আমিনুল-কাণ্ডে নির্যাতিতা দুই কিশোরীর এক জনের মেডিক্যাল পরীক্ষা করানো হয়েছিল বলে শুক্রবার দাবি করল লালবাজার।
পুলিশ জানিয়েছে, ৩ নভেম্বর কড়েয়া থানায় ওই কিশোরী ও তার মায়ের করা অভিযোগে একটি ধর্ষণের মামলা হয়েছিল। সেটি এখন বিচারাধীন। চার্জশিট অনেক দিন আগেই দেওয়া হয়েছে। তারই সূত্রে মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষা হয়েছে বলে কলকাতা পুলিশের দাবি। “মেয়েটিকে ধর্ষণের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রুজু হওয়া মামলার বিচার চলছে। ধর্ষিতার মেডিক্যাল পরীক্ষা ছাড়া ধর্ষণের মামলার বিচার হতে পারে নাকি?”মন্তব্য লালবাজারের এক কর্তার।
ঘটনা হল, কড়েয়ার ওই দুই নাবালিকার কারও মেডিক্যাল পরীক্ষা না-হওয়ার কথা শুনেই বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্ট পুলিশকে ভর্ৎসনা করেছে, এবং কেন তা হয়নি, সে ব্যাপারে সিপি-র জবাবদিহি চেয়েছে। জবাবে সরকারি কৌঁসুলি বলেছিলেন, এক নাবালিকার মেডিক্যাল পরীক্ষা করাতে তার মা রাজি হননি। এর পরেই তাঁকে বিচারপতির ভর্ৎসনা শুনতে হয়। এ দিন লালবাজারের দাবির প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে, পুলিশ যদি এক জনের মেডিক্যাল পরীক্ষা করিয়েই থাকে, তবে তা বৃহস্পতিবার কোর্টে জানানো হল না কেন?
লালবাজারের এক কর্তার ব্যাখ্যা, “কোথাও ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। খতিয়ে দেখছি। সিপি হাইকোর্টকে কী জবাব দেবেন, সে সম্পর্কে আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।”
বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের নির্দেশ জানতে পেরে সিপি সুরজিৎ করপুরকায়স্থ গোয়েন্দা বিভাগকে ঘটনার রিপোর্ট দিতে বলেন। আদালত কেন পুলিশকে ভর্ৎসনা করল, সিপি তা-ও জানতে চান। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদে ৩ ডিসেম্বর কড়েয়া থানার সামনে গায়ে আগুন দিয়েছিলেন পাম অ্যাভিনিউয়ের বাসিন্দা মির আমিনুল ইসলাম। এক মাস চিকিৎসাধীন থাকার পরে সল্টলেকের বেসরকারি হাসপাতালে তিনি মারা যান। আত্মাহুতির আগে ‘সুইসাইড নোটে’ আমিনুল জানিয়েছিলেন, শাহজাদা বক্স নামে স্থানীয় এক ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তি দুই নাবালিকার উপরে যৌন নির্যাতন চালাচ্ছে এই মর্মে তিনি কড়েয়া থানায় নালিশ করা ইস্তক শাহজাদার সঙ্গে হাত মিলিয়ে পুলিশ তাঁকে হেনস্থা করছে। সুইসাইড নোটে আমিনুল এ-ও অভিযোগ করেছিলেন, ডাকাতির মিথ্যে মামলা সাজিয়ে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতারের হুমকি দিচ্ছে। আমিনুলের অপমৃত্যুর সময়ে সুরজিৎবাবু সিপি ছিলেন না। সিপি তখন রঞ্জিৎকুমার পচনন্দা, সুরজিৎবাবু ছিলেন রাজ্য পুলিশের অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল (আইন-শৃঙ্খলা) পদে। লালবাজার থেকে বলা হয়, আমিনুল-কাণ্ডের জেরে তিন পুলিশকর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল। মূল অভিযুক্ত শাহাজাদা বক্স এখন পুলিশি হেফাজতে।
|