকোর্ট কলকাতা পুলিশের উপরে নির্ভর করতে না-পারলে সিআইডি-কে এই তদন্তের দায়িত্ব দিতে পারে।
|