আশায় না থেকেও কিছু প্রাপ্তি সম্বল বামেদের
মকপ্রদ ফলের আশা ছিল না। হয়ওনি। তবু তারই মধ্যে কিঞ্চিত্‌ আশার আলো দেখছে আলিমুদ্দিন।
আশার কারণ, জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদ দখলে রাখা। কংগ্রেসের ঘাঁটি মালদহ এবং উত্তর দিনাজপুরে দাঁত ফোটাতে পারা। এবং উত্তর ২৪ পরগনা ও নদিয়ায় গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে অপ্রত্যাশিত ভাল ফল করা।
এ বার দক্ষিণবঙ্গে ভাল ফলের আশা অতি বড় বাম সমর্থকও করেননি। সম্ভাবনার ক্ষেত্র হিসেবে তাঁরা দেখছিলেন উত্তরবঙ্গকেই। জোট ভাঙার পরে সেখানে কংগ্রেসকে ধাক্কা দেওয়া যাবে বলে মনে করছিল সিপিএম। কার্যক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে। গনি পরিবারের গড় মালদহ এবং দীপা দাশমুন্সির জেলা উত্তর দিনাজপুরে কংগ্রেসের থেকে এগিয়ে গিয়েছে তারা।
পাশাপাশি, প্রত্যাশা না-থাকলেও দক্ষিণবঙ্গে কিছু কিছু জায়গায় ফল ভাল হয়েছে বামেদের। গত বার পঞ্চায়েত ভোটে উত্তর ২৪ পরগনা এবং নদিয়ায় জেলা পরিষদ দখল করতে না-পারলেও গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে বেশ ভাল ফল করে চমকে দিয়েছিল তৃণমূল।
বস্তুত, সেখান থেকেই তাদের রাজ্য দখলের অভিযান শুরু। কিন্তু এ বার এই দুই জেলায় ওই দুই স্তরে খানিকটা হলেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে বামেরা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার, রায়দিঘি, জয়নগর এলাকাতেও তারা ভাল ফল করেছে।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শ্যামল চক্রবর্তীর মতে, “এই ৩ জেলায় দলের কর্মীরা সন্ত্রাসের মোকাবিলা করে রুখে দাঁড়িয়ে ভোট করেছে!” তবে নদিয়া ও উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট এলাকায় কংগ্রেসের উপস্থিতিও বামেদের ফল কিছুটা ভাল হওয়ার নেপথ্যে কাজ করেছে। তৃণমূলের ভোট কেটে কংগ্রেস সুবিধা করেছে বামেদেরই।
জয়ের খবরের মধ্যেই মহাকরণে সাংবাদিক সম্মেলনে। ছবি: সুমন বল্লভ।
এই ফল কি বামেদের জন্য আশানুরূপ? সরাসরি মন্তব্য এড়িয়ে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু এ দিন বলেছেন, “জেলা পরিষদ-সহ সব ফলাফল জানা গেলে তবেই বোঝা যাবে।” তবে একই সঙ্গে তাঁর ব্যাখ্যা, “তৃণমূল যেখানে জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত ছিল, সেখানে রিগিং করেনি! সেখানে মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে আমাদের ভোট দিয়েছে। এই সব এলাকায় পঞ্চায়েত স্তরে কংগ্রেস বা তৃণমূলের কাজে বিরক্ত হয়েও মানুষ বামেদের ভোট দিয়েছে।”
ফব-র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জয়ন্ত রায়ের বক্তব্য, “বামফ্রন্টকে উত্‌খাত করে দেওয়া তো সম্ভব হয়নি! যেখানে সংগঠন ছিল, সেখানে লড়াই করা গিয়েছে।” আরএসপি-র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মনোজ ভট্টাচার্যের কথায়, “যেখানে যেখানে ঠিক মতো ভোট হতে পেরেছে, সেখানে কিছু ইতিবাচক লক্ষণ আছে। যে ভাবে বামেরা উড়ে যাবে বলে তৃণমূল মনে করেছিল, তা কিন্তু হয়নি!”
আসলে ইতিহাসের একটি তথ্যের দিকেও নজর রয়েছে বাম নেতাদের। বিপুল জয়ে ১৯৭৭ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে ১৯৭৮-এর পঞ্চায়েতে সব ক’টা জেলা পরিষদ জিতেছিল বামফ্রন্ট। পরিবর্তনের পরে প্রথম পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের ‘১০০% সাফল্য’ রুখে দিয়ে গোটা তিনেক জেলা পরিষদ দখলে রাখতে পারলেও সেটা উত্‌সাহব্যঞ্জক বলেই ধরবে বামফ্রন্ট।
তবে এই স্বস্তির আড়ালে অস্বস্তিও প্রবল। পশ্চিম মেদিনীপুর ও বর্ধমানের লাল দুর্গ ধূলিসাত্‌ হয়েছিল গত বিধানসভা ভোটেই। এ বার তাদের ফল আরও খারাপ হয়েছে। গত পঞ্চায়েত ভোটে বর্ধমানে ২৬০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে বামেদের দখলে ছিল ২০২টি এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে ২৯০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ২২৬টি। এ বার রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের বিধানসভা কেন্দ্র নারায়ণগড়-সহ গোটা পশ্চিম মেদিনীপুরে সিপিএম ধরাশায়ী! সূর্যবাবু অবশ্য বলেছেন, “সমগ্র রাজ্যে যা হয়েছে, যে ভাবে ভোট হয়েছে, নারায়ণগড়ও ব্যতিক্রম নয়।” বর্ধমানের জেলা সম্পাদক অমল হালদারের অভিযোগ, “নির্বাচন ঘোষণার দিন থেকে গণনা পর্যন্ত প্রশাসনের মদতে যে ভাবে সন্ত্রাস হয়েছে, তার জন্যই একতরফা ফল হয়েছে।”
উত্তরবঙ্গে দুই বাম শরিকের দুই শক্ত ঘাঁটি কোচবিহার (ফরওয়ার্ড ব্লক) এবং দক্ষিণ দিনাজপুরও ঝুঁকে পড়েছে তৃণমূলের দিকে। উত্তরবঙ্গের দায়িত্বে থাকা জেলার নেতারা বিমানবাবুকে জানিয়েছেন, সিপিএম তাদের এলাকায় ভোট মোটামুটি ধরে রাখতে পারলেও আরএসপি ও ফরওয়ার্ড ব্লক সব ক্ষেত্রে পারেনি। উত্তর দিনাজপুরে সমাজবাদী পার্টিও বামেদের ভোট কেটেছে।
জেলা পরিষদের স্পষ্ট ছবি হাতে আসার আগে লাভ-ক্ষতির হিসাব মেলানো যাবে না। তবু প্রাথমিক ফল থেকেই বাম নেতৃত্ব বুঝে নিয়েছেন, পরির্তনের ঝড়ের পরেও যে সব এলাকায় সংগঠনকে সচল রাখা গিয়েছে, ভোটবাক্সে তার কিছুটা ফল মিলেছে। পক্ষান্তরে ক্ষমতায় থাকার সময় যে সব জায়গায় সিপিএমের ছড়ি ঘোরানোর সংস্কৃতি ছিল, ধাক্কা এসেছে সেখানেই বেশি! উদাহরণ, বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া। এক বাম নেতার কথায়, “যেখানে সিপিএমের আধিপত্যবাদ চলত, সেখানে তৃণমূলের আধিপত্য আরও উত্‌কট ভাবে প্রতিষ্ঠিত হল!”
আলিমুদ্দিনে আজ, মঙ্গলবার বিকালে বামফ্রন্টের বৈঠকে বিভিন্ন জেলার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। যে সব ক্ষেত্রে ত্রিশঙ্কু ছবি আসবে, সেখানে বামেদের ভূমিকা কী হবে? বিমানবাবু এ দিন বলেছেন, “বামফ্রন্টের বৈঠকে এ ব্যাপারে নীতি নির্ধারণ হবে। একটি বৈঠকে না হলে আবার বৈঠক হবে।” মুখে না বললেও বাম নেতারা বুঝেছেন, তৃণমূল ও কংগ্রেসের ভোট কাটাকাটিতেই অনেক জায়গায় তাঁদের ফল ভাল হচ্ছে। উত্তরবঙ্গে এই ভোট বিভাজনের প্রভাব বেশি স্পষ্ট। এই কারণেই ত্রিশঙ্কু জেলা পরিষদ হলে সেখানে কংগ্রেসকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভাজনের রাজনীতি আরও উস্কে দেওয়ার পক্ষপাতী বামেদের একাংশ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.