পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলে তৃণমূলের দাপট
ড়াই বছর আগের বিধানসভা নির্বাচনে তবু কিছুটা প্রভাব ছিল। কিন্তু, পঞ্চায়েত নির্বাচনে পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলে জোর ধাক্কা খেল সিপিএম তথা বামফ্রন্ট। বলরামপুর থেকে বাঘমুণ্ডি, ঝালদা থেকে আড়শাসর্বত্রই পর্যদুস্ত হয়েছে বামেরা। রাজ্যে পালাবদলের পরে জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরেছে বলে যে দাবি বারবার করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, জঙ্গমহলের মানুষ তাতেই আস্থা রেখেছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
বস্তুত, দুই জেলার জঙ্গলমহলের ব্লকগুলিতে ভোটের ফলের পরিসংখ্যানের দিকে তাকালেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে। পুরুলিয়ার বান্দোয়ান ব্লকের ৮টি পঞ্চায়েতের মধ্যে গত বার (২০০৮ সাল) বামফ্রন্ট ক্ষমতায় ছিল ৩টিতে, জেএমএম ৩টিতে, ঝাড়খণ্ড পার্টি (আদিত্য) ১টি এবং কংগ্রেস ১টিতে। এ বার তৃণমূল পেয়েছে ৪টি পঞ্চায়েত। ত্রিশঙ্কু ফল বাকি ৪টিতে। বান্দোয়ান বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে বান্দোয়ান, বরাবাজার ও মানবাজার ২ পঞ্চায়েত সমিতি। ওই বিধানসভা দীর্ঘদিন ধরে সিপিএমের দখলে। ২০১১ সালের পরিবর্তনের ঝড়েও ওই আসন সিপিএম ধরে রেখেছিল। বরাবাজার পঞ্চায়েত সমিতির ১০টি পঞ্চায়েতে গতবার বামফ্রন্ট ৮টি, তৃণমূল ২টি পেয়েছিল। এ বার সেখানে বামেরা ধুয়েমুছে সাফ। তৃণমূল পেয়েছে ৯টি পঞ্চায়েত। একটি ত্রিশঙ্কু। মানবাজার ২ পঞ্চায়েত সমিতির মোট ৭টি পঞ্চায়েতের মধ্যে গত বারে বামফ্রন্ট ছিল ৫টি, তৃণমূল ১টি ও বামবিরোধী জোট ১টিতে জিতেছিল। এ বার তৃণমূল ৬টিতে এবং বামফ্রন্ট মাত্র ১টি পঞ্চায়েতে জিতেছে।
পুরুলিয়ায় মাওবাদীদের ‘ধাত্রীভূমি’ হিসাবে পরিচিত বলরামপুরের রায়ও এ বার তৃণমূলের পক্ষেই। এই ব্লকের ৭টি পঞ্চায়েতের মধ্যে গত বার বামফ্রন্ট ৫টি এবং তৃণমূল ২টি পেয়েছিল। এ বার সেখানে তৃণমূল একাই ৫টি দখল করেছে। শুধু বলরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতটাই দখলে রাখতে পেরেছে সিপিএম। ১টি ত্রিশঙ্কু। অযোধ্যা হিলটপের নীচে থাকা তিনটি পঞ্চায়েত ঘাটবেড়া-কেরোয়া, গেঁড়ুয়া এবং বড় উরমার দখল নিয়েছে তৃণমূল। যদিও পঞ্চায়েত ভোটের আগে থেকেই এলাকায় মাওবাদীরা তৃণমূল কর্মীদের হুমকি দিচ্ছে বলে ফিসফিসানি শোনা গিয়েছিল। দু-একটি জায়গায় মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টারও পাওয়া গিয়েছিল। তবু তৃণমূলকে এখানে ঠেকানো যায়নি।
বাঘমুণ্ডি ব্লকে তৃণমূল সে ভাবে সাফল্য পায়নি। এই কেন্দ্রে বিধায়কও কংগ্রেসের। ব্লকের ৮টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ২০০৮ সালে ৫টি ছিল বামফ্রন্টের দখলে, কংগ্রেসের ৩টি। এ বার কংগ্রেস ৪টি, ফরওয়ার্ড ব্লক ১টি পেয়েছে। ৩টি ত্রিশঙ্কু। মাওবাদী উপদ্রুত অযোধ্যা পঞ্চায়েত এ বার ফব-র হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে কংগ্রেস। বাঘমুণ্ডি বিধানসভা কেন্দ্রেরই অন্তর্গত ঝালদা ১ ব্লকের ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৬টি বামেদের আর ৪টি কংগ্রেসের দখলে ছিল। সেখানে এ বার কংগ্রেস ৫টি আর তৃণমূল ২টি পঞ্চায়েত পেয়েছে। ৩টি ত্রিশঙ্কু। এই বিধানসভারই অন্তর্গত আড়শা ব্লকের একাংশ। আড়শায় মোট ৮টি পঞ্চায়েত। গতবার বামফ্রন্টের দখলে ছিল ৫টি, কংগ্রেসের ১টি, জেএমএমের ১টি ও বামবিরোধী জোট ১টি। এ বার সেখানে বামফ্রন্ট একটি পঞ্চায়েতেই আটকে গিয়েছে। তৃণমূল দখল করেছে ৩টি পঞ্চায়েত। ৪টির ত্রিশঙ্কু।
ফরওয়ার্ড ব্লকের বিধায়ক রয়েছেন জয়পুর বিধানসভা কেন্দ্রে। এই বিধানসভার অন্তর্গত জয়পুরে ৭টি পঞ্চায়েত রয়েছে। গত বার কংগ্রেসের দখলে ছিল ৬টি এবং বামফ্রন্টের ১টি। এ বার কংগ্রেস একটি পঞ্চায়েতেরও দখল পায়নি। তৃণমূল একক ভাবে ৪টি পঞ্চায়েত দখল করে। বামফ্রন্ট একটি ধরে রেখেছে। দু’টির ফল অমীমাংসিত। ওই বিধানসভার অন্তর্গত ঝালদা ২ ব্লকও কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত ছিল। সেখানে ৯টি পঞ্চায়েতের মধ্যে কংগ্রেসের দখলে ছিল ৬টি, বামফ্রন্টের দখলে ছিল ৩টি। এ বার সেখানে তৃণমূল ১টি, বামফ্রন্ট ১টি ও সাতটি আমীমাংসিত রয়েছে।
রাজ্যের মন্ত্রী তথা পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “গোটা জেলার সঙ্গে জঙ্গলমহলের মানুষও মুখ্যমন্ত্রীর উপর আস্থা রেখে এই রায় দিয়েছেন। আমাদের দায়িত্ব আরও বাড়ল।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.