বৃষ্টির বাগানে ‘নির্বাক’ হয়ে থাকল মোহন-দিবস
শা করা গিয়েছিল অন্য বারের মতোই মোহনবাগান দিবসে পাওয়া যাবে অনেক মণিমাণিক্য। কিন্তু সেই আশা শেষ পর্যন্ত পূর্ণ হল না।
দাদু বলাইদাস চট্টোপাধ্যায়ের জন্য মরণোত্তর মোহনবাগানরত্ন নিতে এসেছিলেন তাঁর নাতি বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়।
মোহনাগান সচিব অঞ্জন মিত্রর হাত থেকে পুরস্কার নেওয়ার পর কিছু ‘স্মৃতিকথা’ বলার ইচ্ছে ছিল তাঁর। মাইকের দিকে এগিয়েও গিয়েছিলেন। কিন্তু বলতেই দেওয়া হল না তাঁকে।
গুরু-কাম-কোচ বলাইদাস সম্পর্কে সবথেকে ভাল স্মৃতিচারণ করতে পারতেন যিনি, সেই চুনী গোস্বামীকে সারাক্ষণ নির্বাক অবস্থায় বসিয়ে রাখা হল মঞ্চে।
বর্ষসেরা বাঙালি ক্রীড়াবিদের পুরস্কার শৈলেন মান্না ট্রফি নিতে এসেছিলেন সিঙ্গুরের আশা রায়। পুণের এশীয় অ্যাথলেটিক্স মিট থেকে চোখধাঁধানো সাফল্য আনা বাংলার তারকা অ্যাথলিটেরও ইচ্ছে ছিল ‘এত লোকের সামনে’ কিছু বলার। তাঁর সেই ইচ্ছেও পূর্ণ হল না। বলেও ফেললেন, “মোহনবাগান মিট থেকে যখন বছর পাঁচেক আগেও পদক নিয়ে গিয়েছি তখন কেউ আমাকে চিনত না। এ বার যখন গাড়ি থেকে নামছি সবাই ডাকাডাকি করছে। ট্রফি পেলে কিছু বলতে হয়। সুযোগ পেলে কিছু বলার ইচ্ছে ছিল। তবে এই আর্থিক সাহায্যটা (পঞ্চাশ হাজার টাকা) আমার কাছে বিরাট।”
বিশেষ সম্মানের স্মারক হাতে প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুব্রত ভট্টাচার্য। সোমবার। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
বর্ষসেরা ফুটবলার ডেনসন দেবদাস, বর্ষসেরা ক্রিকেটার শুভময় দাসদেরও কিছু বলতে দেওয়া হল না। জানা হল না তাঁদের সেরা হয়ে মঞ্চে ওঠার প্রতিক্রিয়া। পুরো অনুষ্ঠানে সার দিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হল করিম বেঞ্চারিফা-সহ এ বারের পুরো ফুটবল টিমকে!
মঞ্চ সাজানো হয়েছিল ঐতিহাসিক ১৯১১-র সেই ব্রিটিশ বধের নায়ক শিবদাস-বিজয়দাসদের ছবি দিয়ে। তবে ২৯ জুলাই-এর ১০২ বছর উদযাপনের মূল অনুষ্ঠান যেন খুব তড়িঘড়িই শেষ হয়ে গেল। হয়তো বৃষ্টির জন্যই এই তাড়াহুড়ো।
চুনী-আশা-বিশ্বজিৎদের ‘নির্বাক’ মোহনবাগান দিবসে সবথেকে বেশি গুরুত্ব পেলেন দুই ঘরের ছেলে সুব্রত ভট্টাচার্য এবং প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন? তা নিয়ে নানা গুঞ্জন ঘুরপাক খেল সোমবারের বাগান জুড়ে।
মঞ্চে যখন সুব্রত উঠলেন তখন হাজার দেড়েক জনতার মধ্যে সেই পুরনো শব্দব্রহ্ম উঠল। যা মনে করাল বাবলুর সবুজ-মেরুন জার্সি পরে মাঠে নামার সময়কে। “আমরা কেউ একা মোহনবাগান নই। আমরা সবাই মোহনবাগান। হার-জিত সমান ভাবে নিতে হবে। ট্রফি জেতাটা সবথেকে বড় কথা। কিন্তু পাশপাশি ক্লাবে ফেরাতে হবে ক্রীড়াসংস্কৃতিও। যেটা মোহনবাগানে এখন খুব দরকার।” সুব্রত নিজের বক্তব্য রাখার সময় দেখা গেল করিম তাঁর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে। ক্লাবের পতাকা আর পুস্পস্তবক নেওয়ার আগে করিম তাঁর তীব্র সমালোচক মঞ্চে বসে থাকা সুব্রতর সঙ্গে হাত মেলান কি না, তা দেখার জন্য উৎসুক ছিলেন সবাই। করিম হাত মেলালেন। সুব্রতও প্রতিদান দিলেন এই বলে, “এই টিমটাও ট্রফি এনে আপনাদের স্বপ্নপূরণ করতে পারে।”
উদ্বোধনী সঙ্গীত থামিয়ে সবার আগে দ্রুত পুরস্কার নিয়ে চলে গেলেন প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। “মোহনবাগান পাঁচ গোল খাওয়ার পরেও আমাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়নি। বরঞ্চ আমাকে মঞ্চে ডেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। এই ক্লাব আমার দ্বিতীয় মা,” প্রেসিডেন্ট টুটু বসুর হাত থেকে স্মারক নেওয়ার পর বললেন রাজ্যের একমাত্র ফুটবলার সাংসদ।
সকাল থেকে প্রচণ্ড বৃষ্টি সত্ত্বেও মোহনবাগান দিবসে ভিড় খারাপ হয়নি। প্রাক্তন ফুটবলারদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। যেন মেলা বসেছিল অতীত আর বর্তমানের। নানা দশকের তারকারা। সৈয়দ নইমুদ্দিন, অরুময়নৈগম থেকে সুকুমার সমাজপতি। জেভিয়ার পায়াস, উলগানাথন থেকে বাসুদেব মণ্ডল। দেখা গেল কয়েক দিন পরেই যিনি ইস্টবেঙ্গলের মঞ্চে উঠে লাইফটাইম অ্যচিভমেন্ট পুরষ্কার নেবেন সেই সমরেশ চৌধুরীকেও। দু’দলে ভাগ করে খেললেন প্রাক্তনরা। অতীতের কিছু ঝলক দেখলেন অসম্পূর্ণ গ্যালারিতে বসে থাকা কয়েকশো সদস্য-সমর্থক। সচিব একাদশ ২-০ হারাল সভাপতি একাদশকে। টলিউড তারকা বনাম ক্রীড়া সাংবাদিকদের ম্যাচ শেষ হল ১-১ গোলে।
তবে চমক ছিল ফুটবলারদের জার্সি তুলে দেওয়ার সময়। টোলগে ওজবের গতবারের জার্সি পেলেন জাপানের কাতসুমি। অনুপস্থিত অধিনায়ক ওডাফার জন্য রেখে দেওয়া হল ন’নম্বর জার্সি। চার্চিল থেকে আসা সন্দীপ নন্দী পেলেন ৪২ নম্বর। বাগানে এ বার প্রচুর নতুন ফুটবলার। তাঁদের সঙ্গে ছবি তোলার জন্য দেখা গেল প্রচণ্ড হুড়োহুড়ি।
তবে দু’জনের অনুপস্থিতি সামান্য কাঁটা হয়ে থাকল অনুষ্ঠানের। সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায় এবং হোসে রামিরেজ ব্যারেটো দুই ঘরের ছেলের জায়গা হতেই পারত সবুজ-মেরুন মঞ্চে। চুনী-সুব্রতদের পাশে!

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.