|
|
|
|
ভোটকর্মীরা নৌকোয় পৌঁছলেন গণনাকেন্দ্রে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
ভোর থেকেই আকাশের মুখ ভার। তুমুল বৃষ্টি। মাঝেমধ্যে বজ্রপাত। এই অবস্থায় পঞ্চায়েতের ভোটগণনায় রীতিমতো বেগ পেতে হল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনকে। ঝড়-বৃষ্টির জেরে বেশিরভাগ ভোটকর্মীই নির্ধারিত সময়ে গণনা কেন্দ্রে পৌঁছতে পারলেন না। ফলে, গণনা শুরু হল দেরিতে। ঠিক ছিল, সকাল ৮টা থেকে গণনা শুরু হবে। কিন্তু কোথাও গণনা শুরু হল ৯টায়, কোথাও বা সাড়ে ৯টায়। সব থেকে দেরিতে গণনা শুরু হল লালগড়ে (বিনপুর-১), পৌনে দশটায়। সমস্যার কথা মানছে জেলা প্রশাসনও। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্তর কথায়, “টানা বৃষ্টির জেরে কিছু রাস্তায় জল দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ করা হয়েছে।”
জেলা প্রশাসনের পদস্থ এক আধিকারিকের কথায়, “একটা সময় মনে হয়েছিল, বৃষ্টিতে সব কিছু না পণ্ড হয়ে যায়! ভোর থেকেই চারদিক থেকে খবর আসছিল। কোথাও রাস্তার উপর জল দাঁড়িয়ে থাকার খবর, কোথাও বা গণনা কেন্দ্রের ক্যাম্পাসই জলমগ্ন হয়ে যাওয়ার খবর। কর্মীরা সময় মতো গণনা কেন্দ্রে পৌঁছতে পারেননি। সকাল সাড়ে ৭টার সময় একটি ব্লক থেকে খবর আসে, মাত্র ৪০ শতাংশ কর্মী পৌঁছেছেন। শেষমেশ অবশ্য সব ভালয় ভালয় মিটেছে। এটাই স্বস্তির!” |
|
জল মাড়িয়েই রাস্তা পেরনো।—নিজস্ব চিত্র। |
পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের মে মাস থেকে যত বৃষ্টি, তার অর্ধেক পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে রবিবার সন্ধ্যা থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত। ফলে, জেলার একাংশ এলাকা জলমগ্ন হয়ে যায়। একটা সময় ৬ এবং ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর দিয়েই জল গিয়েছে। শালবনি এবং ডেবরা থানা এলাকায় এমন ঘটনা ঘটে। কিছু পরে অবশ্য জল নেমে যায়। জানা গিয়েছে, রবিবার সন্ধ্যা থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত মেদিনীপুরে বৃষ্টি হয়েছে ২৮৪ মিলিমিটার। ঝাড়গ্রামে ২১৯ মিলিমিটার। ঘাটালে ২২৬ মিলিমিটার। যেখানে গোটা জুন মাস ধরে জেলায় বৃষ্টি হয় ১৮৫ মিলিমিটার। এবং চলতি মাসে রবিবার সন্ধ্যার আগে পর্যন্ত বৃষ্টি হয় ১৬২ মিলিমিটার। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলছিলেন, “নেহাত আমরা আগে থেকে সব প্রস্তুতি সেরে রেখেছিলাম। না হলে চরম সমস্যা হত। গত এক সপ্তাহে কোনও দিন বৃষ্টি হয়েছে ৫ মিলিমিটার, তো কোনও দিন ১৫ মিলিমিটার। মাঝে মাত্র একদিনই ৬৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। একটানা ২৮৪ মিলিমিটার বৃষ্টি ভাবাই যায় না!” এলাকায় ত্রাণ পাঠানো হচ্ছে। জেলার ২৯টি ব্লকে ২৯টি গণনা কেন্দ্র ছিল। ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাসে কার্যত রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছিল জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্ত, পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী থেকে শুরু করে জেলা পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিক- কর্মীদের। রবিবার সন্ধ্যা থেকেই একের পর এক ঘটনার খবর আসতে শুরু করে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৈরি রাখা হয়েছিল উদ্ধারকারী দলকেও। সোমবার সকাল হতেই জেলাশাসকের দফতরে চলে আসেন পুলিশ সুপার। দু’জনে জেলার সার্বিক পরিস্থিতির খোঁজখবর নিতে শুরু করেন। কখনও ব্লক থেকে কোনও আধিকারিকের ফোন এসেছে জেলাশাসকের কাছে। জেলাশাসক প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন। জানিয়েছেন, কী করণীয়। টানা বৃষ্টির জেরে সমস্যায় পড়েন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরাও। তৃণমূল- সিপিএম সহ বিভিন্ন দলের বহু এজেন্ট সময় মতো গণনা কেন্দ্র পৌঁছতে পারেননি। অন্যদিকে, বৃষ্টির জেরে কংসাবতী, সুবর্ণরেখা নদীর জল বেড়েছে। কেলেঘাই নদীর জল বিপদসীমার ঠিক নীচে রয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, রবিবার ভৈরববাঁকি এবং তারাফেনি ব্যারাজ থেকে জল ছাড়া হয়। এরফলে নদীতে জল বাড়ে। তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির এক বিজয়ী প্রার্থীর কথায়, “বৃষ্টিতে সব প্ল্যান ভেস্তে গেল! ঠিক ছিল, জেতার পর মিছিল হবে। কিছুই তো করা গেল না!” |
|
|
|
|
|