বারাসতের কামদুনিতে কলেজছাত্রীকে গণধর্ষণ ও খুনের মামলার বিচার এক মাসের মধ্যে হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু ঘটনার দেড় মাসের মাথায় মামলাটির বিচার প্রক্রিয়া পিছিয়ে গেল আরও এক মাস! পুলিশ এক অভিযুক্তকে ধরতে না-পারায় এই বিলম্ব।
গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনাটি ঘটেছিল ৭ জুন। ওই মামলায় সিআইডি-র পেশ করা চার্জশিটে যে-সব অভিযুক্তের নাম আছে, তাদের মধ্যে রফিক ইসলাম নামে এক জন এখনও ধরা পড়েনি। তার নামে ইতিমধ্যেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। তাকে গ্রেফতার অথবা তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার জন্যই ওই এক মাসের সময়সীমা দেওয়া হয়েছে বলে সোমবার আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে। বারাসত আদালতের তৃতীয় ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারক অর্পণ চট্টোপাধ্যায় মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন ২৩ অগস্ট।
এ দিন সকালে অভিযুক্ত আনসার আলি-সহ ধৃত আট জনকে কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় দমদম সেন্ট্রাল জেল থেকে বারাসতে আদালতে হাজির করানো হয়। আদালতে ছিলেন ওই কলেজছাত্রীর দাদা এবং কামদুনির আরও কয়েক জন। মামলা শুরু হতেই সরকার পক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি জানিয়ে দেন, ফেরার অভিযুক্ত রফিকের নামে ইতিমধ্যে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তার পরেই ওই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন জানিয়ে দেন বিচারক।
পরে আইনজীবীরা জানান, আসামি ফেরার থাকলে তাকে ধরার জন্য সময় দেওয়া হয়। ওই সময়ের মধ্যে তাকে ধরতে না-পারলে বা অভিযুক্ত আদালতে আত্মসমর্পণ না-করলে তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। এই প্রক্রিয়ার জন্যই এ দিন এক মাসের সময়সীমা দিয়েছে আদালত। পরে আসামি পক্ষের আইনজীবী স্বপন সেনগুপ্ত আদালতে একটি আবেদন পেশ করে জানান, অভিযুক্তেরা যে-গোপন জবানবন্দি দিয়েছে, পুলিশ তা জোর করে বলিয়ে নিয়েছে।
বিচার প্রক্রিয়া ফের এক মাস পিছিয়ে যাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন নিহতের পরিবার ও কামদুনির বাসিন্দারা। ওই এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী এক মাসের মধ্যে দোষীদের শাস্তি দেওয়ার কথা বলেছিলেন। ঘটনার পরে ইতিমধ্যেই তো দেড় মাস পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর পুলিশ এখনও এক অভিযুক্তকে গ্রেফতারই করতে পারল না। এর ফলে মামলাটি আরও এক মাস পিছিয়ে গেল।” স্পষ্টতই ক্ষুব্ধ নিহতের দাদা বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে আমার আর কিছু বলার নেই!’’
এর মধ্যে মামলাটি বারাসতের আদালত থেকে অন্য আদালতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অভিযুক্তদের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে আবেদন জানানো হয়েছে। সেই আবেদনে বলা হয়েছে, বারাসতে অভিযুক্তদের পক্ষে কোনও আইনজীবী দেওয়া যাচ্ছে না। অভিযুক্তদের নিরাপত্তাও নেই।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক উমাপদ চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘বারাসত আদালতে আসামিদের পক্ষে আইনজীবী দাঁড়িয়েছেন। তবু হাইকোর্টে মামলা করে বলা হয়েছে, বারাসত আদালতে তালিবানি রাজ চলছে। আসামিদের নিরাপত্তা নেই। আমরা এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’’
কেমন আছে কামদুনি?
জানতে চায় রাজ্য মানবাধিকার কমিশনও। একটি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কামদুনির পরিস্থিতি বিস্তারিত ভাবে জানার জন্য মৌসুমী কয়াল, টুম্পা কয়াল, শিক্ষক প্রদীপ মুখোপাধ্যায় এবং ধর্ষিত ও নিহতের দাদাকে ডেকে পাঠিয়েছে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। কমিশন সূত্রে এ দিন বলা হয়েছে, রাজ্য মহিলা কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারপার্সন মালিনী ভট্টাচার্য অভিযোগ করেন, কমিশনের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও কামদুনিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়নি। তাঁর অভিযোগ পাওয়ার পরেই কমিশন কামদুনির বাসিন্দাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলে বিষয়টি জানবে বলে ঠিক হয়। কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২৯ জুলাই মৌসুমী-টুম্পা-প্রদীপদের কমিশনে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে।
|