আলিপুরদুয়ারে নিহত কংগ্রেস সমর্থক
ভোটের ফল বেরোতেই সংঘর্ষ, কাঠগড়ায় শাসক দল
ভোটের ফল ঘোষণার রাতেই রাজনৈতিক সংঘর্ষে মৃত্যু হল এক কংগ্রেস সমর্থকের। জলপাইগুড়ির আলিপুরদুয়ারের এই ঘটনায় আহত হন আরও দু’জন। অন্য দিকে, ২০০৮ থেকে তৃণমূলের দখলে থাকা দুই জেলাতেই রাজনৈতিক অশান্তি ছড়াল পঞ্চায়েত ভোটের ফল গণনার দিন। সোমবার পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও জলপাইগুড়ির ওই গণ্ডগোলে অভিযোগের আঙুল উঠেছে শাসক দলের দিকে। তৃণমূলের তরফে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। বিক্ষিপ্ত গণ্ডগোল হয়েছে বর্ধমান ও উত্তর ২৪ পরগনায়। ব্যালট ছিনতাইয়ের খবর এসেছে বর্ধমান, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা থেকে।
নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকেরা জানান, সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যালট ছিনতাইয়ের খবর পাওয়া গিয়েছে বর্ধমান জেলার মেমারি, মন্তেশ্বর, হুগলির জাঙ্গিপাড়া এবং উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়া-১ নম্বর ব্লক থেকে। গণনার সময় হাড়োয়া পঞ্চায়েত সমিতির ভোট-বাক্সে মিলেছে অন্য একটি গ্রাম পঞ্চায়েতের ছাপমারা ব্যালটও। এর প্রেক্ষিতে জাঙ্গিপাড়ার ৮৪ নম্বর, মন্তেশ্বরের ১৭৬ নম্বর, মেমারির ১৯ ও ১৯/১ নম্বর এবং হাড়োয়া-১ নম্বর ব্লকের গ্রাম পঞ্চায়েতের ওই বুথের ভোট বাতিল করে নতুন ভোট নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে কমিশন। তবে হাড়োয়া পঞ্চায়েত সমিতির ব্যাপারে কী পদক্ষেপ করা হচ্ছে, এ দিন কমিশন তা খোলসা করেনি। গণনা চলাকালীন ব্যালট ছিনতাইয়ের ঘটনায় কারা জড়িত, বা ব্যালট ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কি না, তা-ও স্পষ্ট করেনি কমিশন।
সংঘর্ষে আহত সিপিএম সমর্থক। ব্যারাকপুরে। ছবি: বিতান ভট্টাচার্য।
সোমবার রাতে আলিপুরদুয়ারের পাতলাখাওয়া পঞ্চায়েতের পূর্ব শিমলাবাড়ি এলাকায় রাস্তায় কথা বলছিলেন জনা চারেক কংগ্রেস সমর্থক। তখন তৃণমূলের এক সমর্থক ভোজালি নিয়ে তাদের উপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ। তাঁদের মধ্যে অমল রায়কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত ঘোষণা করা হয়। আহত আরও দুই কংগ্রেস সমর্থক স্বপন রায় ও তাপস রায় আশঙ্কাজনক। আলিপুরদুয়ারের এএসপি আকাশ মেঘারিয়া বলেন, “খবর পেয়েছি। একজন মারা গিয়েছেন। দু’জন আহত। শুনেছি ওই মৃত ব্যক্তি কংগ্রেস সমর্থক। লিখিত অভিযোগ পাইনি।” স্থানীয় কংগ্রেস নেতা বাদল কার্জির অভিযোগ, “তৃণমূলই হামলা চালিয়েছে।” তৃণমূলের সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অনিল অধিকারী বলেন, “আমি এমন খবর শুনিনি।” ময়নাগুড়ির ব্রহ্মপুরে তাঁদের এক জয়ী প্রার্থীর বাড়িতে আগুন দেওয়া হয় বলে অভিযোগ জানান স্থানীয় বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারী। বলেন, “তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা আমাদের জয়ী প্রার্থী দুলালি মণ্ডলের বাড়িতে আগুন দেয়।” তৃণমূলের স্থানীয় নেতা শশাঙ্ক বসুনিয়ার দাবি, “ভিত্তিহীন অভিযোগ।”
এ দিন দুপুরে ভোট-গণনার মধ্যেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীতে কাঁঠালবেড়িয়া পঞ্চায়েতের খেড়িয়া এলাকায় আরএসপি ও তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে জখম হন তিন মহিলা-সহ ছ’জন। আহতেরা সকলেই তাদের সমর্থক বলে আরএসপি-র দাবি। আহতদের মধ্যে রাজিয়া লস্করের গলায় ধারালো অস্ত্রের কোপ রয়েছে। ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে দেওয়া হয় রেজাউল লস্করের। মমিরুল লস্করের মাথায় লাঠির আঘাত লাগে।
পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন কাঁঠালবেড়িয়া পঞ্চায়েতটি তৃণমূল জেতে। খেড়িয়ার ৭৪ নম্বর বুথে আরএসপি এবং ৭৫ নম্বর বুথে তৃণমূল জেতে। এর পরই বচসা এবং সংঘর্ষ বাধে। তৃণমূল অস্ত্র এবং লাঠিসোটা নিয়ে চড়াও হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ বাহিনী, র্যাফ, কমব্যাট ফোর্স এবং বিএসএফ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
বাসন্তীর আরএসপি বিধায়ক সুভাষ নস্করের অভিযোগ, “ভোটে তৃণমূল সন্ত্রাস করেছে। এ দিনও ওরা হামলা করল।” অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি মান্নান শেখের পাল্টা অভিযোগ, “আমরা জেতায় ওরা হামলা চালাল। তা দেখে গ্রামবাসীরা প্রতিরোধ করেন।”
পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরির বারাতলায় জয়ী নির্দল প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কানাই জানা নামে ওই প্রার্থী চিকিৎসাধীন। খেজুরি-২ ব্লকের বারাতলা পঞ্চায়েতে ১৬টি আসনের মধ্যে ১৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগেই জিতেছিল তৃণমূল। সোমবার গণনার পরে দেখা যায় বাকি তিনটির মধ্যে দু’টিতে জিতেছে তারা। একটিতে কেবল জিতেছেন নির্দল প্রার্থী কানাই জানা। কানাইবাবু দুপুরবেলা খেজুরি কলেজের গণনাকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে নিজের বুথকেন্দ্র কশতলায় যান। সেখানেই তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা তাঁকে মারধর করেন বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান তাঁরা। দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে হেঁড়িয়া-বিদ্যাপীঠ রাস্তা অবরোধ করেন গ্রামবাসীরা। আধ ঘণ্টা পরে পুলিশ অবরোধ তোলে।
বর্ধমানে পাণ্ডবেশ্বরে এক কংগ্রেস নেতা এবং এক পঞ্চায়েত প্রার্থীর ছেলেকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। কংগ্রেসের পাণ্ডবেশ্বর ব্লক সভাপতি গোপীনাথ নাগের দাবি, মারধরে বাধা দিলে গাড়ি ভাঙচুর হয়। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি। রানিগঞ্জের বল্লভপুর পঞ্চায়েতের বেলুনিয়ায় সিপিএমের দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর করে আগুন লাগানোর অভিযোগও ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের রানিগঞ্জ ব্লক সভাপতি সেনাপতি মণ্ডলের দাবি, “এটা ওদের দলীয় অর্ন্তদ্বন্দ্বের ফল।”
দুপুর থেকে তেতে ওঠে রাজারহাট-গোপালপুরও। একটি মিছিল নিয়ে গণ্ডগোলের জেরে পুলিশের সামনেই সংঘর্ষে জড়ায় সিপিএম-তৃণমূল। আহত হন দু’পক্ষের পাঁচ জন। রাজারহাট রোডে প্রায় আধ ঘণ্টা অবরোধ করে সিপিএম। র্যাফ এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতি সামলায়।
সিঙ্গুরের দুলেপাড়ায় ক্যাম্প অফিসে পুলিশের বিরুদ্ধে লাঠিচার্জের অভিযোগ করেছে সিপিএম। তৃণমূলের দাবি, সিপিএম কর্মীরা তাঁদের মারধর করায় তাঁরা পুলিশে খবর দেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.