|
|
|
|
শোরগোল প্রশাসন ও আইনজীবী মহলে |
কামদুনিকে দ্রুত বিচার দিতে হাইকোর্টে রাজ্য
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
সোমবার রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়ে যখন কামদুনি-কাণ্ডে সিআইডি-তদন্তে অনাস্থা জানিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি জানাচ্ছেন গ্রামের বাসিন্দারা, তখন কলকাতা হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে ওই ঘটনার দ্রুত বিচারের নির্দেশ চাইল রাজ্য সরকার! বারাসতের তৃতীয় ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে কামদুনি মামলার বিচার চলছে। রাজ্য সরকার চায়, ওই মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য নিম্ন আদালতকে নির্দেশ দিক হাইকোর্ট।
আদালতে রাজ্যের এই প্রায় নজিরবিহীন মামলা দায়ের করার খবরে প্রশাসন ও আইনজীবী মহলে শোরগোল পড়ে যায়। আইনজীবীদের একাংশের মতে, রাজ্যের চালানো সিআইডি তদন্ত নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। এখনও পূর্ণাঙ্গ চার্জশিট বা ফরেন্সিক রিপোর্ট জমা পড়েনি। গ্রামবাসীরা সিবিআই তদন্তের দাবিতে রাষ্ট্রপতির দরবারে গিয়েছেন। এই অবস্থায় সিবিআই-কে ঠেকাতেই সরকারের এই সক্রিয়তা বলে মনে করেন তাঁরা। রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা অবশ্য এই মামলার বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় এই নিয়ে কিছু বলতে নারাজ। আইনমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিরক্ত হয়েই বলেন, “আমার দফতর সব মামলা করে না। আমার এখান থেকে অনুমোদনও হয়নি। আমাকে জিজ্ঞাসা করছেন কেন? মামলা যারা করেছে (স্বরাষ্ট্র দফতর), তাদের প্রশ্ন করুন।”
হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে সরকার পক্ষের আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার জানান, রাজ্য চায় কামদুনির মতো স্পর্শকাতর ঘটনার দ্রুত বিচার এবং দোষীদের শাস্তি। সেই কারণে কলকাতা হাইকোর্টের কাছে মামলার দ্রুত নিস্পত্তির নির্দেশ চায় সরকার। বারাসত ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে এই মামলার বিচার যে গতিতে চলছে, তাতে রাজ্যের আস্থা নেই, প্রকারান্তরে সে কথা জানিয়ে রাজদীপবাবুর অভিযোগ, সরকার মনে করছে এই বিচারের কাজ যতটা দ্রুত হওয়া উচিত, তা হচ্ছে না। বিচারপতি অসীম রায়ের ঘরে এই মামলার শুনানি হবে। এ দিনই কামদুনির ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি করে একটি মামলা খারিজ করেছে প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ। তাপসী ভট্টাচার্য নামে এক অধ্যাপিকা ওই মামলা করেছেন।
গত ৭ জুন উত্তর ২৪ পরগনার কামদুনিতে এক কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়। ঘটনাটির তদন্ত-ভার সিআইডি-র হাতে দেয় রাজ্য। ঘটনার দশ দিন পরে মুখ্যমন্ত্রী গ্রামে গিয়ে জানান, এক মাসের মধ্যে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে মামলার নিষ্পত্তি করা হবে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ২৫ দিনের মধ্যে চার্জশিট দেওয়া হবে।
কামদুনির ঘটনার পরে এক মাসেরও বেশি সময় কেটে গিয়েছে। এর মধ্যে বারাসতের তৃতীয় ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে মামলা শুরু হলেও চার্জ গঠন হয়নি। সিআইডি-র পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে বারাসাত কোর্টে চার্জশিট ও অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দেওয়া হলেও এখনও তদন্তই শেষ হয়নি। ডিএনএ রিপোর্টও পাওয়া যায়নি এখনও। উল্টে রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থার পেশ করা চার্জশিট নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিচারক। এই বিষয়ে কলকতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী মন্তব্য করেন, তদন্তে চাপ সৃষ্টি করলে মামলার প্রতি সুবিচার করা হয় না।
গ্রামবাসীদের রাষ্ট্রপতির কাছে যাওয়া, তার পরপরই কামদুনি-কাণ্ডের দ্রুত নিষ্পত্তি চেয়ে মামলা সিবিআই-কে আটকানোর চেষ্টা বলে মনে করছে প্রশাসনের একাংশ। তাদের মতে, সরকার মামলা করলেও এর আবেদনে সই করেছেন কামদুনির ঘটনায় সিআইডি-র তদন্তকারী অফিসার। বারাসত আদালতের আইনজীবীদের একাংশের প্রশ্ন, যেখানে সিআইডি এখনও তার কাজ শেষ করতে পারেনি, সেখানে সরকার কী করে দ্রুত নিষ্পত্তির আশা করে?
|
|
|
|
|
|