রামপুরহাটের অর্ধেক পঞ্চায়েত সমিতি বামেদের
জেলা পরিষদে কি একাধিপত্য থাকবে,
১৮টি আসন নিয়েই চিন্তায় শাসক দল
শঙ্কায় সত্যি হল। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রকাশিত ফল খানিকটা হলেও কপালে ভাঁজ ফেলল তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের। রাজ্যের প্রায় সর্বত্র বামেদের দখলে থাকা পঞ্চায়েতগুলি তৃণমূলের ঝড়ে উড়ে গেলেও খানিকটা উল্টো চিত্র দেখা গেল রামপুরহাট মহকুমায়। জেলা পরিষদের কাউন্টিং শুরু হওয়ার আগে তৃণমূলকে চিন্তায় ফেলেছে মহম্মদবাজারের ফলও। গত বিধানসভা ভোটের নিরিখে জেলার এই অংশে আশানুরূপ ফল করতে পারেনি রাজ্যের বর্তমান শাসক দল।
বীরভূমের এই এলাকায় গত বিধানসভা ভোটের ফলের নিরিখে তেমন ফল করতে পারেনি রাজ্যের শাসক দল। ২০১১ সালের ভোটে ৫টির মধ্যে চারটি বিধানসভাই পেয়েছিল তৃণমূল-কংগ্রেস জোট। মহকুমার পঞ্চায়েত সমিতির ফলে তার প্রতিফলন কিন্তু দেখা গেল না। তৃণমূলের এমন দাপটের আমলেও ৮টি পঞ্চায়েত সমিতির ৪টিই নিজেদের দখলে রাখতে পারল বামফ্রন্ট। তৃণমূল পেল ৩টি, কংগ্রেস ১টি। অন্য দিকে, খুব একটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না গ্রাম পঞ্চায়েতের ফলেও। মহকুমায় ময়ূরেশ্বর ১ ও ২ পঞ্চায়েত সমিতি ছাড়া বাকি ৬টি পঞ্চায়েত সমিতির গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনগুলিতে অধিপত্য দেখাতে পারেনি তৃণমূল। রাজনৈতিক মহলের দাবি, কংগ্রেস আর তৃণমূলের ভোট কাটাকাটির জেরেই ওই এলাকার একটি বড় অংশের পঞ্চায়েতে বামেদের ফল ভাল হয়েছে।
রামপুরহাটে জয়ের পরে বামকর্মী-সমর্থকদের উচ্ছ্বাস। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
মহকুমার ৬৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে বামফ্রন্ট পেয়েছে ১৭, তৃণমূল ১৩ ও কংগ্রেস ৬টি। সন্ধ্যা পর্যন্ত গ্রাম পঞ্চায়েতের সার্বিক ফলাফলে রামপুরহাট মহকুমার অধীন হাঁসন বিধানসভা এলাকায় কংগ্রেস তাদের দীর্ঘ দিনের আধিপত্য মোটামুটি বজায়ই রেখেছে। বিগত কয়েক দশক ধরে ওই বিধানসভাটি কংগ্রেসেরই দখলে আছে। ওই এলাকার কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মালের দাবি, “আমার বিধানসভা এলাকায় কংগ্রেসের আধিপত্য ধরে রাখতে পেরেছি। আসলে এলাকার মানুষ কংগ্রেসের উপরে ভরসা করেই নিরাপত্তা পেয়েছেন।” অন্য দিকে, মহম্মদবাজার ব্লকের ১২টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৭টিই দখল করেছে বামফ্রন্ট। চারটি তৃণমূল পেয়েছে, অন্যটি ত্রিশঙ্কু। গত পঞ্চায়েত ভোটে ওই ১২টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৪টি ছিল কংগ্রেসের, ২টি তৃণমূলের। বাকি ছ’টিই ছিল বামফ্রন্টের। সেখানে বাম ভোটে তৃণমূল তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি বলে মনে করা হচ্ছে। মহম্মদবাজার পঞ্চায়েত সমিতির ফলেও তাই দেখা যাচ্ছে। সমিতির ২৮টি আসনের ২০টিই পেল বামফ্রন্ট। তৃণমূল মাত্র ৭টি। সাঁইথিয়ার সিপিএম বিধায়ক ধীরেন বাগদির দাবি, “তৃণমূলের প্রতি এলাকার মানুষের মোহভঙ্গ হয়েছে। রাজ্যের শাসক দলের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে মানুষ ব্যালটে তারই জবাব দিয়েছেন।”
এ দিকে রামপুরহাট মহকুমা জুড়ে তৃণমূলের আধিপত্য দেখাতে না পারার মূল কারণ হিসেবে ভোট কাটাকাটিকেই দায়ী করছেন রাজনৈতিক মহল। সম্প্রতি একই কারণে নলহাটি বিধানসভার উপ-নির্বাচনে জয়ী হতে দেখা গিয়েছিল ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী দীপক চট্টোপাধ্যায়কেও। সেই প্রবণতাই এ বার ওই এলাকায় ফের আরও একবার দেখা দিল বলে মনে করছেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বেরও একটা বড় অংশ। হাঁসনের বিধায়ক নিজেও মনে করছেন, “কংগ্রেস-তৃণমূলের ভোট কাটাকাটিতেই বামফ্রন্ট এখানে সাফল্য পেল। জোট হলে দু’ পক্ষেরই ফল ভাল হত।” যদিও এলাকার এই ফলাফলকে খুব একটা খারাপ চোখে দেখছেন না তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান তথা রামপুরহাটের বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ব্যাখ্যা, “বিধানসভা নির্বাচনে কী হয়েছিল, তা না দেখে এখানে দল একক ভাবে কতগুলি আসন পেল সেটাই দেখা দরকার। সে ক্ষেত্রে আমি তো বলব, রামপুরহাট মহকুমায় তৃণমূলের ফল ভালই হয়েছে। তিনটে পঞ্চায়েত সমিতিতে তো আমারাই পেয়েছি।”
উঠে আসছে অন্য একটি দিকও। জেলার বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে নির্দল প্রার্থীদের (অধিকাংশই বিক্ষুব্ধ তৃণমূল) সঙ্গে ভোট ভাগাভাগি হয়ে বামেদের কাছে তৃণমূলের আসন হাতছাড়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তৃণমূলের নিজেদের ঘরের কোন্দলকেই দায়ী করছেন পরাজিত প্রার্থীরা। মহম্মদবাজার ব্লকের তৃণমূল কার্যকরী সভাপতি তথা অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ তাপস সিংহ কিন্তু কোনও রাখঢাক না করেই বলছেন, “দলের অন্তর্দ্বন্দ্বের জন্যই এই পরাজয়। কোথাও কোথাও দলের বিক্ষুব্ধ অংশের দেওয়া গোঁজ প্রার্থী তো দ্বিতীয় স্থানও দখল করেছেন!” উল্টো দিকে হারের নেপথ্যে দলের জেলা সভাপতিকেই দায়ী করছেন মহম্মদবাজার পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি জিতেন ভট্টাচার্যের মতো নেতারাও। তাঁর অভিযোগ, “আসলে অনুব্রতবাবুরা দলের ভেতরে কাউকেই মানতে চান না। তাঁর অনুগামীরাই সর্বত্র গোঁজ প্রার্থী দিয়েছিলেন। সেই গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বেরই ফল মিলল এই ভোটে।”
বিধানসভা ভোটে চূড়ান্ত ব্যর্থ হওয়ার পরে এমন ফলের আশা করেননি হয়তো জেলার বাম নেতৃত্বও। সিপিএমের এক জেলা নেতার যুক্তি, “সেই ২০০৮ সালে রামপুরহাটে আমরা ২৭টি পঞ্চায়েত পেয়েছিলাম। তারপরে রাজ্যে পরিবর্তন হল। ২০১১-র ভোটে ওই মহকুমার ৪টি বিধানসভা এলাকাতেই আমরা পিছিয়ে পড়েছিলাম। তার নিরিখে এই ফল বেশ ভাল।” বিশেষ করে নলহাটি এলাকায় যাঁর নেতৃত্বে বামফ্রন্ট সাফল্য পেল, সেই ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক তথা বিধায়ক দীপক চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, “তৃণমূল আসলে কেমন দল, মানুষ তা বুঝছেন। তাই তাঁরা এখন তৃণমূলকে চায়ছে না।” অন্য দিকে, সিপিএমের জেলা সম্পাদক দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “মানুষ যেখানেই স্বতস্ফূর্ত ভাবে ভোট দিতে পেরেছে, সেখানেই তৃণমূল হেরেছে।”
এই পরিস্থিতে মহকুমার ১৮টি জেলা পরিষদের আসনের ফলের উপরে অনেকটাই নির্ভর করছে তৃণমূলের ভাগ্য। বিরোধীরা সেখানে যত কম আসন পাবেন, তৃণমূলের তত লাভ। এই জেলায় তৃণমূল বিনা বাধাতেই জেলা পরিষদ দখল করতে পারে কিনা এখন সেটাই দেখার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.