সস্তায় পেঁয়াজ বেচছে সরকার, চাহিদা মিটবে কতটা
কাশছোঁয়া দামে রাশ টানতে কলকাতার ন’টি বাজারে সস্তায় পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করল রাজ্য সরকার। পাশাপাশি কর্নাটক থেকে পেঁয়াজ আনার লক্ষ্যে কৃষি বিপণন দফতর ওই রাজ্যে প্রতিনিধিদল পাঠানোর তোড়জোড় করছে। যদিও দুই উদ্যোগের কার্যকারিতা ঘিরে ইতিমধ্যে প্রশ্নও মাথা চাড়া দিয়েছে প্রশাসনের কিছু মহলে।
সরকার ঘোষণা করেছে, আগামী দশ দিন কলকাতার বাজারে বাজারে ৩৬ টাকা কিলো দরে পেঁয়াজ বেচবে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যানপালন দফতর। দৈনিক ১০-১২ কুইন্টাল পেঁয়াজ বিক্রি করা হবে। আর এর মধ্যে কর্নাটকের চালান এসে গেলে পেঁয়াজের দাম মধ্যবিত্তের নাগালে রাখা যাবে বলে দাবি করছেন সরকারি কর্তারা। এ দিকে যে ভাবে সারা দেশে পেঁয়াজের দাম হু হু করে চড়ছে, সেখানে কর্নাটক থেকে পেঁয়াজ আদৌ সস্তায় আনা যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান সরকারি কর্তাদেরই একাংশ। উপরন্তু কলকাতার বাজারে পেঁয়াজের দৈনিক চাহিদা গড়ে প্রায় তিনশো কুইন্টাল। “দশ-বারো কুইন্টালে তার কতটুকু মিটবে?” প্রশ্ন উঠছে প্রশাসনের অন্দরে।
তবে সরকারের অপর অংশ আশাবাদী। খাদ্য-প্রক্রিয়াকরণ ও উদ্যানপালনমন্ত্রী সুব্রত সাহা বুধবার বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আদার মতোই সরাসরি কৃষকদের থেকে পেঁয়াজ সংগ্রহ করে ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। এ দিন তা শুরু হয়েছে।”
চড়া দাম। মিলছে না ক্রেতা। বুধবার শিয়ালদহ বাজারে। ছবি:সুদীপ আচার্য
সরকারি সূত্রের খবর: আজ, বৃহস্পতিবার থেকে শ্যামবাজার, হাতিবাগান, মানিকতলা, গড়িয়াহাট, লেক মার্কেট, ল্যান্সডাউন, কালীঘাট, চেতলা ও সল্টলেকের করুণাময়ীতে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের ভ্রাম্যমান গাড়ি সস্তায় পেঁয়াজ বেচবে। রাজ্য উদ্যানপালন-অধিকর্তা পীযুষ প্রামাণিক বলছেন, “সরকারি হস্তক্ষেপে পেঁয়াজের দাম অক্টোবর পর্যন্ত মধ্যবিত্তের আয়ত্তে রাখতে পারলেই এ বছরের মতো পরিস্থিতি সামলানো যাবে।” কেন?
পীযূষবাবুর যুক্তি, এ বার আটশো হেক্টর জমিতে বর্ষাকালীন চাষের ২৫-৩০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ পুজোর পরে এসে যাবে। “তখন বাজার অনেকটা স্থিতাবস্থায় চলে আসবে।” দাবি তাঁর। কিন্তু এখন এমন অস্বাভাবিক অবস্থার কারণ কী?
উদ্যানপালন-সূত্রের ব্যাখ্যা: পশ্চিমবঙ্গে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ৩ লক্ষ ৬০ হাজার মেট্রিক টন। রবি মরসুমে ফলন হয় ৩ লক্ষ মেট্রিক টনের মতো। মার্চ-এপ্রিলে ওঠা পেঁয়াজ বাজারে থাকে অগস্ট পর্যন্ত। অগস্টের মাঝামাঝি নাসিকের পেঁয়াজ ঢুকে যায়। তার পরে সেটাই ভরসা। এ বার নাসিকে খরা-বন্যায় উৎপাদন মার খেয়েছে। নাসিকের পেঁয়াজ মান্ডিতেই কিলোপিছু কেনা দর পড়ছে ৪০ টাকা। তা কলকাতায় আনার পরে এমনিতেই বাড়তি দাম জুড়ছে। ফড়েদের কারসাজিতে বাড়ছে আরও কয়েক ধাপ। আবার এর পিছনে বৈদেশিক বাণিজ্যেরও ভূমিকা দেখছেন ব্যবসায়ীদের অনেকে। এই মহলের মতে, ফলন মার খেলেও রফতানি কমেনি।

দরের আঁচ*
পাইকারি দাম
কোলে বাজার পোস্তা বাজার
৫০-৫৫ ৫৫
খুচরো দাম
লেক মার্কেট
গড়িয়াহাট বাজার
কলেজ স্ট্রিট বাজার
শোভাবাজার
মানিকতলা বাজার
সল্টলেক এফডি বাজার
* (প্রতি কেজি/টাকায়)

পরিণামে বাজারে জোগানে ঘাটতি দেখা দিয়েছে, যা দর ঠেলে তুলে দিয়েছে আকাশে। “এমনিতেই পোস্তায় ট্রাক কম ঢুকছে। যা আসছে, তারও বেশিটা বাংলাদেশে রফতানি হচ্ছে। এ ভাবে চললে দাম আরও বাড়বে।” বলেন পোস্তাবাজার ওনিয়ন মার্কেট অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি বিক্রম যাদব।
ব্যবসায়ী মহলের আনাচে-কানাচে একই আশঙ্কার প্রতিধ্বনি। পেঁয়াজের পাইকারি ব্যবসায় জড়িত গুরুপদ সিংহের কথায়, “কাগজে-টিভি’তে বলা হচ্ছে, দাম আরও বাড়বে। ফলে খুচরো বিক্রেতারা মজুত করতে শুরু করেছে। তাই দামও দৌড়চ্ছে।” বুধবার কলকাতায় ভাল জাতের পেঁয়াজের পাইকারি দাম ছিল প্রতি ৪০ কিলোগ্রাম ২৩০০ টাকা। অর্থাৎ, কিলোপিছু ৫৭ টাকার কিছু বেশি। অথচ খুচরো বিকোচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়!
এ হেন অগ্নিমূল্যের বাজারে সস্তার ‘সরকারি’ পেঁয়াজের দেখা পাওয়াই মুশকিল হয়ে উঠেছে অধিকাংশ ক্রেতার কাছে। উদ্যানপালন-কর্তারা জানিয়েছেন, এ দিন কলকাতার ন’টি বাজারে আট কুইন্টাল পেঁয়াজ উবে গিয়েছে স্রেফ পৌনে এক ঘণ্টায়।
মহাকরণ সূত্রের খবর: ভাঙড়ের কিছু চাষি সরকারকে এই পেঁয়াজ সরবরাহ করছেন। কিন্তু টানা দশ দিন ধরে মোট যে শ’দেড়েক কুইন্টাল পেঁয়াজ সস্তায় বিক্রির পরিকল্পনা, তার পুরোটা ওঁরা জোগাতে পারবেন কি না, তা নিয়েও কর্তাদের অনেকে ধন্ধে।
পেঁয়াজ-বাজারে আপাতত মধ্যবিত্তের হাতে ছ্যাঁকা লাগলেও মন্ত্রী সুব্রতবাবু অবশ্য আগামী বছরগুলোর জন্য আশার বাণী শুনিয়ে রাখছেন। তাঁর আশ্বাস, “দু’-তিন বছরের মধ্যে ঘাটতির দুই তৃতীয়াংশ পূরণ করা সম্ভব হবে। তখন আর বাইরের রাজ্যের ভরসায় থাকতে হবে না। দামও নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।”

পেঁয়াজ-অস্ত্রে আক্রমণ ডেরেকের
ভারতীয় অর্থনীতির হাল বোঝাতে পেঁয়াজের দামকে হাতিয়ার করেই আজ রাজ্যসভায় ইউপিএ সরকারকে ঝাঁঝালো আক্রমণ শানালেন তৃণমূলের মুখ্য সচেতক ডেরেক ও’ব্রায়েন। লাগাতার মূল্যবৃদ্ধি এবং টাকার দাম তলানিতে ঠেকার পরে দেশের অর্থনীতি নিয়ে উদ্বিগ্ন সব পক্ষই। এই পরিস্থিতিতে এ দিন কেন্দ্রীয় নীতির সমালোচনায় সরব হল বিজেপি-সহ সমস্ত বিরোধী দল। পেঁয়াজের দামকে হাতিয়ার করে ডেরেক দাবি করেন, “পেঁয়াজের দাম যে সরকার ফেলতে পারে, তা বিলক্ষণ জানে কংগ্রেস। ১৯৯৮ সালে পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে কংগ্রেস দিল্লি, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে ক্ষমতায় এসেছিল। ওই পেঁয়াজই বিধানসভা এবং লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসকে বিরোধী বেঞ্চে পাঠাবে।” ডেরেকের দাবি, কী কারণে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে সেটা বুঝতেই ব্যর্থ হয়েছে কেন্দ্র। অথচ এই ধরনের মূল্যবৃদ্ধি যে হতে পারে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার সেটা আগাম আশঙ্কা করে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে এক বছর আগেই টাস্ক ফোর্স গঠন করেছিল। যার ফলে দেশের অন্যান্য অংশের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে পেঁয়াজের দাম কম রয়েছে। ১১ মাস আগে মূল্যবৃদ্ধি, সার ও পেট্রো পণ্যের দাম বাড়ার প্রতিবাদে ইউপিএ সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে তৃণমূল। সেই সিদ্ধান্তকে সঠিক বলে ব্যাখ্যা করে আজ ডেরেক বলেন, “এখন মানুষ বুঝতে পারছেন, কেন আমরা জনবিরোধী ইউপিএ সরকার থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম।”

মূল্যবৃদ্ধি রুখতে কেন্দ্রের পদক্ষেপ
পেঁয়াজের আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি রুখতে পেঁয়াজের ন্যূনতম রফতানি মূল্য বেঁধে দিল কেন্দ্রীয় সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রকের তরফে বুধবার জানানো হয়েছে, প্রতি টন পেঁয়াজ ৪০ হাজার টাকার কম মূল্যে রফতানি করা যাবে না। ইতিমধ্যেই নাসিকের বড় বাজারগুলিতে পেঁয়াজের পাইকারি দর প্রতি কেজিতে এক টাকা করে বেড়ে ৪৬ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে, যার প্রভাব পড়েছে দেশ জুড়ে।

এই সংক্রান্ত খবর...

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.