নিউ টাউনে দমকল কেন্দ্রের শিলান্যাস করার পরে দমকলমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেখানে দমকলের একটি অ্যাকাডেমিও তৈরি হবে। সেই অ্যাকাডেমিতে থাকবে আগুনের মোকাবিলা করার জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি। প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য থাকবেন অভিজ্ঞ দমকল অফিসারেরা। দমকলমন্ত্রী সেই সঙ্গে এ-ও জানিয়েছিলেন, শিলান্যাসের দিন কয়েকের মধ্যেই দমকল কেন্দ্রের কাজ শুরু হবে।
কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। শিলান্যাসের পরে কেটে গিয়েছে প্রায় ছ’মাস। ফলকের আশপাশে গজিয়ে উঠেছে বড় বড় আগাছা। কিন্তু নিউ টাউনের দমকল কেন্দ্র ও অ্যাকাডেমির কাজ একটুও এগোয়নি। নিউ টাউনের অ্যাকশন এরিয়া ওয়ান থেকে অ্যাকশন এরিয়া থ্রি পর্যন্ত অংশে হু হু করে তৈরি হচ্ছে বহুতল। নানা ধরনের অফিসে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ কাজে আসছেন। দমকল কেন্দ্রটির শিলান্যাসের সময়ে দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান বলেছিলেন, “নিউ টাউনের মতো আধুনিক উপনগরীতে আধুনিক মানের দমকল কেন্দ্র ও দমকল অ্যাকাডেমি তৈরি হওয়া জরুরি।” ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু-সহ সল্টলেক ও নিউ টাউন এলাকার বিধায়কেরাও। নেতা-মন্ত্রীরা প্রত্যেকেই নিউ টাউনের মতো বিশাল এলাকায় নতুন দমকল কেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করে নিয়েছিলেন। নিউ টাউনে যেহেতু বহুতলের সংখ্যা অনেক, তাই সেই সব বহুতলে আগুন লাগলে কী ভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে তার প্রশিক্ষণও ওই অ্যাকাডেমিতে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন দমকলের আধিকারিকেরা।
কিন্তু গত ছ’মাসে কোনও কাজ না এগোনোয় ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। বর্তমানে নিউ টাউনে কোনও অগ্নিকাণ্ড ঘটলে দমকলের গাড়ি যায় সল্টলেক থেকে। অভিযোগ, সল্টলেকের সেক্টর ফাইভের ওই দমকল কেন্দ্রে যত সংখ্যক গাড়ি রয়েছে, তা দিয়ে সল্টলেকে কোনও বড়সড় অগ্নিকাণ্ড ঘটলে তা সামাল দিতেই হিমশিম খাওয়ার অবস্থা হয়। কাজেই নিউ টাউনের মতো বিশাল উপনগরীতে অগ্নিকাণ্ড হলে তা সল্টলেকের দমকল কেন্দ্র দিয়ে সামাল দেওয়া কার্যতই অসম্ভব বলে মনে করছেন নিউ টাউনের বাসিন্দারা। নিউ টাউন থানার কাছে একটি আবাসনের বাসিন্দা রূপক চক্রবর্তী বলেন, “আমি আবাসনের ১২ তলায় থাকি। আমাদের আবাসনগুলিতে লোকসংখ্যা কম। এখনও আবাসনের ভিতরে আগুন নেভানোর পরিকাঠামো তৈরির কাজ শেষ হয়নি। আগুন লাগলে সল্টলেক থেকে এখানে দমকলের গাড়ি আসা খুবই সমস্যার। কারণ নতুন জায়গায় অনেকে ভাল করে ঠিকানাই জানেন না। নিউ টাউনে একটা দমকল কেন্দ্র থাকা খুব জরুরি।” অ্যাকশন এরিয়া টু-র একটি শপিং মলের পাশের একটি আবাসনের বাসিন্দা অভিরূপ বিশ্বাস বলেন, “গত কয়েক মাসে এই এলাকায় গাড়ি বেড়েছে। অনেক নতুন বাজারহাটও তৈরি হচ্ছে। গত এক বছরের তুলনায় এখন পরিষেবার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কিন্তু তবুও এখানে দমকল কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে না কেন? শুধু শিলান্যাস হয়েই পড়ে রয়েছে কেন?”
নিউ টাউন থানার সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু নিউ টাউনই নয়, তার আশপাশের যে গ্রামগুলি রয়েছে সেখানেও আগুন লাগলে ভরসা সেই সল্টলেকের দমকল কেন্দ্রের গাড়ি। অত দূর থেকে ওই সব গ্রামের ভিতরে দমকলের গাড়ি যেতে অনেক সময়ও লেগে যায়। কিন্তু শিলান্যাসের ছ’মাস পরেও কাজ এগোল না কেন, সে প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান সেই একই আশ্বাস দিয়ে ফের বলেন, “১০-১৫ দিনের মধ্যেই দমকল কেন্দ্র তৈরির কাজ শুরু হবে। রাজারহাটে ফায়ার অ্যাকাডেমি তৈরির কাজও দ্রুত শুরু হবে।”
|