সম্পূর্ণ ফলের নিরিখে পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যে তৃণমূলের ফল ভাল হলেও উত্তর ২৪ পরগনরা বসিরহাট মহকুমা সেই ফলের গায়ে কিছুটা হলেও কাদা ছিটিয়ে দিয়েছে। শুধু তৃণমূল নয়, এই মহকুমা থেকে এই পঞ্চায়েত নির্বাচনে কার্যত শূন্য হাতে ফিরছে কংগ্রেস। যদিও কিছুটা আশার আলো দেখতে পেয়েছে বামেরা। মহকুমায় মোট গ্রাম পঞ্চায়েতের ফলের নিরিখে পায়ের নীচে অনেকটাই শক্তি জমি খুঁজে পেয়েছে সিপিএম।
সোমবার বিকেল পর্যন্ত গণনার পরে বসিরহাটের ১০টি ব্লকে সিপিএমের অবস্থা তৃণমূল এবং কংগ্রেসের তুলনায় বেশ ভাল। বসিরহাট ১ ও ২ ব্লকে গ্রাম পঞ্চয়েতে ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস। এ বার সেখানে বসিরহাট ১ ব্লকের ৭টি পঞ্চায়েতের মধ্যে গোঠরা ও পিঁফায় এককভাবে ক্ষমতা দখল করেছে সিপিএম। পিঁফায় ১৯টি আসনের মধ্যে বামেদের দখলে গিয়েছে ১১টি। গোঠরায় ২১টি আসনের মধ্যে সিপিএম পেয়েছে ১১টি। ২০০৮ সালে অবশ্য এই ব্লকে ৫টি পঞ্চায়েত দখল করেছিল কংগ্রেস। বসিরহাট ২ ব্লকে ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে কংগ্রেসের দখলে ছিল ৮টি। এ বার সেখানে তাঁদের ভাঁড়ার শূন্য। এই ব্লকে কচুয়া পঞ্চায়েতে সিপিএম পেয়েছে ১১টি, বিবিপুর-বেগমপুর পঞ্চায়েতে ১১টি, রাজেন্দ্রপুরে (সিপিএম ও সিপিআই) ১০টি এবং চাঁপাপুকুর পঞ্চায়েতে ১৩টি আসন পেয়ে ওই পঞ্চায়েতগুলি দখল করেছে বামেরা। খোলাপোতায় ৯টি আসন এবং ধান্যকুড়িয়ায় ৮টি আসন পেয়ে ওই পঞ্চায়েত দু’টি দখল করেছে তৃণমূল। বাকি দু’টি আসন ত্রিশঙ্কু হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে আসন সংখ্যার নিরিখে কোথাও এগিয়ে রয়েছে সিপিএম, কোথাও তৃণমূল। বস্তুত, কংগ্রেস প্রায় অদৃশ্য। |
মহকুমায় কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত বাদুড়িয়াতেও পিছিয়ে পড়েছে তারা। এই ব্লকে সিপিএম একাই দখল করেছে ৭টি পঞ্চায়েত। তৃণমূল পেয়েছে ১টি এবং কংগ্রেস ১টি। ৫টিতে ত্রিশঙ্কু অবস্থা।
মহকুমা প্রশাসন সূত্রের খবর, স্বরূপনগর গ্রাম পঞ্চায়েতটি ছিল কংগ্রেস ও তৃণমূল জোটের হাতে। এ বার সেটি পেয়েছে সিপিএম। ওই পঞ্চায়েতে ১০টি আসনের মধ্যে সিপিএম একাই পেয়েছে ৭টি আসন। বাকি তিনটি পেয়েছে তৃণমূল। হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকে ৯টি পঞ্চায়েতের মধ্যে সিপিএম পেয়েছে ৪টি। তৃণমূল ৩টি। বাকি দু’টি সিপিএম এবং তৃণমূলের মধ্যে টাই হয়ে গিয়েছে। এখানেও অদৃশ্য কংগ্রেস। সিপিএমের শক্ত ঘাঁটি হাড়োয়া ব্লকে অবশ্য এ বার খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি তারা। এখানে ৮টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৭টি দখল করেছে তৃণমূল। একটি পেয়েছে সিপিএম। মিনাখাঁয় ৮টি পঞ্চায়েতের মধ্যে সিপিএম ২টি এবং তৃণমূল পেয়েছে ৩টি। তিনটি ত্রিশঙ্কু।
সন্দেখখালি-১ ব্লকের ৮টডি পঞ্চায়েতের মধ্যে তৃণমূল ৬টি এবং সিপিএম ২টি দখল করেছে। সন্দেশখালি-২ ব্লকে তৃণমূল ৩টি এবং সিপিএম ৪টি পঞ্চায়েত দখল করেছে। একটি টাই হয়েছে।
জেলার অন্যতম নজরকাড়া এলাকা তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদক ও রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেবের এলাকা হাসনাবাদ ব্লকে তৃণমূলকে কিছুটা পর্যুদস্ত করেছে গৌতমবাবুর দল। ৯টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৫টি দখল করেছে সিপিএম। তৃমমূল পেয়েছে ৩টি। একটি টাই হয়েছে।
মহকুমায় দলের এই সাফল্য স্বাভাবিকভাবেই মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছে বামেদের। অন্যদিকে কংগ্রেস একেবারেই হতাশ। দলের এমন অবস্থা হল কেন জানতে চাওয়া হলে প্রদেশ কংগ্রেসের সহ-সভাপতি অসিত মজুমদার বলেন, “আসলে ভোট কাটাকুটিতে এই হাল। যার সুবিধা পেয়ে গিয়েছে সিপিএম। তার উপর তৃণমূলের সন্ত্রাসের কাছে আমাদের দলের প্রার্থীরা এঁটে উঠতে পারেননি।” তবে একই সঙ্গে মহকুমায় তৃণমূলের ফল ভাল না হওয়া নিয়ে তাঁর কটাক্ষ, “জোট ভাঙায় যে আখেরে ওদের লোকসান হয়েছে তা ওরা (তৃণমূল) এখন হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছে।”
মহকুমায় দল ভাল করায় সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য নিরঞ্জন সাহা বলেন, “আমরা নিজেদের ভুল শুধরে মানুষকে বোঝাতে চেষ্টা করেছিলাম যে গ্রামের মানুষের উন্নতি করতে হলে সিপিএমকে চাই। আমাদের সৌভাগ্য মানুষ তা বুঝতে পারছেন। তৃণমূলের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মানুষ যে সিপিএমের প্রতি ভরসা রাখছেন সে জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।”
মহকুমায় দলের ফল যে আশানুরূপ হয়নি তা মানতে নারাজ তৃণমূলের রাজ্য পঞ্চায়েত সেলের আহ্বায়ক নারায়ণ গোস্বামী। তিনি বলেন, “বাদুড়িয়া, স্বরূপনগর এবং বসিরহাট ১ ও ২ ব্লকে কংগ্রেস নিশ্চিহ্ন। মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের ডাকে সাড়া দিয়েছে বলেই আমরা বসিরহাটের দু’টি ব্লকে ৮৫টি আসনে জয়ী হয়েছি।”
|
“বাদুড়িয়া, স্বরূপনগর এবং বসিরহাট ১ ও ২ ব্লকে কংগ্রেস নিশ্চিহ্ন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের ডাকে মানুষ সাড়া দিয়েছে বলেই বসিরহাটের দু’টি ব্লকে ৮৫টি আসনে জয়ী হয়েছি।”
নারায়ণ গোস্বামী
(তৃণমূলের রাজ্য পঞ্চায়েত সেলের আহ্বায়ক) |
“ভোট কাটাকুটির সুবিধা পেয়েছে সিপিএম। তার উপর তৃণমূলের সন্ত্রাসের কাছে আমাদের দলের প্রার্থীরা এঁটে উঠতে পারেননি। তবে জোট ভেঙে যে ওদের লোকসান হয়েছে তা ওরা (তৃণমূল) বুঝতে পারছে।”
অসিত মজুমদার
(প্রদেশ কংগ্রেসের সহ-সভাপতি) |
“আমরা নিজেদের ভুল শুধরে মানুষকে বোঝাতে চেষ্টা করেছিলাম যে গ্রামের মানুষের উন্নতি করতে হলে সিপিএমকে চাই। আমাদের সৌভাগ্য মানুষ তা বুঝতে পারছেন।”
নিরঞ্জন সাহা
(সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য) |
|