শহরে দারিদ্রসীমার নীচে (বিপিএল) থাকতে হলে একটি পরিবারের দৈনিক রোজগার হতে হবে ২৮ টাকা ৩৫ পয়সা। ওই পরিবারের কারও গরম জামাকাপড় থাকলে চলবে না। কেন্দ্রীয় সরকারের এই ফতোয়ায় কলকাতা পুর-এলাকায় বিপিএল তালিকা তৈরির কাজই বন্ধ হয়ে গিয়েছে! কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন নিয়মের জন্যই কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছি।”
বাম আমলে কলকাতা পুর-এলাকায় ১ লক্ষ ৮৪ হাজার বিপিএল পরিবারের তালিকা তৈরি করা হয়েছিল। এর মধ্যে ১ লক্ষ ১৫ হাজার পরিবারকে চিহ্নিত করতে পেরেছেন বর্তমান পুর-কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বাকি ৬৯ হাজার বিপিএল পরিবারের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। মেয়রের কথায়, “আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পরে যে তালিকা হাতে পাই, তাদের বিমার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার বিপিএল পরিবারের তালিকা তৈরি করার জন্য দৈনিক উপার্জন-সহ অন্যান্য যে সব শর্ত বেঁধে দিয়েছে, তাতে নতুন করে শহরের আর কোনও পরিবারকেই বিপিএল-এর আওতায় আনা যাচ্ছে না। তাই কাজ বন্ধ করে দিতে হয়েছে।” মেয়র অবশ্য জানান, বামফ্রন্ট জমানায় তৈরি বিপিএল তালিকা বাতিল করা হচ্ছে না।
কেন্দ্রের নতুন নিয়মে কী বলা হয়েছে?
কলকাতা পুরসভার এক মুখপাত্র জানান, “দারিদ্রসীমার নীচের মানুষকে চিহ্নিত করার জন্য মোট ১৩টি মাপকাঠি তৈরি করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে: ভারতে শহরাঞ্চলে যে সব পরিবারের দৈনিক রোজগার ২৮.৩৫ টাকা, গ্রামাঞ্চলে ২২.৪২ টাকা, যাঁদের মাথার উপরে ছাদ নেই, গরম জামাকাপড় নেই, শিক্ষা নেই, ঘরে পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই (এই রকম মোট ১৩টি) এক মাত্র তাঁরাই নথিভুক্ত হতে পারেন দারিদ্রসীমার নীচে থাকা পরিবারের তালিকায়। যদিও রাষ্ট্রসঙ্ঘের হিসেব অনুযায়ী, বিশ্বে হতদরিদ্র সীমার নীচে থাকা পরিবারের আয় দেখানো হয়েছে ১.২৫ ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৭৬ টাকা)। ওই মুখপাত্র জানান, তেন্ডুলকর কমিটির সুপারিশ মেনেই কেন্দ্র ওই নিয়ম তৈরি করেছে। এবং এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা হয়েছে।
রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “বিপিএল পরিবারের সঠিক তালিকা জানার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার সব রাজ্যকেই নির্দেশিকা পাঠিয়েছিল। আগের সরকার পুর-এলাকাগুলিতে এই নিয়ে কোনও কাজ করেনি। বর্তমান পুরসভাকে দিয়ে আমরা একটি ‘পাইলট’ প্রকল্প করতে চেয়েছিলাম। গত বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ওই কাজ সম্পূর্ণ করার কথা ছিল। কিন্তু তা করা যায়নি।”
পুর দফতর জানিয়েছে, শহরে বিপিএল তালিকা অসম্পূর্ণ হওয়ায় বিধবা ভাতা, বার্ধক্য ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতার মতো আরও কয়েকটি ক্ষেত্রে গরিব মানুষের কাছে ঠিকমতো সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে না।
|