বারাসত আদালতের যে-ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে কামদুনি কাণ্ডের বিচার চলছে, তার বিচারকের বিরুদ্ধে কেউ কোনও অভিযোগ করেননি। মামলাটি অন্য আদালতে সরিয়ে দেওয়ার করার ইচ্ছা প্রকাশ করেননি ওই বিচারকও। আইনি প্রক্রিয়া মেনেই তিনি মামলার কাজ পরিচালনা করছেন। এই অবস্থায় কলেজছাত্রীকে গণধর্ষণ ও খুনের মামলাটি অন্যত্র সরানোর কথা আসছে কেন, বুধবার সেই প্রশ্ন উঠল কলকাতা হাইকোর্টে। প্রশ্ন তুললেন কামদুনির ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য।
৭ জুন কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথে ওই ছাত্রীকে গণধর্ষণ করে হত্যা করে দুষ্কৃতীরা। তার পর থেকেই অভিযুক্তদের চরম শাস্তির দাবিতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ-আন্দোলন করে আসছেন কামদুনিবাসী। তাতে যোগ দিয়েছেন অন্যেরাও। মামলার দিনগুলিতে আদালত চত্বরেও বিক্ষোভ হচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে এ দিন মামলার শুনানির সময় অভিযুক্তদের আইনজীবী ফিরোজ আবু বলেন, কামদুনি মামলা বারাসত আদালত থেকে উত্তর ২৪ পরগনার অন্য যে-কোনও আদালতে সরিয়ে দেওয়া হোক। কারণ, বারাসত আদালতে মামলাটি উঠলেই বিক্ষোভ হচ্ছে। নিহত কলেজছাত্রীর ভাই তাতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সেই বিক্ষোভের ভয়েই অভিযুক্তদের হয়ে কোনও আইনজীবী আদালতে দাঁড়াতে সাহস পাচ্ছেন না।
বিক্ষোভের ভয়ে মামলা অন্যত্র পাঠানোর কোনও যুক্তি থাকতে পারে না বলে সওয়াল করেন বিকাশবাবু। তাঁর বক্তব্য, বিক্ষোভ একটা গণতান্ত্রিক অধিকার। এই ধরনের একটা সামাজিক আলোড়ন তোলা ঘটনার পরে ক্ষোভ-বিক্ষোভ তো স্বাভাবিক ঘটনা। সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারি ধরা পড়ার পরে বিক্ষোভ হয়েছে আদালতেও। দিল্লিতে রাতের বাসে ছাত্রীকে গণধর্ষণ করে হত্যার পরে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভ হলে সরকার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে, এটাই নিয়ম। তার জন্য আদালত পরিবর্তন করতে হবে কেন?
অভিযুক্তদের আইনজীবী আবু এই সময় বলেন, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এই মামলায় অভিযুক্তদের কোনও আইনজীবী দেওয়া হচ্ছে না। সংবিধানের ২২ ধারার ১ উপধারা অনুযায়ী যে-কোনও মামলায় অভিযুক্তেরা অবশ্যই আইনজীবী পেতে পারে। রাজ্য সরকার কিন্তু এ ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের জন্য কৌঁসুলির ব্যবস্থা করেনি। রাজ্য লিগাল এড থেকেও তাদের জন্য কোনও আইনি সহায়তার বন্দোবস্ত করা হয়নি।
বিচারপতি অসীম রায় জানতে চান, যে-সব বিচারাধীন বন্দি জেলে থাকেন, তাঁদের কোনও উপার্জন থাকে না। তখন তাঁরা কি আদালতে কোনও আইনি সহায়তা পান?
আবু বলেন, মামলা হলেই বিচার-পূর্ববর্তী সময়ে এবং বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন সব পক্ষেই আইনজীবী থাকতে হবে। আইনজীবীর ব্যবস্থা করতে হবে অভিযুক্তদের জন্যও। এটা সুপ্রিম কোর্টের রায়।
কামদুনি মামলা যাতে দ্রুত শেষ হয়, সেই বিষয়ে নির্দেশ দেওয়ার আর্জি জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন ওই ঘটনার কাণ্ডের তদন্তকারী অফিসার। দ্রুত বিচার চেয়ে কেন পৃথক মামলা করা হল, আগেই সেই প্রশ্ন তুলেছেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কৌঁসুলি বিকাশবাবু। তাঁর বক্তব্য, মামলায় দেরি হচ্ছে বলে রাজ্য সরকারের তরফে কেউ কোনও বিবৃতি দেয়নি। বিচারের দেরির কোনও প্রমাণও নেই। তা হলে তদন্তকারী অফিসারের এই মামলা কেন? এ দিন ওই মামলার শুনানি শেষ হয়েছে। বিচারপতি অসীম রায় অবশ্য এ দিন রায় দেননি। বিচারপতি জানিয়ে দেন, তিনি শুধু দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি সংক্রান্ত আবেদন এবং অন্য আদালতে মামলা সরানোর আর্জি নিয়েই রায় দেবেন। তবে কবে সেই রায় হবে, উচ্চ আদালত এ দিন তা জানায়নি। |