কংগ্রেস-তৃণমূল জোট না হওয়ায় জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের ৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত ফের বামেরা দখল করল। ২০০৮ সালে জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের ৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত দখল নেয় কংগ্রেস-তৃণমূল জোট। দু’দলের জোট ভেঙে যাওয়ায় সেই গ্রাম পঞ্চায়েত গুলি ফের বামেদের দখলে গিয়েছে। শুধু সদর ব্লক নয়, একই ঘটনা দেখা গিয়েছে মালবাজারের লাটাগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারের ময়রাডাঙা এবং বিবেকানন্দ ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতেও। এমনকী, জলপাইগুড়ি জেলার অন্তত ৩০টি গ্রাম পঞ্চায়েত ত্রিশঙ্কু হয়েছে তারও অন্যতম কারণ সেটি।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, ত্রিশঙ্কু গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে কংগ্রেস এবং তৃণমূল একে অপরের সমর্থন নিলে তবে বোর্ড গঠন করার সুযোগ মিলতে পারে। সব কটি গ্রাম পঞ্চায়েতেই কংগ্রেস এবং তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোটের যোগফল বামেদের চেয়ে বেশি। সদর ব্লকের বারোপেটিয়া নতুন বস, পাতকাটা, খারিজা বেরুবাড়ি ১ এবং ২ নম্বর, পাহাড়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতে বামেরা সংখাগরিষ্ঠ আসন পেয়েছে। ২০০৮ সালে মহাজোটের দখল করা অরবিন্দ গ্রাম পঞ্চায়েতও এবার নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পেয়েছে বামেরা। সদর ব্লকের ১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১২টিতেই বামেরা গরিষ্ঠতা পেয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের অভিমত, লোকসভা ভোটের আগে জলপাইগুড়ির ফল কংগ্রেস এবং তৃণমূল দু’দলের কাছেই জোট বার্তা পৌঁছে দিয়েছে।
যদিও জোট বার্তার বিষয়টি মানতে রাজি নয় শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। দলের জেলা সভাপতি চন্দন ভৌমিক বলেন, “এবার তো জোট হয়নি। তাই জোট হলে কেমন হতো সেটা এখনই আলোচ্য হতে পারে না। আমরা ফলাফল বিশ্লেষণ করে পদক্ষেপ করব।” সদর ব্লকে বামেদের জয়ের জন্য চন্দনবাবু অবশ্য কংগ্রেসকেই দায়ী করেছেন। তাঁর কথায়, “ভোটের ফলাফলে স্পষ্ট যে কংগ্রেস বামেদের সঙ্গে একটা আঁতাত তৈরি করেছিল। কিছু এলাকায় কংগ্রেসের ভোট বামেদের দিকে গিয়েছে। সে কারণেই বহু আসন তৃণমূলের হাতছাড়া হয়েছে।”
তৃণমূলের যুক্তি ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন কংগ্রেসের জেলা সভাপতি মোহন বসু। তিনি বলেন, “আমরা প্রথম থেকেই বলেছি, রাজ্যে পরিবর্তন এসেছে কংগ্রেস এবং তৃণমূল দুই দলের হাত ধরে। রাজ্যবাসী কাউকে এককভাবে জেতাননি।” তাঁর অভিযোগ, রাজ্যে যেখানে সন্ত্রাস হয়েছে।, সেখানে অবশ্য তৃণমূল একচেটিয়া ভোট পেয়েছে। কিন্তু যেখানে মানুষ অবাধে ভোট দিতে পেরেছেন, সেখানেই প্রমাণ হয়েছে, কংগ্রেস ছাড়া বামেদের হারানো সম্ভব নয়।”
বাম দূর্গ বলে পরিচিত বারোপেটিয়া, পাতকাটার মতো গ্রাম পঞ্চায়েত দখলে আসায় স্বভাবতই বাম শিবিরে খুশির হাওয়া। বারোপেটিয়ায় যেখানে মাত্র ২টি আসন ছিল, সেখানে এবার সিপিএম একাই পেয়েছে ৬টি আসন। সিপিএমের জেলা সম্পাদক কৃষ্ণ বন্দ্যোপাধায় বলেন, “জোট কোনও বিষয় নয়। গত দু বছরে রাজ্য সরকারের কাজকর্ম দেখে সাধারণ মানুষ ভীত ও বিরক্ত। যেখানে অবাধ ভোট হয়েছে, সেখানে আবার বামেদের উপরেই আস্থা দেখা গিয়েছে।” |