একা কুম্ভ অধীর, উত্তরেও ঘর
সামলাতে চাপে কংগ্রেস শিবির
জোট ভাঙার পরে তৃণমূল নেতাদের অনেকেই বলতেন, পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যে কংগ্রেস সাইনবোর্ড হয়ে যাবে। সোমবার গ্রাম পঞ্চায়েতের ফল ঘোষণার পরে তৃণমূল নেতারা বাস্তবিকই কংগ্রেসকে কটাক্ষ করার সেই সুযোগ পেয়ে গেলেন।
দল ভেঙে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল গড়ার পর থেকেই একমাত্র মুর্শিদাবাদ ব্যতীত দক্ষিণবঙ্গে কংগ্রেস ক্ষয়িষ্ণু। কিন্তু উত্তরে মালদহ, উত্তর দিনাজপুর এবং কোচবিহার ও জলপাইগুড়ির কিছুটা অংশে কংগ্রেসের আধিপত্য ছিল। মুর্শিদাবাদে হারকিউলিসের মতো অধীর চৌধুরী কংগ্রেসের দুর্গ রক্ষার সম্ভাবনা জাগিয়ে রাখলেও উত্তরে কংগ্রেস যে জেলাগুলিতে প্রাসঙ্গিক ছিল, সেখানেও তারা কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে। প্রদেশ কংগ্রেস নেতা তথা বিধায়ক মানস ভুঁইয়াও স্বীকার করেন, “কংগ্রেসকে খুবই বিপজ্জনক অবস্থার মুখে দাঁড়াতে হয়েছে।”
কেন এই বেহাল অবস্থা হল, তা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “যা অনিবার্য ছিল তা-ই হয়েছে। এ বার তো লড়াই ছিল সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের। আমরা সেই লড়াইতে হেরেছি।” তৃণমূলের সন্ত্রাস এবং পুলিশ-প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার কথা বললেও নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতার কথাও স্বীকার করে নিয়েছেন প্রদীপবাবু। প্রদেশ সভাপতির সঙ্গে একমত দলীয় নেতাদের একাংশ। উদাহরণ দিয়ে তাঁরা মুর্শিদাবাদে অধীরের সাংগঠনিক দক্ষতার কথা যেমন বলেছেন, তেমনই মালদহ, উত্তর দিনাজপুর থেকে শুরু করে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে দলের বেহাল পরিস্থিতির জন্য সাংগঠনিক দুর্বলতাকেই দায়ী করেছেন। সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণ হিসাবে মানসবাবু বলেন, “তৃণমূলের সঙ্গে জোট করার মাসুল দিচ্ছে কংগ্রেস। প্রায় ৯ বছর বাদে দক্ষিণবঙ্গে মানুষ হাত চিহ্ন আর কংগ্রেসের পতাকা দেখতে পেয়েছেন। সময় লাগবে ঘুরে দাঁড়াতে।”
বহরমপুরে দলীয় কার্যালয়ে অধীর চৌধুরী। ছবি: গৌতম প্রামাণিক।
মানসবাবু অবশ্য তাঁর খাস তালুক পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ে জয়ের ধারা বজায় রেখেছেন। এমনকী, ৩৬ বছর বাদে সবংয়ের পঞ্চায়েত সমিতিও কংগ্রেস দখল করেছে বলে তাঁর দাবি। অবশ্য পূর্ব মেদিনীপুরের একমাত্র কোলাঘাটে সাগরবাড় পঞ্চায়েতেই কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েছে। কিন্তু বর্ধমানে গত বারের চেয়ে কংগ্রেসের ফল বেশ খারাপ। জেলার কাটোয়ায় কংগ্রেসের যে আধিপত্য ছিল, এ বার তা অনেকটাই কমেছে। ২০০৮ সালে কাটোয়ায় ১৬টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৯টি ছিল কংগ্রেসের। এ বার তা কমে চারটিতে এসে ঠেকেছে। নদিয়াতে এ বার ভরাডুবি হয়েছে। জেলার ১৮৭টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১২টি পেয়েছে কংগ্রেস। গতবার সংখ্যাটি ছিল ৫৩। এখানে দলের অন্তর্দ্বন্দ্বেই এমন শোচনীয় ফল বলে জানাচ্ছেন কংগ্রেস নেতাদের একাংশ। আরও খারাপ অবস্থা দুই ২৪ পরগনা এবং হাওড়ায়। হাওড়ায় গত বার কংগ্রেস পেয়েছিল ৬৮টি পঞ্চায়েত। এ বার ১টি। শোচনীয় অবস্থা হয়েছে জেলার একমাত্র বিধায়ক অসিত মিত্রের নির্বাচনী এলাকা শ্যামপুরে। ভোটের কয়েক দিন আগে অসিতবাবু আক্রান্ত হয়েছিলেন। এ দিন ভোটের ফল দেখে অসিতবাবুর কাতর প্রতিক্রিয়া, “আমরা সাফ হয়ে গিয়েছি।” এই ফলের জন্য তৃণমূলের সন্ত্রাসকেই দায়ী করেছেন দলের জেলা সভাপতি কাজি আব্দুল রেজ্জাক।
দক্ষিণবঙ্গে কংগ্রেস একমাত্র উজ্জ্বল মুর্শিদাবাদে। তবে গত বারের তুলনায় পঞ্চায়েতে আসন কমেছে কংগ্রেসের। গতবার তারা পেয়েছিল ১৪৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত। এ বার ১১৬। এ বার এখানে তৃণমূল খাতা খুলেছে। তারা ৭টি আসন পেয়েছে। কংগ্রেসের খারাপ ফল নিয়ে অধীরের বক্তব্য, “তৃণমূল আমাদের কিছুটা ক্ষতি করে সিপিএমের লাভ করিয়ে দিয়েছে।” উত্তরবঙ্গে বরকত গনি খানের নেতৃত্বে মালদহে কংগ্রেসের যে দুর্গ তৈরি হয়েছিল, এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে তাতে বিরাট ফাটল ধরেছে। মালদহ জেলা পরিষদ শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের হাতে থাকবে কিনা, থাকলেও কতটুকু সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকবে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। অথচ মালদহে কংগ্রেস নেতৃত্ব এখনও রয়েছে গনি পরিবারের হাতেই। জেলার থেকে কেন্দ্রে মন্ত্রী হয়েছেন গনির ভাই আবু হাসেম খান চৌধুরী (ডালুবাবু)। ডালুবাবু ছাড়াও তার ভাগ্নী মৌসম বেনজির নূর সাংসদও রয়েছেন। জেলার ১২টি বিধানসভা আসনের ৭টি কংগ্রেসের দখলে। তবুও এ বারে কংগ্রেস কিছুটা টালমাটাল। প্রদেশ কংগ্রেসের এক নেতার ব্যাখ্যা, “গনি খানের ছায়া ক্রমশ ছোট হচ্ছে জেলায়। বিষয়টা নিয়ে ভাবতে হবে।” একই অবস্থা উত্তর দিনাজপুরেও। সেখানে জেলাপরিষদে কংগ্রেস ক্ষমতাসীন ছিল। কিন্তু এখানে বামেদের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইতে রয়েছে কংগ্রেস। প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি যে জেলায় কংগ্রেস মজবুত সংগঠন গড়েছিলেন, এ বার সেই উত্তর দিনাজপুরে বামেদের চ্যালেঞ্জের মুখে কংগ্রেস। অথচ মালদহের মতো এই জেলা থেকে কেন্দ্রে মন্ত্রী রয়েছেন প্রিয়-জায়া দীপা দাশমুন্সি। জেলার ৯ বিধানসভা আসনের মধ্যে ৩টি কংগ্রেসের দখলে। কিন্তু তা-ও কংগ্রেস ঘাঁটি এই জেলায় কংগ্রেস অনেকটাই দুর্বল হয়েছে। বামেরা যেমন গ্রাম পঞ্চায়েতে আসন বাড়িয়েছে, তেমনই এ বারই এখানে তৃণমূল খাতা খুলেছে। তারা রাত পর্যন্ত ১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত পেয়েছে। এই পরিস্থিতির জন্য মূলত শাসক দলের সন্ত্রাসকেই দায়ী করেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। তবে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় ওই অভিযোগকে কোনও গুরুত্বই দেননি। দীপা, অধীরের নাম না করে তিনি বলেন, “উত্তরবঙ্গে কংগ্রেসের নেতৃত্বে যাঁরা আছেন, তাঁরা অনুন্নয়নের প্রতীক। আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উন্নয়নের যে কাজ করছেন, তাতেই ভরসা রাখছেন মানুষ। তার ফলই পাচ্ছে কংগ্রেস।” কংগ্রেসের বেহাল পরিস্থিতির খবর পৌঁছেছে দিল্লিতেও। দলীয় সূত্রে খবর, কংগ্রেসের হাল সরেজমিনে পর্যালোচনা করতে আগামী সপ্তাহে কলকাতায় আসার কথা এ রাজ্যে এআইসিসি-র পর্যবেক্ষক শাকিল আহমেদ খানের। তিনি জেলা কংগ্রেস সভাপতি ও দলের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে কথা বলবেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.