নির্লিপ্ত সব দলই
পাচারের টাকায় হচ্ছে ভোট, অভিযোগ সীমান্তের গ্রামে
টনা ১ স্বরূপনগরের কৈজুড়িতে বাংলাদেশি পাচারকারীরা ধর্ষণের চেষ্টা করে স্বপ্না সরকারকে। ভোজালির কোপে খুন হন মহিলা।
ঘটনা ২ গাবোরডা সীমান্তের ঘটনা। পাচারকারীদের হামলায় মারা গেলেন সাত্তার সিংহ নামে এক বিএসএফ জওয়ান।
ঘটনা ৩ গাইঘাটার ছোট সেহেনা, বড় সেহেনা গ্রামের বাসিন্দারা বাধা দিয়েছিলেন গরু পাচারে। বাংলাদেশি পাচারকারীরা একের পর এক বাড়িতে ভাঙচুর চালায়।
উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্তবর্তী দুই মহকুমা বসিরহাট ও বনগাঁয় এমন উদাহরণের সংখ্যা ভুরি ভুরি। আতঙ্ক নিত্যসঙ্গী সীমান্ত এলাকার মানুষের। বিশেষত বসিরহাটের সীমান্তবর্তী এলাকা কৈজুড়ি, গাবোরডা, হাকিমপুরের মতো এলাকায় রাত নামলেই বাড়ির বাইরে বেরোতে সাহস করেন না কেউ। অনেকে বাংলাদেশি পাচারকারীদের দৌরাত্ম্যে ভিটে-মাটি বেচে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হন।
অথচ সীমান্তবর্তী এলাকায় পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে পাচার-সমস্যা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলি আশ্চর্য রকমের নীরব। বাসিন্দাদের বক্তব্য, কে প্রতিবাদ করবে? কে-ই বা পাচার বন্ধের প্রতিশ্রুতি দেবে? সব রাজনৈতিক দলেরই প্রচার চলছে পাচারের টাকায়। এলাকাবাসীর একটা বড় অংশও তো জড়িয়েছে পাচারের সঙ্গে। এর বিরুদ্ধে মুখ খোলা মানেই তো ভোটব্যাঙ্কে আঘাত করা!
পাচারের টাকায় কী ভাবে ভাগ বসায় রাজনৈতিক দলগুলি? স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, একাধিক হাত ঘুরে গরু বা অন্য সামগ্রী পাচার হয় বাংলাদেশে। তার মধ্যে মাদক যেমন আছে, আছে গ্রামের মেয়ে-বউরাও। আবার দালাল ধরে ভিসা-পাসপোর্ট ছাড়াই যাতায়াত চলে বাংলাদেশে। সে জন্যও দালালকে কিছু নোট গুনে দিতে হয়। সীমান্তের এক একটি এলাকায় বিভিন্ন ‘রেট’ ধরা থাকে এই সব কাজের জন্য। পুলিশ-বিএসএফ এমনকী প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে চলে অবৈধ কাজকর্ম। সে জন্য লাভের গুড় কিছু কিছু পায় ওই সব দফতরের একাংশ, এমনটাই অভিযোগ সীমান্তবর্তী গ্রামের মানুষজন। তাঁদের আরও দাবি, রাজনীতির কারবারিরাও জানেন সবটাই। আর জেনেও মুখ বুজে থাকার ইনাম মেলে। সেই টাকার কিছুটা যায় পার্টি ফান্ডে। বাকিটা যে যার ক্ষমতা মতো হজম করেন বলে অভিযোগ। যখন যে ক্ষমতায় আসে, তারাই জড়িয়ে পড়ে এই ফাঁদে। যে কারণে কোনও রাজনৈতিক দলই সীমান্তে পাচার বন্ধে কখনও বড়সড় তৎপরতা দেখায় না বলে স্থানীয় মানুষের দাবি। মাঝে মধ্যে পুলিশ-প্রশাসন-বিএসএফ বা রাজনৈতিক দলের হম্বিতম্বি সত্ত্বেও অবৈধ কারবারে রাশ টানতে ব্যর্থ সব পক্ষ। ভোটের মুখে সেই কালো টাকাই ওড়ে রাজনৈতিক প্রচারের কাজে।
পাচার এবং তাকে কেন্দ্র করে আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা সীমান্ত এলাকার মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুললেও ভোটের প্রচারে এই প্রসঙ্গ সযত্নে এড়িয়ে যান রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা। প্রশ্ন তুললে বরং আঙুল তোলেন বিরোধী দলের দিকে। আর দাবি করেন, তাঁদের দল এমন অনৈতিক কাজকর্মকে প্রশ্রয় দেয় না।
ক’দিন আগে বসিরহাটে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা কংগ্রেস সাংসদ দীপা দাশমুন্সি। তাঁর কাছে কংগ্রেসের স্থানীয় নেতারা অভিযোগ জানান, অন্য দলগুলি পাচারের টাকায় দেদার খরচ করছে পঞ্চায়েত ভোটে। বসিরহাটের কংগ্রেস নেতা অসিত মজুমদার বলেন, “পাচার নিয়ে সিপিএম-তৃণমূল সব এক রা। কারণ, পাচারকারীদের অবৈধ টাকাই তো ভোটে খাটছে।”
কী বলছে আর এক বিরোধী দল সিপিএম? বসিরহাটের সিপিএম নেতা নিরঞ্জন সাহা বলেন, “আমরা পাচারের প্রতিবাদ করলেও শাসক দলের একাংশের মদত আছে এতে। কংগ্রেসও পিছিয়ে নেই। ভোটের এত খরচ ওরা সামলাচ্ছে কী করে? টাকার আসল উৎস তো সেই পাচারের কাটমানি। তবে এই সমস্যার সঙ্গে জাতীয় রাজনীতি যুক্ত। স্থানীয় স্তরে সমাধান মেলা মুশকিল।” কিন্তু ২০০৮ সালের আগে তো এই জেলার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলিতে বামেদেরই রমরমা ছিল। তখন কি পাচার রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল কিছু? রাজ্যে নতুন সরকারের আমলে পাচার বেড়েছে, এই বলেই দায় সেরেছেন স্থানীয় বাম নেতারা।
গাইঘাটায় ক’দিন আগে এক সভায় খাদ্যমন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূল পর্যবেক্ষক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক অভিযোগ করেন, গরু পাচারকারীকে পঞ্চায়েতে প্রার্থী করেছে সিপিএম। পাচারের টাকা প্রচারে খরচ হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন তিনি। যদিও তাঁরই দলের আর এক জেলা নেতা তথা গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী ধ্যানেশ নারায়ণ গুহ বলেন, “গরু পাচার একটা আন্তর্জাতিক সমস্যা। সীমান্ত এলাকায় গরিব মানুষ অভাবে পড়েই এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। তাঁদের রুজি-রুটির প্রশ্ন। সে কারণেই আমরা প্রচারে বিষয়টা আনিনি।” পাচার আটকানোর দায় তিনি চাপান বিএসএফ-এর উপরে। বছরের পর বছর ধরে সীমান্তের গ্রামের মানুষ নেতাদের মুখে শুনে এসেছেন এ সব কথা। স্বরূপনগরের স্বপ্না রক্ষিত, কমলা গায়েন বলেই ফেললেন, “কামদুনি তো তবু বিচার চেয়ে দিল্লি গেল। আমরা যাব কার কাছে?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.