কামদুনির ধর্ষণ-হত্যায় অভিযুক্তদের বিচার প্রক্রিয়া এক মাসের মধ্যে সম্পন্ন হয়ে যাবে বলে ওই গ্রামে গিয়ে ঘোষণা করে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৭ জুলাই সেই তিরিশ দিনের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। আর মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টে সরকারি কৌঁসুলিই জানিয়ে দিলেন, এই মামলার বিচারের প্রক্রিয়া আগামী দু’মাসের মধ্যেও শেষ হবে না। বিচার সেরে কবে যে দোষীদের সাজা দেওয়া যাবে, তার কোনও দিশা দেখাতে পারেননি সরকারি কৌঁসুলি।
অভিযুক্তদের কৌঁসুলি আবু ফিরোজ এ দিন হাইকোর্টে সওয়াল করতে গিয়ে বলেন, ধর্ষণের মামলার ক্ষেত্রে চার্জশিট জমা দেওয়ার দু’মাসের মধ্যে বিচার শেষ করতে হয়। ১০ জুলাই সিআইডি অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দিয়েছিল বারাসতের ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে। তাই ১০ সেপ্টেম্বর বিচার শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। এ কথা শুনে বিচারপতি অসীম রায় রাজ্যের কৌঁসুলি (পিপি) মনজিৎ সিংহকে জিজ্ঞাসা করেন, “দু’মাসের মধ্যে কি এর বিচার সম্ভব?” পিপি জবাব দেন, “সম্ভব নয়। বিলম্ব হবে।”
প্রসঙ্গত, কামদুনি-কাণ্ডে অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত রফিক ইসলামকে সিআইডি গ্রেফতার করতে পারেনি। তার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। রফিককে গ্রেফতার বা তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে সোমবার সিআইডি-কে এক মাস সময় বরাদ্দ করেছেন বারাসতের তৃতীয় ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারক অর্পণ চট্টোপাধ্যায়। আগামী ২৩ অগস্ট মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। ইতিমধ্যে দ্রুত নিষ্পত্তির স্বার্থে মামলাটি বারাসতের তৃতীয় ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট থেকে সরানোর জন্য হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন সিআইডি-র তদন্তকারী অফিসার (আইও)।
এ দিন বিচারপতি রায়ের এজলাসে তারই শুনানি ছিল। সওয়ালে অভিযুক্তদের কৌঁসুলি আর্জি জানান, মামলাটি কোনও মহিলা বিচারকের ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে স্থানান্তরিত করা হোক। “ঘটনার গুরুত্বের নিরিখে এই জাতীয় গণধর্ষণ ও হত্যার বিচার মহিলা বিচারকের এজলাসে হওয়া প্রয়োজন। কারণ, সাক্ষীদের মধ্যে অনেক মহিলা থাকবেন। মহিলা বিচারকের কাছে তাঁরা খোলাখুলি নিজেদের কথা বলতে পারবেন।” যুক্তি দেন আবু ফিরোজ।
বিচারপতি রায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, বারাসতের ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টগুলোর মধ্যে একটিতেই বিচারক মহিলা। বিচারপতি বলেন, ওই কোর্টে মামলার চাপ কতটা, তা খতিয়ে দেখে তিনি সিদ্ধান্ত জানাবেন। তবে বিচারপতি এ-ও স্মরণ করিয়ে দেন যে, সিআইডি এখনও রফিক ইসলামকে গ্রেফতার করতে পারেনি। “তা হলে কি এক জন অভিযু্ুক্ত ছাড়াই বিচার শুরু হয়ে যাবে?” প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি। ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২৯৯ ধারার উল্লেখ করে তাঁর মন্তব্য, “অভিযুক্ত পলাতক বলে দায় এড়ানো যায় না। চল্লিশ বছর পরে গ্রেফতার হলেও তাঁর বিচার করতে হবে। তাই তত দিন সাক্ষ্য-প্রমাণ সব রাখতে হবে। দ্রুত বিচারের ক্ষেত্রে এই নিয়মটিও অন্যতম অন্তরায়।”
এ দিকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কৌঁসুলি বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এ দিন আদালতে একটি নীতিগত প্রশ্ন তুলেছেন। কামদুনি-মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির আর্জি জানিয়ে আইও আদৌ মামলা করতে পারেন কি না, তা তিনি জানতে চেয়েছেন আদালতের কাছে। “মামলায় দেরি হচ্ছে বলে রাজ্য সরকারের তরফে কেউ কোথাও কোনও বিবৃতি দেয়নি। বিচারে বিলম্ব হচ্ছে, তেমন প্রমাণও নেই। তা হলে তদন্তকারী অফিসার এমন একটা আর্জি জানিয়ে হাইকোর্টে মামলা করতে গেলেন কেন? কার নির্দেশে করলেন? আড়ালে কে আছে?” প্রশ্ন বিকাশবাবুর। তাঁর মতে, দ্রুত বিচার করলেই শুধু হবে না, দেখতে হবে, মামলা ঠিকঠাক হচ্ছে কি না। বিকাশবাবু মন্তব্য করেন, “হাইকোর্ট নিযুক্ত বিশেষ দলকে(স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগশন টিম) দিয়ে ঘটনাটির তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে জনস্বার্থ-মামলা হয়েছে। হাইকোর্ট নির্দেশ দিলে অন্য কেউ তদন্ত করতে পারে। তা এড়াতেই কি দ্রুত নিষ্পত্তি চেয়েছেন তদন্তকারী অফিসার?”
আজ বুধবার ফের শুনানি বিচারপতি রায়ের এজলাসে।
|