বারাসত আদালত থেকে কামদুনি মামলা সরিয়ে নেওয়ার আবেদন জানাল ওই ঘটনায় অভিযুক্তরা। রাজ্য সরকার তাদের এই আবেদনে সম্মতি জানিয়েছে।
শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে অভিযুক্তদের আইনজীবী ফিরোজ আবু বলেন, বারাসত কোর্টে অভিযুক্তদের পক্ষে কোনও আইনজীবী দাঁড়াতে চাইছেন না। প্রতিদিন আদালতে বিক্ষোভ হচ্ছে। অভিযুক্তরা এতে ভয় পাচ্ছে। তাই ওই মামলা রাজ্যের অন্য যে কোনও আদালতে সরিয়ে নেওয়া হোক। বিচারপতি তাঁকে লিখিত ভাবে এই আবেদন জানাতে বলেন।
বারাসত ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে কামদুনি-মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি চেয়ে গত সোমবার হাইকোর্টে মামলা করেছিল রাজ্য সরকার। তবে মামলাটি নিয়ে বৃহস্পতিবার কিছুটা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। বিচারপতি অসীম রায়ের কাছে জমা দেওয়া আবেদনে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির বদলে ‘ভুল করে’ খারিজ করে দেওয়ার কথা লিখে ফেলা হয়েছিল। বিচারপতি এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করলে সরকারি আইনজীবী জানান, লিখতে গিয়ে ভুল হয়ে গিয়েছে। এ দিন একটি অতিরিক্ত আবেদনপত্র জমা দিয়ে মামলা খারিজের অনুচ্ছেদ দু’টি বাদ দেওয়ার আবেদন জানান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মনোজিৎ সিংহ। তিনি বলেন, এই ভুলের দায়িত্ব তাঁর। বিচারপতি অবশ্য বলেন, এই বক্তব্যকে তিনি যুক্তিগ্রাহ্য মনে করেন না।
এর পরেই অভিযুক্তদের আইনজীবী বারাসত কোর্ট থেকে মামলাটি সরিয়ে নেওয়ার আর্জি জানান। পাবলিক প্রসিকিউটর তাঁকে সমর্থন করে বলেন, মামলা যদি অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়, তা হলে সাক্ষীদের সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে দেবে সরকার।
কিন্তু অভিযুক্তদের এই আবেদনে আপত্তি তোলে খুন হয়ে যাওয়া ছাত্রীর পরিবার। তাদের আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, মামলা অন্যত্র সরলে হলে সাক্ষীদের কামদুনি থেকে অন্য আদালতে যেতে হবে। এমনিতেই তাঁরা আতঙ্কে রয়েছেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য গ্রামে যে ক’জন পুলিশ পাহারায় ছিল, তা এখন আর নেই। আইনজীবী অভিযোগ করেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও গ্রামের মানুষদের হুমকি দিচ্ছে দুষ্কৃতীরা। তাঁর বক্তব্য, বারাসত কোর্টের পরিস্থিতি এমন প্রতিকূল নয় যে ওই আদালতে মামলার বিচার করা যাবে না।
রাজ্য সরকার যে দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টে মামলা করেছে, তাতেও আপত্তি তোলেন জয়ন্তবাবু। তিনি বলেন, দ্রুত বিচার সকলেই চান। কিন্তু এখনও ওই মামলার শুনানি শুরু হয়নি, চার্জ গঠন হয়নি, তদন্তের কাজও শেষ হয়নি। তিনি অভিযোগ করেন, ধৃতদের মধ্যে এক জন, সফিউল গোপন জবানবন্দি দিয়েছে। সেখানে সে সমস্ত ঘটনার দায়ভার নিজের কাঁধে নিয়েছে। এ সবই হল পুলিশের পরামর্শে অন্যতম অভিযুক্ত আনসারকে বাঁচানোর চেষ্টা। জয়ন্তবাবুর অভিযোগ, ওই ঘটনার তদন্ত যে সঠিক ভাবে হয়নি, চার্জশিটেই তা প্রতিফলিত হয়েছে। বলা হয়েছে, ৫৪ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এঁদের মধ্যে গ্রামের লোক ১৩ জন, পুলিশের লোক ১৪ জন। অবশিষ্টরা অন্য গ্রামের বা অন্য এলাকার লোক।
বিচারপতি বলেন, সাক্ষী কত জন এটা বড় কথা নয়। বড় কথা হচ্ছে বিচারের দ্রুততা। হাইকোর্ট বিচার বা তদন্ত নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে পারে না। তাতে নিম্ন আদালতের প্রতি প্রভাব বিস্তার করা হবে।
সোমবার এই মামলার ফের শুনানি হবে।
|