বীরভূমে নিরঙ্কুশ তৃণমূল
জয়ের দাপটে অনুব্রতর অস্বস্তি কসবা, নানুরও
ল জেলায় দাপটে জিতেছে। সোমবার গণনার প্রথম দিনের শেষে হাসতেই পারতেন তিনি। কিন্তু অনুব্রত মণ্ডলের সেই হাসি চওড়া হতে দিল না কসবা। এই গ্রাম পঞ্চায়েতকেই মর্যাদার লড়াই হিসেবে দেখেছিলেন তিনি। হুমকি দিয়েছিলেন নির্দলরা (আদতে যাঁরা তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ) হামলা করলে পাল্টা বোমা মারতে। এই হুমকির জেরে তাঁর মাথার উপরে ঝুলছে জামিন অযোগ্য পরোয়ানা। তবু কসবা হাতে এল না অনুব্রত মণ্ডলের। তৃণমূল ছ’টি আসনে জিতল। কিন্তু নির্দলরা ছিনিয়ে নিলেন সমান আসন। ফলে ত্রিশঙ্কু পঞ্চায়েত। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফলে এমনই আরও কিছু খুচখাচ ঘটনা বাদ দিলে বীরভূমে দলের জয়জয়কারের পিছনে অবশ্য অনুব্রতই। জেলার মোট ১৬৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে তৃণমূল জিতেছে ৯৪টিতে। প্রায় নিরঙ্কুশ আধিপত্য। এমনকী, জমি-আন্দোলনকে ঘিরে যেখানে তৃণমূল কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল, সেই লোবা পঞ্চায়েতের দখলও নিয়েছে শাসক দল।
বীরভূমের ভোটের ফল দেখছেন অনুব্রত। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।
তবে এই জয়ে কসবাই শুধু একা কাঁটা নয় অনুব্রতর। আছে নানুরও। তৃণমূলের জেলা সূত্র বলছে, কসবায় গ্রাম পঞ্চায়েতের মতো নানুরে পঞ্চায়েত সমিতির গুরুত্বপূর্ণ আসনে তৃণমূলের পরাজয়ের মূল কারণও সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। এখানে বাকি দু’টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে দল। এই একটি আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছিল সিপিএম। কিন্তু সেই প্রার্থী, সফিকুল, মনোনয়ন পেশের পর থেকেই এলাকা ছাড়া। তাত্‌পর্যপূর্ণ ভাবে, এই এলাকায় প্রচারে পর্যন্ত যেতে পারেননি অনুব্রত। এলাকায় দাপট তৃণমূলেরই বিধায়ক তথা অনুব্রত-বিরোধী গদাধর হাজরার। সফিকুল-অনুব্রতকে তাঁর গোষ্ঠীই এলাকা থেকে দূরে রেখেছে। যার নিট ফল, সফিকুলের কাছে ১৯০৫ ভোটে হেরেছেন অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ তৃণমূলের অন্যতম জেলা সম্পাদক সুব্রত ভট্টাচার্য!
বিক্ষুব্ধদের সামলানো গেল না কেন? সামগ্রিক ভাবে এই নিয়ে এখনই কিছু বলতে নারাজ জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। তবে নানুর নিয়ে অনুব্রত নিজে বলেছেন, “কী কারণে এমন হল, এখনই বলতে পারছি না। পরে পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তৃণমূল সূত্রেই জানা যাচ্ছে, শুধু সুব্রতবাবুর পরাজয়ই নয়, নানুর ব্লকেরই থুপসড়া পঞ্চায়েতেও তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকট।
এই পঞ্চায়েতের মোট ২১টি আসনের মধ্যে গদাধর-গোষ্ঠী পেয়েছে ১০টি। অনুব্রত-গোষ্ঠীর দখলে বাকি ১১টি। দুই গোষ্ঠীরই দাবি, বোর্ড তারাই গড়বে। এবং কসবা। অনুব্রতর হুমকির পরে এই এলাকায় নির্দল প্রার্থীদের বাড়িতে হামলা চলে। খুন হন নির্দল প্রার্থী হৃদয় ঘোষের বাবা সাগরবাবু। সেই খুনের ঘটনাতেই অনুব্রতর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারা দিতে বলেছেন বিচারক। এ দিন ফলাফলে দেখা গিয়েছে, হৃদয়বাবু হেরেছেন। তবে বিক্ষুব্ধরা সমানে সমানে টক্কর দিয়েছে। মোট ১২টি আসনের মধ্যে অনুব্রত-গোষ্ঠী পেয়েছে ৬টি, বিক্ষুব্ধ-গোষ্ঠীও ৬টি। দিনের শেষে তাই হৃদয়বাবু বলেছেন, “আমরা কসবা পঞ্চায়েতে ৬টি আসন পেয়েছি। এটাই আমাদের নৈতিক জয়!” যে ব্লকের বাসিন্দা অনুব্রত, সেই বোলপুর-শ্রীনিকেতনের ৯টি পঞ্চায়েতের মধ্যে দু’টিতে ক্ষমতায় এসেছেন নির্দলরা (বিক্ষুব্ধ তৃণমূল)।
শাসক দলের মাথাব্যথার আরও কারণ আছে। মহম্মদবাজার ব্লকের ১২টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৭টিই দখল করেছে বামফ্রন্ট। চারটি পেয়েছে তৃণমূল। একটি ত্রিশঙ্কু। রামপুরহাট-১ পঞ্চায়েত সমিতির ৯টি পঞ্চায়েতের মধ্যে তৃণমূল গত বার জেতা ৩টি পঞ্চায়েত ধরে রাখতে পারলেও এ বার একটি পঞ্চায়েত (কাষ্ঠগড়া) হাতছাড়া হয়েছে বামেদের কাছে। রামপুরহাট-২ পঞ্চায়েত সমিতির ৯টি পঞ্চায়েতের মধ্যে তৃণমূল একটিও পায়নি। কংগ্রেস ৪টি। বাকি সব ক’টি ত্রিশঙ্কু। তবে এই সব কাঁটা বাদ দিলে মোটের উপরে জেলা জুড়ে অনুব্রতরই দাপট। এবং তার ফলেই সংশয় তৈরি হয়েছে, শেষ পর্যন্ত অনুব্রতর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি? কারণ, কসবায় উস্কানিমূলক বক্তৃতার পরেও দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে তিনি পাশে পেয়েছিলেন। অনুব্রতর বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রসঙ্গে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেছিলেন, “যদি দেখি বীরভূমের মানুষ আমাদের পক্ষে ভোট দিয়েছে, তা হলে কিছু করার নেই। না হলে ভাবনাচিন্তা করতে হবে।” এর পরে পরেই বিধানসভায় তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “অনুব্রত ‘ও কথা’ (প্রকাশ্যে নির্দল প্রার্থীদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া এবং পুলিশের উপরে বোমা মারার উস্কানি) বলতে চায়নি। তা নিয়ে কেন এত হইচই হচ্ছে?”
মুকুল-মমতার ওই বক্তব্যের পরে পুলিশ অনুব্রতকে আদৌ গ্রেফতার করবে কি না, তা নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছিল। এখন বীরভূম জেলায় তৃণমূলের এই দাপুটে জয়ের পরে তা নিয়ে সংশয়ের আর অবকাশ নেই বলেই মনে করছেন বিরোধীরা। এমনকী, মমতার ওই বক্তব্যের পরে ‘উনি সাধারণ মানুষের মুখ্যমন্ত্রী নন, অনুব্রত মণ্ডলের মুখ্যমন্ত্রী’ এ কথা যিনি বলেছিলেন, সেই পরাজিত নির্দল প্রার্থী হৃদয় ঘোষের সুরও যে অনেকটাই নরম! প্রশাসক মমতার উপরেই আস্থা রেখে তিনি এ দিন বলেছেন, “জেলার পুলিশ সুপার আমাকে ফোন করে নিরপেক্ষ তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীকেও সব জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছি। উনি নিশ্চয়ই চিঠিটা পড়ার সময় পাননি। তাই হয়তো ও-রকম মন্তব্য করেছেন। সবিস্তার জানার পরে দোষীদের সাজার ব্যবস্থা করবেন বলেই আমার আশা।” অর্থাত্‌ বলাই যায়, আপাতত শঙ্কা-মুক্ত অনুব্রত।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.