দল ওঁদের প্রতীক দেয়নি। আম, সাইকেল কিংবা লণ্ঠন প্রতীক নিয়ে নির্দল প্রার্থী হয়ে তাঁরা লড়াইয়ে নেমেছিলেন। তৃণমূলের ওই সব বিক্ষুদ্ধ নির্দল প্রার্থীরাই বাঁকুড়া জেলার দু’টি পঞ্চায়েতে দলের প্রার্থীদেরই হারিয়ে দিলেন। দখল করলেন পঞ্চায়েত। কয়েকটি পঞ্চায়েতের ফল নিরঙ্কুশ হওয়ায় কে পঞ্চায়েত দখল করবে তার নির্ণায়ক শক্তি হিসেবে উঠে এসেছেন ওই নির্দল প্রার্থীরাই।
পাত্রসায়র ব্লকের বীরসিংহ গ্রাম পঞ্চায়েত গতবার সিপিএমের দখলে ছিল। সিপিএম এ বার প্রার্থী দিতে পারেনি বলে অভিযোগ। ওই পঞ্চায়েতের ৯টি আসনের মধ্যে একটি আসনে তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিল। বাকি ৮টি আসনে নির্বাচন হয়। তৃণমূলের ৮ জন, বিজেপি-র ২ জন এবং বিক্ষুব্ধ তৃণমূলের ৮ জন প্রার্থী ছিলেন। ফল প্রকাশের পর দেখা গেল, ৮টি আসনের মধ্যে বিক্ষুব্ধ তৃণমূলই ৬টি আসনে জিতেছে। একটি করে আসন পায় তৃণমূল ও বিজেপি। বীরসিংহ পঞ্চায়েত এলাকায় পঞ্চায়েত সমিতির আসনে এ বার তৃণমূল প্রার্থী হয়েছিলেন পাত্রসায়র পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা আশিস পাত্র। ছিলেন বিক্ষুদ্ধ তৃণমূল প্রার্থী মনোরঞ্জন সাইনিও। তাঁদের হারিয়ে দিন শেষে ওই আসনে জিতেছেন বিজেপি-র পাত্রসায়র ব্লক সভাপতি মোহন কাপড়ি। মোহনবাবুর প্রাপ্ত ভোট ১৮২০টি। বিক্ষুদ্ধ তৃণমূল প্রার্থী মনোরঞ্জনবাবু ৮৩৫টি ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে এবং তৃণমূল প্রার্থী আশিসবাবু ৭৮৮টি ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন।
ওই পঞ্চায়েতের সদ্য নির্বাচিত তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ পঞ্চায়েত সদস্য অরূপ ঘোষ, রিঙ্কু লোহার, রোহিত মিদ্যাদের বক্তব্য, “আমরাও তৃণমূলেরই একনিষ্ঠ কর্মী। গোষ্ঠী রাজনীতির জন্য আমাদেরকে বঞ্চিত করে কয়েকজন অযোগ্য প্রার্থীকে প্রতীক দিয়েছিলেন এলাকার এক ‘ভুঁইফোঁড়’ জেলা নেতা। মানুষ আমাদের জিতিয়ে ওই নেতাকে উচিত শিক্ষা দিয়েছেন। আমরাই আদি তৃণমূল।” তৃণমূলের পাত্রসায়র ব্লক সভাপতি স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়ও বলেন, “রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতায় কয়েকজন অযোগ্য ব্যক্তি দলের প্রতীক পেয়ে গিয়েছিলেন। এলাকার মানুষ যাঁদের যোগ্য মনে করেছেন, তাঁদেরকে জিতিয়েছেন।”
বিষ্ণুপুরের দ্বারিকা-গোঁসাইপুর গ্রাম পঞ্চায়েতেও একই ঘটনা ঘটেছে। এখানে মোট ১২টি আসনের মধ্যে ৮টিতে আম চিহ্নের নির্দল প্রার্থী হয়েছিলেন বিক্ষুদ্ধ তৃণমূলের কর্মীরা। ৭টিতে তাঁর জিতে ওই পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করতে চলেছেন। বাকি পাঁচটিতে জিতেছে তৃণমূল। গত বার বীরসিংহের মতো এই পঞ্চায়েতটিও ছিল সিপিএমের দখলে। এ বার বামফ্রন্ট কোনও প্রার্থীই দেয়নি। বিক্ষুদ্ধদের তরফে তৃণমূলের দ্বারিকা-গোঁসাইপুর প্রাক্তন অঞ্চল সভাপতি জামাল শেখ বলেন, “দলের অফিসিয়াল গোষ্ঠী লাল তৃণমূলের লোকেদের কাছে টেনে নিয়ে আমাদের দূরে সরিয়ে দিয়েছে। তার জবাব দিলেন এলাকার মানুষ। তবে আমরা এই জয় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই উৎসর্গ করছি।” তৃণমূলের বিষ্ণুপুর ব্লক সভাপতি মথুর কাপড়ির দাবি, “জামাল ও তাঁর অনুগামীরা দলের আদর্শ মানলে তৃণমূলের প্রতীকে দাঁড়ানো প্রার্থীদের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন না। ওঁরা আসল তৃণমূল নয়।”
ইন্দাসের রোল পঞ্চায়েতের মোট ১৫টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ৭টি, সিপিএম ৬টি ও নির্দলরা ২টিতে জয়ী হয়েছেন। আকুই-১ পঞ্চায়েতের ১১টির মধ্যে সিপিএম ও তৃণমূল ৫টি করে আসন পেয়েছে, একটি আসনে জয়ী হয়েছেন নির্দল প্রার্থী। মঙ্গলপুর পঞ্চায়েতের ১৪টি আসনের মধ্যে সিপিএম পেয়েছে ৫টি, তৃণমূল ৩টি এবং নির্দলরা ৬টি। একই ভাবে দীঘলগ্রাম পঞ্চায়েতের ১৩টির মধ্যে তৃণমূল ৬টি, সিপিএম ৩টি এবং নির্দলরা ৪টি আসনে জিতেছেন। এ ক্ষেত্রে নির্দলরা অধিকাংশই বিক্ষুদ্ধ তৃণমূল। এই পঞ্চায়েতগুলিতে তাই তৃণমূলকে বোর্ড দখল করতে গেলে ওই নির্দলদের মুখ্যপেক্ষী হতে হবে বলে রাজনীতির কারবারিরা মনে করছেন। |