পরীক্ষা দেওয়া হল না রবীন্দ্রভারতীতে
ফের হামলার আশঙ্কায় মেস ছাড়লেন ছাত্রী
যাঁরা তাঁর উপরে হামলা করেছেন বলে অভিযোগ, শাস্তি তো দূরের কথা, তাঁদের এখনও ধরতেই পারল না পুলিশ! উল্টে মালপত্র নিয়ে মেস ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হল রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিগৃহীতা ছাত্রীকেই। নিরাপত্তার অভাবে পরীক্ষা চলাকালীনই তিনি মেস ছাড়তে বাধ্য হলেন বলে বৃহস্পতিবার অভিযোগ করেছেন এমএ ক্লাসের ওই ছাত্রী। এ দিন তাঁর পরীক্ষাও দেওয়া হয়নি।
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছনে হেম দে লেনের একটি মেসে থাকতেন ওই ছাত্রী। এ দিন বিকেলে তিনি যখন বইপত্র ও মালপত্র নিয়ে মেস ছাড়েন, তখন সাদা পোশাকের দুই পুলিশকর্মী সেখানে দাঁড়িয়ে। ছিলেন উর্দি পরা এক পুলিশকর্মীও। কিন্তু তাঁদের কেউই ছাত্রীটিকে নিরাপত্তার আশ্বাস দিতে পারেননি। বাকি পরীক্ষা দিতে পারবেন কি না, সেই অনিশ্চয়তা নিয়েই কলকাতা ছেড়ে বাবার সঙ্গে হাসনাবাদে গ্রামের বাড়িতে ফিরে গেলেন ওই ছাত্রী।
মেস ছাড়ছেন কেন?
ছাত্রীটি বলেন, “মেস না-বদলালে ওরা ফের আমার উপরে হামলা করবে।” মারধরের ঘটনার চার দিন পরে অভিযুক্ত সাত জনের মধ্যে এক জনকেও পুলিশ গ্রেফতার না-করায় ছাত্রীটির বাবাও বিস্মিত। তিনি বলেন, “মেয়েকে তো এখানে রেখেই পড়াচ্ছিলাম। আর ভরসা পাচ্ছি না।”
মেস ছাড়ার আগে গোছগাছ। বৃহস্পতিবার বিশ্বনাথ বণিকের তোলা ছবি।
মেয়েকে নিয়ে এ দিন রবীন্দ্রভারতীর উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন নিগৃহীতা ছাত্রীর বাবা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার মুখে পুলিশ তাঁদের আটকে দেয়। ছাত্রীর বাবার অভিযোগ, সিঁথি থানার তদন্তকারী অফিসার ঘটনাস্থলে ছিলেন। তিনি সব জানেন। তবু মেয়েকে নিয়ে গেটের মুখে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হয় তাঁদের। যাঁদের বিরুদ্ধে তাঁর মেয়ে থানায় অভিযোগ করেছেন, তাঁদের সঙ্গীরা এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই অবস্থায় তাঁর মেয়ে আরও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন বলে বিব্রত বাবার অভিযোগ।
মেয়েটির আইনজীবী বাবা বলেন, “দেখলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে ভর্তি পুলিশ। কিন্তু সোমবার যখন আমার মেয়ের উপরে অত্যাচার চলছিল, তখন পুলিশকর্মীরা কোথায় ছিলেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের রক্ষীরা কোথায় ছিলেন?” পুলিশের এই ভূমিকায় ওই আইনজীবী অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, “মেয়ে অভিযোগ করা সত্ত্বেও পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অপহরণ ও খুনের চেষ্টার ধারা দেয়নি। আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব।”
ছাত্রীটিকে সোমবার বাসস্টপ থেকে তুলে বিশ্ববিদ্যালয়েরই একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে মারধর ও শ্লীলতাহানি করা হয় বলে অভিযোগ। সাত জনের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ আছে। মূল অভিযোগ বিশ্বজিৎ দে ওরফে বাপ্পা নামে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের এক নেতার বিরুদ্ধে। ঘটনার চার দিন পরেও বিশ্বজিৎদের কাউকেই পুলিশ গ্রেফতার করতে পারল না কেন? কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (উত্তর) গৌরব শর্মা বলেন, “তদন্ত এখনও শেষ হয়নি।”
তদন্ত শেষ না-হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্তেরা কি অধরা থেকে যাবে?
ডিসি বলেন, “ওই ঘটনায় আমরা অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করছি। জিজ্ঞাসাবাদ আগে শেষ হোক!”
এক ছাত্রী শ্লীলতাহানির অভিযোগ করলেন। তার পরেও পুলিশ এত সময় নিচ্ছে কেন? অভিযুক্তেরা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্য বলেই কি পুলিশ এমন টালবাহানা করছে?
ডিসি আর কিছু বলতে চাননি।
নিগৃহীতা ছাত্রীটি যে এ দিন মেস ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন, ডিসি কি সেই খবর রাখেন?
ওই পুলিশকর্তা বলেন, “আমাকে কেউ এ বিষয়টি জানায়নি।” সিঁথি থানার এক অফিসারের দাবি, ছাত্রীটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই পুলিশ এ দিন তাঁকে পাহারা দিয়ে উপাচার্যের কাছে নিয়ে যায়। ছাত্রীটি যখন মেস ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন, পুলিশকর্মীরা তাঁকে নিরাপত্তার আশ্বাস দিতে পারলেন না কেন? সিঁথি থানার ওই অফিসার বলেন, “মেয়েটির বাবাই তো তাঁকে নিয়ে চলে গিয়েছেন। আমাদের কিছু করার ছিল না।”
এ দিন ওই ছাত্রীর এমএ ষষ্ঠ পত্রের পরীক্ষা ছিল। কিন্তু শারীরিক আঘাত ও বিপর্যস্ত মানসিক অবস্থার জন্য তিনি পরীক্ষা দিতে পারেননি। বাবাকে নিয়ে তিনি উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করেন। ছাত্রীটি বলেন, “বাকি পরীক্ষাগুলি আমি যাতে ঠিক ভাবে দিতে পারি, উপাচার্যকে সেই ব্যবস্থা করে দিতে বলেছি। এ দিন যে-পরীক্ষা দিতে পারলাম না, সেটি যাতে চলতি বছরের যে-কোনও সময়ে দিতে পারি, সেই বন্দোবস্ত করার অনুরোধও জানিয়েছি। উপাচার্য সব রকমের সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছেন।”
উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে ওই ছাত্রী মেসে গিয়ে জিনিসপত্র নিয়ে বাবার সঙ্গে হাসনাবাদ চলে যান। বাড়ি চলে গেলে বাকি পরীক্ষাগুলো দেবেন কী ভাবে? ছাত্রীটি বলেন, “কলকাতায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে পরীক্ষা দেব। এ বার আমার ফাইনাল ইয়ার। পরীক্ষা দিতে না-পারলে একটা বছর নষ্ট হয়ে যাবে।” উপাচার্য সব্যসাচী বসুরায়চৌধুরী বলেন, “ছাত্রীটি যাতে পরের পরীক্ষাগুলি ঠিকমতো দিতে পারে, সেই দায়িত্ব আমাদের। সেটা আমি ওকে আর ওর বাবাকে বলেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে নিরাপত্তার কোনও অভাব হবে না বলে আমি কথা দিয়েছি। বলেছি, পুলিশ থাকবে। তোমার কোনও ভয় নেই।”
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে নিরাপত্তার ব্যাপারে তাঁর যে কিছু করার নেই, তা জানিয়ে দিয়েছেন উপাচার্য। তিনি বলেন, “ছাত্রীটি এ দিনের পরীক্ষা দিতে পারেনি। আমি ওকে আবেদন করতে বলেছি। আবেদন করুক। তার পরে দেখব।”

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.