গার্ডেনরিচের ছায়া কামারহাটিতে
‘চাপে’ পড়ে অভিযুক্তদের জামিন, ক্ষুব্ধ খোদ পুলিশ
কামারহাটিতে দুষ্কৃতীর হামলায় জখম পাঁচ পুলিশকর্মীর মধ্যে সুধীন ঝা নামে এক সাব-ইনস্পেক্টরের অবস্থা গুরুতর। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে সোমবার স্থানীয় নার্সিংহোমের আইসিইউ-তে ভর্তি করানো হয়েছে। রবিবার পুলিশের উপরে হামলা, মারধর, পুলিশের জিনিসপত্র লুঠ ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় অভিযুক্ত ১৭ জনকে প্রথমে জামিন-অযোগ্য ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছিল। পুলিশের একাংশের অভিযোগ, পরে শাসক দলের এক নেতার চাপে খড়দহ থানা থেকে জামিনে ছাড়া হয় তাদের।
কয়েক মাস আগে গার্ডেনরিচ-কাণ্ডে দুষ্কৃতীদের হাতে পুলিশ অফিসার তাপস চৌধুরীর খুন এবং তাতে মূল অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাদের ধরতে পুলিশের ‘গড়িমসি’ নিয়ে একই ভাবে ক্ষোভ দানা বেঁধেছিল পুলিশমহলে। উত্তপ্ত হয় রাজ্য রাজনীতি ও জনমত। অভিযোগ ছিল, এক মন্ত্রীর চাপে মূল অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাকে ধরা হচ্ছে না। সেই সময়ে বিক্ষুব্ধ পুলিশবাহিনীর পাশে দাঁড়ানোয় পদ খোয়াতে হয় তত্‌কালীন পুলিশ কমিশনার রঞ্জিত পচনন্দাকে। পরে অবশ্য পালিয়ে যাওয়া ওই তৃণমূল নেতাকে ভিন্‌ রাজ্য থেকে ধরে পুলিশ। গ্রেফতার হন স্থানীয় এক কংগ্রেস নেতাও। আপাতত দু’জনেই জামিনে মুক্ত। তবে জামিন নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ এখনও রয়েছে।
অনেকটা একই ভাবে এখন কামারহাটির ঘটনাতেও ক্ষুব্ধ ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের কর্তাদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, এর পরে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। এমনকী, এতে পুলিশকর্মীদের মনোবলও ভেঙে পড়বে বলেও মনে করছেন ওই পুলিশকর্তারা। এক পুলিশ অফিসার বলেন, “পুলিশকে খুন করার চেষ্টা হল। তার পরেও দুষ্কৃতীদের ছেড়ে দিতে হল। দুষ্কৃতীরা তো এ বার পুলিশের মাথায় চড়ে বসবে। এ রকম চলতে থাকলে আমরা বাহিনীর মনোবল কী করে ধরে রাখব!”
তবে এ দিনের ঘটনা নিয়ে স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র দাবি করেন, “এতে পুলিশের মনোবল ভেঙে পড়বে বলে মনে হয় না।” প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশের উপরে একের পর এক হামলা এবং তার পরে ‘চাপের মুখে’ অভিযুক্তেরা জামিন পেয়ে গেলেও যদি পুলিশের মনোবল না ভাঙে, তবে আর ভাঙবে কীসে!
তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য চাপ দিয়ে জামিন করানোর অভিযোগও উড়িয়ে দিয়েছেন। দলের জেলা সভাপতি নির্মল ঘোষের দাবি, “যাদের ধরা হয়েছিল, তারা ওই ঘটনার সঙ্গে যুক্তই নয়। আসল অপরাধীরা ধরা পড়বে। প্রশাসনের কাউকে মারা হবে, আর সরকার কি ছেড়ে দেবে?”
পুলিশ জানায়, রবিবার দুষ্কৃতী হামলায় সুধীনবাবু ছাড়া পুলিশের গাড়ির চালকও জখম হন। তিনিও ওই নার্সিংহোমে চিকিত্‌সাধীন। ডাক্তারেরা জানান, সুধীনবাবুর কপালের ক্ষত গভীর। সাতটি সেলাই হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, রবিবার সকালে প্রথমে কামারহাটি ফাঁড়ি ঘেরাও করা হয়। থানায় হামলা করার জন্যও উদ্যোগী হয় জনতা। পরে তারা বিটি রোডের কামারহাটি মোড় অবরোধ করে। খড়দহ থানার আইসি সোমনাথ দাস বাহিনী নিয়ে অবরোধ তুলতে যান। দুষ্কৃতীরা তাঁদের তাড়া করে। পালাতে গিয়ে সোমনাথবাবু ও অন্য পুলিশকর্মীরা তাদের হাতে ধরা পড়েন। পুলিশের অভিযোগ, সোমনাথবাবু ও তাঁর সঙ্গীদের ইট ও বাঁশ দিয়ে মারা হয়। জখম হন থানার আইসি ও সুধীনবাবু-সহ মোট পাঁচ পুলিশকর্মী। জনতা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে। পুলিশের টর্চ, লাঠি ও দু’টি ওয়্যারলেস সেটও লুঠ হয় বলে অভিযোগ।
সোমবার কামারহাটি মোড় ও কামারহাটি ফাঁড়ির সামনে গিয়ে দেখা যায় এলাকা শান্ত। তুলে নেওয়া হয়েছে পুলিশ-পিকেট। কামারহাটি ফাঁড়িতে ছিলেন জনা কয়েক পুলিশকর্মী। তবে রবিবারের আতঙ্ক কাটেনি তাঁদের। এক পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘এর পরে আর কেউ কি আমাদের মানবে?’’

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.