পুলিশে-পুলিশে ছয়লাপ। কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের ভারী বুটের শব্দ। কারও দাদাগিরি নেই। নেই চোখ রাঙানি, বোমা-গুলির আওয়াজ। ভোটারেরা বলছেন, “এই ব্যবস্থাই যদি ভোটের দিন থাকত, তা হলে এতটা উত্তেজনা ছড়াত না। ভোটও বাতিল হত না।”
মঙ্গলবার পুনর্নির্বাচন হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার ১১টি বুথে। যার মধ্যে আছে আমডাঙার টেঙাটেঙি, হিঙ্গলগঞ্জের ছ’টি বুথও। তৃতীয় দফা ভোটের আগের দিন (১৮ জুলাই) থেকে তেতে ওঠে আমডাঙার বইচগাছি গ্রাম। কয়েকশো বাড়িতে ভাঙচুর, আগুন লাগানো হয়। সিপিএম-তৃণমূলের সংঘর্ষের জেরে জখম হন কয়েকজন পুলিশ কর্মী। বোমা পড়ে নির্বাচনী পর্যবেক্ষকের গাড়ির সামনে। একটি বুথে ভাঙচুর চালায় উত্তেজিত জনতা। উত্তর ২৪ পরগনায় ৭৩ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী ভোটের আগে থেকেই মজুত ছিল। কিন্তু তারপরেও আমডাঙা, হিঙ্গলগঞ্জ-সহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন হয়নি বলে অভিযোগ। |
ভোটের দিন বোমা-গুলির লড়াই শুরু হয় বইচগাছি লাগোয়া টেঙাটেঙিতে। বোমার আঘাতে মারা যান সিপিএম সমর্থক মাদারবক্স আলি চৌধুরী। ফের বহু বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, লুঠপাট চলে।
এ দিন অবশ্য এখানে ভোট মেটে নির্বিঘ্নে। স্থানীয় বাসিন্দা রাবিয়া বিবির মন্তব্য, “আগে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক থাকলে এত মানুষের সর্বনাশ হত না।” নিহত মাদারবক্সের পরিবার অবশ্য এ দিন ভোট দেননি। তাঁর পুত্রবধূ আজমিরা বিবি জানান, ভোটে তাঁদের আর উৎসাহ নেই।
হিঙ্গলগঞ্জের সান্ডেলেরবিল পঞ্চায়েতের বাঁকড়া এলাকার ছ’টি বুথে ফের ভোট গ্রহণ হয়েছে এ দিন। আগের বার তৃণমূলের বিরুদ্ধে এখানে ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ তোলে সিপিএম। গোলমালের পরে বাহিনীর জওয়ানেরা লাঠি চালালে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়। মাঝপথেই বন্ধ হয় ভোটগ্রহণ। পর দিন সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষে জখম হন ১৮ জন। শনিবার থেকেই গ্রাম ছাড়েন অনেকে। সকলেই তাঁদের কর্মী-সমর্থক বলে দাবি সিপিএমের। এ দিন ঘরছাড়ারা বাঁকড়ার পাশের গ্রাম আমবেড়িয়ায় জড়ো হন। সেখান থেকে কড়া নিরাপত্তায় তাঁদের বাসে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় ভোটকেন্দ্র পর্যন্ত। তাপস মৃধা, সমীর মণ্ডল, শিবনাথ মণ্ডল, সুভাষ মৃধারা বলেন, “কেন্দ্রীয় বাহিনী শুরু থেকেই সতর্ক থাকত, তা হলে এত বড় গণ্ডগোল হতই না।”
জেলা প্রশাসনের এক কর্তার বক্তব্য, পুনর্নির্বাচনে নিরাপত্তা অনেক বেশি দেওয়া সম্ভব। কারণ, বুথের সংখ্যা অনেক কম।
কিন্তু ভোটের ফল বেরনোর পরে বাহিনী ফিরে গেলে কী হবে, তা ভেবে এখনই ভয়ে কাঁপছেন সীমান্ত এলাকার মানুষেরা। যে দুশ্চিন্তার দাওয়াই নেই রাজনৈতিক দলগুলির কাছেও।
|