গ্রামের ছাত্রীকে গণধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে সরব হয়েছে বারাসতের কামদুনি। কিন্তু পথে নামায় নানা ধরনের হুমকিতে সন্ত্রস্ত তাঁরাও। আদালতে আর্জি এবং প্রশাসনে অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও সেই হুমকি বন্ধ হয়নি। নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও এলাকায় থাকছে না নিরাপত্তারক্ষী। এই অবস্থায় আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটছে কামদুনির প্রতিবাদীদের। তাঁদের প্রতিনিধি হিসেবে সোমবার রাজ্য মানবাধিকার কমিশনে হাজির হয়ে এ কথাই জানালেন মৌসুমী-টুম্পা কয়ালেরা।
ধর্ষণ-খুনের ওই ঘটনার পরে বাসিন্দাদের, বিশেষত গ্রামের মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথা তো জানানো হয়েছেই। সেই সঙ্গে এলাকার রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য সমস্যার কথাও কমিশনের সদস্যদের জানিয়েছেন কামদুনির প্রতিনিধিরা। তাঁদের অভিযোগ ও আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব এবং পরিবহণ দফতরের সচিবকে আগামী ৫ অগস্ট ডেকে পাঠানো হয়েছে কমিশনে। |
৭ জুন কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে কামদুনিতে আক্রান্ত হন এক কলেজছাত্রী। পরে তাঁর বিধ্বস্ত দেহ মেলে পাঁচিল ঘেরা একটি জায়গায়। দুষ্কৃতীরা তাঁকে ধর্ষণ ও হত্যা করে ওখানে ফেলে পালিয়ে গিয়েছিল। পরে কয়েক জন ধরা পড়ে। এক অভিযুক্ত এখনও ফেরার। সেই ঘটনার পরে প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে কামদুনি। দুষ্কৃতীদের চরম শাস্তি চেয়ে দিল্লিতে রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়েও দরবার করেছেন ওই গ্রামের মানুষ। কিন্তু তাঁরাই পড়েছেন নানা ধরনের প্রত্যক্ষ ও প্রচ্ছন্ন হুমকির মুখে। এই প্রেক্ষিতেই এ দিন বেলা পৌনে ১২টা নাগাদ ভবানী ভবনে কমিশনের দফতরে হাজির হন মৌসুমী-টুম্পা। সঙ্গে ছিলেন নিহত ছাত্রীর ভাই, টুম্পার মা, মৌসুমীর স্বামী এবং গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ মুখোপাধ্যায়।
বেলা ১টা নাগাদ এক-এক করে কামদুনির প্রতিনিধিদের বক্তব্য শোনেন কমিশনের সদস্যেরা। কমিশন সূত্রের খবর, এ দিনের শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের চেয়ারম্যান, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়; অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নারায়ণচন্দ্র শীল এবং প্রাক্তন মুখ্যসচিব সৌরীন রায়।
কমিশনের সদস্যদের কাছে কী জানালেন মৌসুমী-টুম্পারা?
কমিশন থেকে বেরিয়ে মৌসুমী বলেন, “প্রায়ই হুমকি পাচ্ছি। পুলিশ পিকেট নেই বললেই চলে। গ্রামের অনেকেই আতঙ্কে রয়েছেন।” প্রদীপবাবুও জানান, স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে তাঁকেও প্রচ্ছন্ন ভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বাসিন্দাদের সঙ্গে প্রতিবাদ-মিছিলে সামিল হওয়ায় প্রশাসনের রক্তচক্ষুর সামনে পড়তে হয়েছে প্রদীপবাবুকে। প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়ার লড়াইয়ে তিনি গ্রামবাসীদের তো বটেই, শিক্ষক সংগঠনকেও পাশে পেয়েছেন। কিন্তু নিত্যদিনের হুমকি বন্ধ হচ্ছে না।
পরে কমিশনের চেয়ারম্যান অশোকবাবু জানান, গ্রামের বিদ্যুৎ, পানীয় জল, শিক্ষা, রাস্তাঘাট নিয়েও অভিযোগ জানিয়েছেন মৌসুমী-টুম্পারা। কমিশনের রেজিস্ট্রার রবীন্দ্রনাথ সামন্ত জানান, পুলিশি নজরদারির অভাবে গ্রামে ফের চোলাই ঠেক গজিয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করেছেন বাসিন্দারা। |