দু’চাকার দৌরাত্ম্য
পচা ডিমের ‘মিসাইলে’ পাল্টা জবাব পুলিশকে
দ্দাম গতির দু’টি মোটরবাইকের পিছনে ধাওয়া করেছেন মোটরসাইকেল আরোহী দুই পুলিশকর্মী। কাছাকাছি আসতেই ওই পুলিশকর্মীদের দিকে উড়ে এল সাদা রঙের গোলাকার একটি বস্তু। পাশ কাটানোর আগেই এক জনের গায়ে লেগে ফেটে গেল সেটি। পুলিশের উর্দি মাখামাখি ঘোলাটে তরলে। দুর্গন্ধে নাক চেপে এক জন বললেন, “স্যার, ওরা পচা ডিম ছুড়ছে।” ওই কনস্টেবলের গায়েও এসে পড়ল আর একটি পচা ডিম।
বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটের ঘটনা। ঘটনাস্থল: জাজেস কোর্ট রোড ও আলিপুর রোডের মোড়। ডিমের ঘা খেয়ে সে যাত্রা রণে ভঙ্গ দিয়েছেন ওই পুলিশকর্মীরা। পুলিশের ওয়্যারলেসে তখন বারংবার দেওয়া হচ্ছে ওই দু’টি মোটরবাইককে ধরার নির্দেশ।
শুধু জাজেস কোর্ট রোডই নয়, এর কিছু আগেই ওই দু’টি মোটরবাইকের ছয় আরোহীর পচা ডিমের ‘মিসাইল’ আছড়ে পড়ে তিলজলার মুখে দাঁড়িয়ে থাকা একটি পুলিশ ভ্যানে। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে কোথাও ওয়্যারলেস গাড়ি লক্ষ করে, কোথাও টহলরত বাইক-আরোহী পুলিশকে তাক করে, আবার কোথাও পুলিশ পিকেটের মধ্যেই পচা ডিম ছুড়ে চম্পট দিয়েছে ওই ছয় যুবক। কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা একটি বাইকের নম্বর টুকে রেখেছেন। কিন্তু শুক্রবার রাত পর্যন্ত ওই যুবকদের ধরা যায়নি।
অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য
রাতের শহরে বাইক-দৌরাত্ম্য রুখতে পুলিশ যখন উঠেপড়ে লেগেছে, তখন শহরের গুরুত্বপূর্ণ চারটি মোড়ে পুলিশকে লক্ষ করে পচা ডিম ছুড়ে ওই ছয় যুবক যে ভাবে দাপিয়ে বেড়াল, তাতে উদ্বিগ্ন লালবাজারের কর্তারা। যদিও এই ঘটনার কথা প্রকাশ্যে বলতে চাননি লালবাজারের বড় কর্তাদের অনেকেই। পুলিশের এক কর্তার দাবি, “এ ধরনের কোনও ঘটনা ঘটেছে বলে জানা নেই।” তবে আড়ালে পুলিশের এক পদস্থ অফিসার বলেন, “পচা ডিম ছুড়ে যে ভাবে পুলিশের নাকে ঝামা ঘষে পালিয়েছে ওই ছয় যুবক, তা আর বড় মুখ করে বলার কী আছে!” নিচুতলার পুলিশকর্মীদের আশঙ্কা, এ বার না হয় পচা ডিম ছোড়া হল, আগামী দিনে দুষ্কৃতীরা যে অন্য কিছু ছুড়বে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়?
কী হয়েছিল বৃহস্পতিবার রাতে? পুলিশ সূত্রের খবর, রাত ২টো নাগাদ তিলজলার মুখে দাঁড়িয়েছিল পুলিশের একটি গাড়ি। সায়েন্স সিটির দিক থেকে চার নম্বর সেতুমুখী দু’টি মোটরবাইকে ছয় যুবক প্রচণ্ড গতিতে এসে ওই গাড়ি লক্ষ করে পচা ডিম ছুড়ে চম্পট দেয়। সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় লালবাজার কন্ট্রোল রুমে। জানানো হয়, একটি বাইকের রং লাল। কন্ট্রোল রুমের অফিসারেরা ওয়্যারলেস গাড়িতে নির্দেশ পাঠান বাইক দু’টির পিছু নিতে। কিছুটা ধাওয়া করার পরে ওয়্যারলেস গার্ডের কর্মীরা কন্ট্রোল রুমে জানান, মোটরসাইকেল দু’টি এ জে সি বসু রোড উড়ালপুলে উঠেছে। কন্ট্রোল রুম থেকে বলা হয়, মোটরবাইক দু’টির আর পিছু নিতে হবে না। কারণ, শহরের সব ক’টি পুলিশ ডিভিশনের কন্ট্রোল রুমে মোটরসাইকেল দু’টির নম্বর জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পরের ঘটনা জাজেস কোর্ট রোড এবং আলিপুর রোডের সংযোগস্থলে। আলিপুর থানার এক এএসআই এবং এক কনস্টেবল মোটরসাইকেলে চেপে এলাকায় টহল দিচ্ছিলেন। পাশ দিয়ে জোরে দু’টি মোটরসাইকেল বেরিয়ে যেতেই তাঁরা ধাওয়া করেন। আলিপুরের লালবাতি এলাকায় একটি মোটরবাইকের পাশাপাশি গাড়ি নিয়ে এগোতে থাকেন তাঁরা। পুলিশ সূত্রে খবর, পুলিশকর্মীদের লক্ষ করে একাধিক ডিম ছুড়ে হাজরার দিকে চম্পট দেয় ওই যুবকেরা। লালবাজার সূত্রের খবর, এর পরে কালীঘাট থানা এলাকায় একটি পুলিশ পিকেট ও গড়িয়াহাট মোড়ে টহলরত পুলিশদের তাক করে ডিম ছোড়া হয়।
এ ভাবে দাপিয়ে বেড়ানোর পরেও কেন ধরা গেল না দুষ্কৃতীদের? পুলিশের একাংশের বক্তব্য, ওই ঘটনার পরে একটি জেনারেল ডায়েরি করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু পুলিশের অনেকে তাতে রাজি হননি। তাঁদের যুক্তি, এই ঘটনাটি সামনে এলে পুলিশের অপদার্থতা প্রকাশ্যে এসে পড়বে। এই বিতর্কে পড়ে শেষে আর জেনারেল ডায়েরি করা হয়নি।
আপাতত তাই কিল খেয়েও কিল হজম করার নীতিই নিয়েছে পুলিশ।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.