ফের হামলার আশঙ্কায় এমএ-র ষষ্ঠ পত্রের পরীক্ষা না-দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মেস ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রভারতীর নিগৃহীতা ছাত্রীটি। কিন্তু তাতেও তাঁর পিছু ছাড়ছে না হামলাকারীরা। ছাত্রীটির অভিযোগ, পুলিশ অভিযুক্ত সাত হামলাকারীর কাউকে এখনও গ্রেফতার না-করায় ওরা তাঁকে ফোনে হুমকি দিচ্ছে। রাজ্য মানবাধিকার কমিশনেও শুক্রবার এই মর্মে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই ছাত্রী।
নিগৃহীতার সহপাঠীদের অনেকেই এ দিন অভিযোগ করেন, ছাত্রীটিকে বাসস্টপ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ঘরে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় মূল অভিযুক্ত এবং তাঁর কয়েক জন সঙ্গীকে এ দিন রবীন্দ্রভারতীর বরাহনগর ক্যাম্পাসেই দেখা গিয়েছে। ছাত্রীটি তখন তাঁর বয়ান জমা দিচ্ছেন কমিশনে। |
মোজ কমিশনে ছাত্রী। —নিজস্ব চিত্র |
এ দিন বেলা ১টা নাগাদ এক সহপাঠীকে সঙ্গে নিয়ে ওই ছাত্রী কমিশনে গিয়ে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা এবং নিরাপত্তার অভাবের কথা জানান। কমিশনের রেজিস্ট্রার রবীন্দ্রনাথ সামন্তের কাছে অভিযোগ জমা দেন। কমিশনের চেয়ারম্যানের সঙ্গেও দেখা করেন। যাঁরা তাঁকে শারীরিক ভাবে নিগৃহীত করেছে, তাঁরা এখনও হুমকি দিচ্ছেন বলে কমিশনে লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। ছাত্রীটি বলেন, হুমকির ফলে বৃহস্পতিবার তিনি পরীক্ষা দিতে পারেননি। আগামী সোমবারেও তাঁর পরীক্ষা আছে। সে-দিন তিনি যাতে পরীক্ষা দিতে পারেন, সেই ব্যাপারে কমিশনের সাহায্য চেয়েছেন ছাত্রীটি।
২৯ জুলাই রাতে ছাত্রীটি সিঁথি থানায় অভিযোগ দায়ের করা সত্ত্বেও কেন পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি, ডেপুটি কমিশনার পদমর্যাদার কোনও অফিসারকে দিয়ে তার তদন্ত করানোর জন্য কমিশন নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ কমিশনারকে। কমিশনের চেয়ারম্যান, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায় সিপি-কে দু’সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তার পরেও অভিযুক্তদের গ্রেফতার করার ব্যাপারে পুলিশের কোনও হেলদোল দেখা যায়নি।
ছাত্রী-নিগ্রহে মূল অভিযুক্ত বিশ্বজিৎ দে ওরফে বাপ্পা নামে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এক নেতা। অভিযুক্ত অন্য ছ’জনও ওই ছাত্র সংগঠনের সদস্য এবং বাপ্পার সঙ্গী। হামলার পাঁচ দিন পরেও তাঁদের গ্রেফতার করা হয়নি কেন? যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “বিষয়টি দেখা হচ্ছে।” ডিসি (নর্থ) গৌরব শর্মা সাফ বলে দেন, “তদন্ত শেষ না-হওয়া পর্যন্ত এই ব্যাপারে কিছু বলব না।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ছাত্রীটিকে নিরাপত্তা দেওয়া হবে বলে রবীন্দ্রভারতীর উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু অভিযুক্তেরা ধরা না-পড়লে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য তিনি কী ভাবে বাইরে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকবেন, ছাত্রীটি তা বুঝতে পারছেন না। তার উপরে পুলিশ তাঁকে নতুন করে অভিযোগ জানাতে বলছে। এতে ছাত্রীটি বিভ্রান্ত। এ দিন তিনি বলেন, “তদন্তকারী অফিসার বাবাকে বলেছেন, আমাকে যে অপহরণ করা হয়েছিল এবং প্রাণে মারার চেষ্টা হয়েছিল, মার খেয়ে আমার ডান চোখটা যে নষ্ট হতে বসেছে, তা ফের লিখে দিতে হবে।” ছাত্রীটির প্রশ্ন, ঘটনার দিনই তো সব জানানো হয়েছে। তার পরেও আবার অভিযোগ জানাতে হবে কেন?
|