তৃণমূলের ‘দাপটে’ চুরমার হয়ে গেল উত্তরবঙ্গে সিপিএমের দুই শক্ত ঘাঁটি ফালাকাটা ও গঙ্গারামপুর।
১৯৭৮ সালের পর এই প্রথম ফালাকাটা পঞ্চায়েত সমিতি হাতছাড়া হল বামেদের। পঞ্চায়েত সমিতির ৩৫টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ১৯টি আসন জিতেছে। শুধু পঞ্চায়েত সমিতি নয়, ফালাকাটা ব্লকের ১২টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৮ টি গ্রাম পঞ্চায়েত একক ভাবে দখল করল তৃণমূল। পঞ্চায়েত নির্বাচনের শেষ দিনের প্রচারে ফালাকাটার জটেশ্বর গ্রামে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জনসভা করেন। এতেই পরিস্থিতি অনুকূলে গিয়েছে বলে ব্লকের তৃণমূল নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন। উল্লেখ্য, ৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত ছাড়া ব্লকের বাকি গ্রাম পঞ্চায়েত এতদিন সিপিএমের ছিল।
ভোটের ফলে রীতিমত উচ্ছ্বসিত তৃণমূল শিবির। দুপুর ১২টা থেকে ফালাকাটা ব্লকের জটেশ্বর-২ ,ফালকাটা-২,ফালাকাটা-১, জটেশ্বর-১, ধনীরামপুর-১, গুয়াবরনগর, দলগাঁও, পারঙ্গেরপাড় গ্রাম পঞ্চায়েতে একের পর এক জয়ের খবর ছড়াতে সবুজ আবিরে ছড়িয়ে যায় সারা শহর গ্রামগঞ্জ। রীতিমত বাজনা বাজিয়ে বিজয় মিছিল বার করে তৃণমূল।
গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনে তৃণমূলের জয় জয়কার পড়ে যাওয়ায় পঞ্চায়েত সমিতি যে তাঁদের হাতে যাবে তা নিশ্চিত হয়ে যান তৃণমূলের নেতা ও কর্মীরা। সন্ধ্যায় পঞ্চায়েত সমিতির ফলাফল যথারীতি তৃণমূলের অনুকূলে যায়। ফালাকাটার তৃণমূল বিধায়ক অনিল অধিকারী বলেন, “দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়)-র সভায় মানুষের ঢল দেখে আমরা নিশ্চিত হয়ে ছিলাম আমরাই পঞ্চায়েত সমিতি এবং অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করব।” |
ফালাকাটায় উচ্ছ্বাস তৃণমূলের। ছবি তুলেছেন রাজকুমার মোদক। |
সিপিএম অবশ্য তাদের পরাজয় মেনে নিয়েছে। সিপিএম-এর ফালাকাটার জোনাল সম্পাদক শ্যামলকলি বসু বলেন, “আমাদের ফল খারাপ হয়েছে। মানুষ তৃণমূলকে আরও দেখতে চায়। তবে কয়েকশ উন্নয়ন মূলক কাজের তালিকা আমাদের কাছে আছে। দুই বছরে তো ওঁরা কিছুই করেনি। মানুষ সব বিচার করবেন।”
দক্ষিণ দিনাজপুরের লাল দুর্গ গঙ্গারামপুর থেকেও মুছে গেল সিপিএম। মোট ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১০টি দখল করে নিল তৃণমূল। একটি মাত্র উদয় গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৭টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ৭টি এবং সিপিএম ৭টি আসনে জিতেছে। আরএসপি ১টি এবং বিজেপি ২টি আসন পেয়েছে। বিজেপির সমর্থন নিয়ে বোডর্র্ গঠনে সিপিএমের এগোবে না বলে বাম নেতৃত্ব জানিয়ে দিয়েছেন। এতে ওই গ্রামপঞ্চায়েতটি কার্যত তৃণমূলের দিকে ঝুঁকে আছে।
গঙ্গারামপুরে গতবারের ১১ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে সিপিএম একক শক্তিতে ৯টি দখল করেছিল। তৃণমূল পেয়েছিল ২টি আসন। গঙ্গারামপুরের সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন মন্ত্রী নারায়ণ বিশ্বাস শাসক দলের সন্ত্রাসকে দায়ী করেছেন। তাঁর অভিযোগ, “মনোনয়ন থেকে লাগাতার সন্ত্রাস হয়েছে। মানুষের প্রকৃত রায় প্রতিফলিত হয়নি।”
দলীয় সূত্রের খবর, গঙ্গারামপুরকে ঘাঁটি করে দক্ষিণ দিনাজপুর জুড়ে সিপিএম রাজনীতির বিস্তার। দলের জেলা সম্পাদক থেকে প্রথম সারির নেতানেত্রীরা গঙ্গারামপুরের বাসিন্দা। বালুরঘাটে সদর কার্যালয় হলেও পার্টির গঙ্গারামপুরের শক্তজমি তৈরি করেছিল। এবার সেই গঙ্গারামপুরই সিপিএমের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল। |