যেন পুরুলিয়ারই প্রতিচ্ছবি!
এক সময়ে সিপিএমের ‘গড়’ ছিল বাঁকুড়ার জঙ্গলমহল। এমনকী, গত বিধানসভা ভোটে ‘মমতা-ম্যাজিকে’ও অটুট ছিল ‘লালদুর্গ’। এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে সেই ‘দুর্গ’ও তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল। কোনও ব্লকে মাত্র একটি গ্রাম পঞ্চায়েতে ক্ষমতা ধরে রেখে মুখরক্ষা হল। আবার কোনও ব্লকে ক্ষমতা হল শূন্য। বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলের খাতড়া-সহ ৬ টি ব্লকের তিন-চতুর্থাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত এ বার সিপিএমের হাতছাড়া হয়েছে। এমনকী, দলের জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্রের খাসতালুকেও গ্রাম পঞ্চায়েতে ক্ষমতাহীন হয়েছে সিপিএম। |
গণনাকেন্দ্রে ঢোকার আগে তল্লাশি। রাইপুরে উমাকান্ত ধরের তোলা ছবি। |
খাতড়া, রানিবাঁধ ও হিড়বাঁধ ব্লক নিয়ে গঠিত রানিবাঁধ বিধানসভা কেন্দ্র। এই তিনটি ব্লকের ২০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ২০০৮ সালে সিপিএমের দখলে ছিল ১৪টি। তৃণমূল জিতেছিল ৪টিতে। বাকি দু’টি পঞ্চায়েতে জিতেছিল ঝাড়খণ্ড পার্টি (আদিত্য গোষ্ঠী)। এ বার হিড়বাঁধ ব্লকে সিপিএম তাদের ক্ষমতা ধরে রাখতে পারলেও খাতড়া ব্লকে তৃণমূল-ঝড়ে কার্যত খড়কুটোর মত উড়ে গিয়েছে তারা। খাতড়া ব্লকে গত বার ৭টি পঞ্চায়েতের মধ্যে খাতড়া ১ বাদে সব পঞ্চায়েতে ও পঞ্চায়েত সমিতিতে ক্ষমতাসীন ছিল সিপিএম। এ বার সব ক’টি পঞ্চায়েতের এবং খাতড়া পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতা দখল করেছে তৃণমূল। একই ভাবে রানিবাঁধ ব্লকে গতবার ৮টি পঞ্চায়েতের মধ্যে সিপিএম ৪টিতে, তৃণমূল ২টিতে এবং ঝাড়খণ্ড পার্টি (আদিত্য) ২টিতে জয়ী হয়েছিল। এ বার সেখানে সব ক’টি পঞ্চায়েতই তৃণমূলের দখলে এসেছে। রানিবাঁধ পঞ্চায়েত সমিতির দখলও সিপিএমের হাতছাড়া হয়েছে।
রাইপুর ও সারেঙ্গা ব্লকের ১৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে রাইপুর বিধানসভা কেন্দ্র। এই দুই ব্লকের ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েত গত বার সিপিএমের দখলে ছিল। তৃণমূলের দখলে ছিল ৩টি। ঝাড়খণ্ড জনমুক্তি মোর্চা ও নির্দলদের দখলে ছিল ৩টি পঞ্চায়েত। এ বার সারেঙ্গা ব্লকের ৬টির মধ্যে ৫টি পঞ্চায়েতেরই ক্ষমতা সিপিএমের হাতছাড়া হয়েছে। আর গোয়ালবাড়ি পঞ্চায়েতে কোনও দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। অন্য দিকে, রাইপুর ব্লকের ১০টির মধ্যে এ বার তৃণমূল একক ভাবে ৮টি পঞ্চায়েতে জয়ী হয়েছে। মটগোদা ও ঢেকো পঞ্চায়েতে ফল হয়েছে ত্রিশঙ্কু।
সিপিএমের বাঁকুড়া জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অজিত পতি পরাজয় মেনে নিয়েও বলেছেন, “এ বারের ভোটে ব্যাপক সন্ত্রাস চালিয়েছে তৃণমূল। আমরা সর্বত্র প্রচার করার সুযোগ পাইনি। তা সত্ত্বেও এটা তো মানুষের রায়, মানতেই হবে।” এই ফলাফলে রীতিমতো উল্লসিত বাঁকুড়া জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল সরকার। তাঁর দাবি, “এ বার জঙ্গলমহলের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিয়েছেন। কোথাও সন্ত্রাস হয়নি। সিপিএম সর্বত্র প্রার্থী দিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে জঙ্গলমহলের মানুষ যে আস্থাশীল, তা এই ভোটে আরও একবার প্রমাণ হল।” |