কামদুনি মামলাই খারিজের
আর্জি, বিচারপতি অবাক
যে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি চেয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্য সরকার, আবেদনপত্রে সেই মামলাটাই খারিজ করে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছে তারা! কামদুনি কাণ্ড নিয়ে রাজ্যের এমন বিচিত্র আবেদন হাতে পেয়ে বৃহস্পতিবার হতবাক হয়ে যান বিচারপতি অসীম রায়। কেন এমনটা হল, বিচারপতির প্রশ্নের জবাবে তার সদুত্তর দিতে পারেননি সরকার পক্ষের কৌঁসুলি। এই ঘটনায় আদালতে আরও এক বার সরকারের মুখ পুড়ল বলেই মনে করছেন রাজ্য প্রশাসনের একাংশ।
কামদুনিতে কলেজ ছাত্রীকে গণধর্ষণ করে খুনের মূল মামলাটি চলছে বারাসতের তৃতীয় ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে। মামলার শুনানি এখনও শুরু হয়নি। এই অবস্থায় গত সোমবার আচমকাই তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি-র তরফে হাইকোর্টে আবেদন পেশ করে বলা হয়, নিম্ন আদালতে যাতে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি হয় সে জন্য নির্দেশ দেওয়া হোক। সেই আবেদনে সই করেন সিআইডি-র তদন্তকারী অফিসারেরা।
যে মামলার পূর্ণাঙ্গ চার্জশিট এখনও জমা দিতে পারেনি সিআইডি, পাওয়া যায়নি ফরেন্সিক রিপোর্ট, সেই মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি চেয়ে এমন আবেদন দেখে সে দিনই অবাক হয়ে গিয়েছিল আইনজীবী মহল। অনেকেই মনে করছিলেন, যে হেতু সোমবারই রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়েছেন কামদুনির বাসিন্দারা, সিবিআই তদন্তের দাবি পেশ করেছেন, তাই সিবিআই-কে ঠেকাতেই তড়িঘড়ি হাইকোর্টে গিয়েছে রাজ্য।
কিন্তু সেই আর্জিও যে যথেষ্ট মন দিয়ে লেখা হয়নি, সেটা স্পষ্ট হয়ে যায় বৃহস্পতিবার। এ দিন শুনানির শুরুতে রাজ্যের আবেদন পড়ে অবাক হয়ে যান বিচারপতি। মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি চেয়ে পেশ করা আবেদনপত্রের পঞ্চম ও ষষ্ঠ অনুচ্ছেদে রাজ্য বলেছে, গণধর্ষণ ও হত্যার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ের মামলাটি খারিজ করে দেওয়া হোক। বিচারপতি রাজ্যের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মনোজিৎ সিংহকে প্রশ্ন করেন, আবেদনে কী লেখা হয়েছে, তা কি তিনি জানেন? তার পর নিজেই বলেন, রাজ্য দ্রুত মামলার নিষ্পত্তি চেয়ে মামলা করে আবেদনে বলছে, মূল মামলাটিই খারিজ করে দিতে!
বিচারপতির কথা শুনে পিপি আমতা আমতা করে বলেন, “ওটা ভুল হয়ে গিয়েছে। অনুগ্রহ করে অনুচ্ছেদ দু’টি আবেদন থেকে বাদ দিয়ে দিন।” বিচারপতি বলেন, “সবটাই যান্ত্রিক ভাবে করতে গেলে এমনই হয়।” কাজে গাফিলতির নজির হিসেবে ওই অনুচ্ছেদ দু’টি রাখা প্রয়োজন বলে মন্তব্য তাঁর।
সরকারের দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির আর্জি নিয়েও এ দিন প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি। তিনি বলেন, ‘জাজমেন্ট হারিড, জাজমেন্ট বেরিড’। অর্থাৎ, দ্রুত বিচার করতে গেলে অনেক সময় সুবিচার পাওয়া যায় না।
পাশাপাশি তিনি জানতে চান, সরকারের কি নিম্ন আদালতের উপর আস্থা নেই? বিচার তো চলছে? তদন্তেরও তো কিছু কাজ বাকি রয়েছে? তা হলে কেন দ্রুত নিষ্পত্তির নির্দেশ চাওয়া হচ্ছে? এই প্রশ্নেরও যথাযথ উত্তর দিতে পারেননি পিপি।
কামদুনি কাণ্ডে সিআইডি যে চার্জশিট জমা দিয়েছে, তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন বারাসত কোর্টের বিচারক। চার্জশিটে একাধিক অসঙ্গতির প্রসঙ্গ তুলে সিআইডি-কে ভর্ৎসনা করে তিনি চার্জশিট তৈরির সাধারণ নিয়ম এবং সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা মানা হয়েছে কিনা, সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। এ দিন বিচারপতি অসীম রায় পিপি-র কাছে জানতে চান, চার্জশিটে কী অসঙ্গতি ছিল? পিপি জবাব দিতে পারেননি। বিচারপতি আরও কয়েকটি প্রশ্ন করেন পিপি-কে। সেগুলিরও সঠিক জবাব না পেয়ে মন্তব্য করেন, “আপনি বোধহয় প্রস্তুত নন।” কামদুনি-কাণ্ডে ধৃতদের আইনজীবী ফিরোজ আবু এ দিন আদালতে বলেন, তিনি বারাসত আদালতে মক্কেলদের হয়ে দাঁড়াতেই পারছেন না। বিচারপতি বলেন, “ধৃতদের আইনজীবী নেই, এটা হতে পারে না। সুবিচারের জন্য অভিযুক্তদের আইনজীবীর প্রয়োজন।” কেন তিনি দাঁড়াতে পারছেন না, ফিরোজকে তা লিখিত ভাবে জানাতে বলেন বিচারপতি।
আজ, শুক্রবার এই মামলার ফের শুনানি হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.