পওয়ার-কাঁটা সরানোরও ছক তৈরি শ্রীনি শিবিরে
নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনকে যে রাজত্বে পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য অগস্ট মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হল, তাতে সিএবির একাধিক কর্তা হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন। মিনি অপ্রীতিকর একটা পরিস্থিতি হতে পারত। এর ফলে তা থেকে রক্ষা পাওয়া গেল।
বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে জগমোহন ডালমিয়ার মনোনয়নের আনন্দে সিএবি তার রেজিস্টার্ড ক্লাবগুলোকে কম্পিউটার বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আনুষ্ঠানিক সেই কম্পিউটার প্রদান মঙ্গলবার। যার কার্ডে লেখা বোর্ড প্রেসিডেন্ট ডালমিয়া। রোববার বোর্ড সদস্যদের একটা অংশের দাবি মেনে সে দিনই শ্রীনিবাসনকে ফের স্বপদে বহাল করলে সিএবির অনুষ্ঠান হাস্যকর চেহারায় দেখা দিত। এর পরের দিন বুধবার আবার সিএবির বার্ষিক সাধারণ সভা। এ বার নির্বাচন হচ্ছে না। তবু কার্যনির্বাহী বোর্ড প্রেসিডেন্ট, আমাদের সংস্থারও প্রধান এই নিরাপত্তার প্রয়োজন কর্তারা অনেকেই দেখেছিলেন। নির্বাচনের দু’দিন আগে দোসরা অগস্ট যদি শ্রীনিবাসনের হাতে ক্ষমতা চলেও যায়, অন্তত সিএবি নির্বাচনটা বোর্ড প্রেসিডেন্টের তকমাকে সামনে রেখে এড়ানো গিয়েছে।
শ্রীনিবাসন এবং বোর্ডের এ দিনের মেডিক্যাল বুলেটিন হল, এখনও অ্যাডভান্টেজ সিএসকে প্রধান। বোর্ডের মধ্যে হঠাৎ-ই তাঁর অনুগামীদের আকুতি এমনই বেড়ে গিয়েছে যেন তাঁকে ফেরানোর জন্য কে বা প্রাণ আগে করিবেক দান তারই লাগে কাড়াকাড়ি। এঁদের হাবভাব দেখে মনে হতে পারে, মধ্যিখানের সময়টা বুঝি আদৌ ঘটেনি। গুরুনাথ মইয়াপ্পন নামক কোনও অধ্যায় নেই। নইলে সৌরাষ্ট্রের নিরঞ্জন শাহ, যাঁকে মাত্র ক’দিন আগে শরদ পওয়ার গোষ্ঠীর অন্যতম মুখ হিসেবে ধরা হচ্ছিল তিনি কেন দাবি জানাবেন শ্রীনি তাঁর রাজত্বে ফিরুন শুক্রবারই! মুম্বইয়ের রবি সবন্ত, যাঁকে তাঁর অনুগামীরা এক প্রতিবাদী এবং অনমনীয় ক্রিকেট কর্তা হিসেবে চিহ্নিত করে থাকেন। যিনি আইপিএল কাউন্সিলের প্রবল চাপেও শাহরুখ খানের ওপর থেকে ওয়াংখেড়ে-নিষেধাজ্ঞা তুলে নেননি। যাঁকে বোর্ড কোষাধ্যক্ষ করে বলা হয়েছিল, শ্রীনি-বিরোধী আরও একটা জোরালো মুখ পাওয়া গেল। তিনি একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে গিয়েছেন। সবন্ত এ দিন বলেছেন, “এটাই ন্যায় হবে যে উনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফিরুন এবং শুক্রবারের আইপিএল কাউন্সিলের সভাপতিত্ব করুন।”
মুম্বই ক্রিকেট সংস্থার প্রধান সবন্ত এতেই থামেননি। তিনি বার্ষিক রিপোর্ট তৈরি হয়নি জাতীয় ছুতোটুতো দিয়ে নিজের সংস্থার নির্বাচন ছ’মাস পিছিয়ে দিয়েছেন। সোমবার মুম্বই থেকে ফোনে দিলীপ বেঙ্গসরকর বললেন, “কী হবে যদি সেপ্টেম্বরে বোর্ডের কোষাধ্যক্ষ পদে পুনর্নিবার্চিত হয়ে নভেম্বরে এমসিএ ইলেকশনে ও হেরে যায়? তখন তো সবন্তকে গদি ছাড়তে হবে।”
বেঙ্গসরকর অবশ্য এ জন্যই প্রাক্তন ক্রিকেটার, দুঁদে ক্রিকেট কর্তা নন। সবন্তের চালটা তিনি ধরতেই পারেননি। মুম্বই নির্বাচন পেছোনোর মুখ্য উদ্দেশ্য হল, শরদ পওয়ারকে সেপ্টেম্বর অবধি বোর্ডের ত্রিসীমানায় আসতে না দেওয়া। জোর জল্পনা আছে পওয়ার এমসিএ-তে ফেরত আসছেন। জুলাইয়ে তিনি ফেরত এসে গেলে সেপ্টেম্বরে বোর্ড নির্বাচনের সময় শ্রীনিবাসনের আপাত নিষ্কন্টক রাস্তায় সমস্যা তৈরি হতে পারত। সেই ঝুঁকিটুকুও শ্রীনি নিতে চান না। অনুগত সবন্ত তাই কিনা নির্বাচন পিছিয়ে দিলেন। এমসিএ-র সংবিধানে যে অধিকার আছে, কিন্তু স্মরণকালে কেউ প্রয়োগ করেনি।
শ্রীনির বোর্ডে ফেরার লড়াইয়ে অবশ্য এ সব চক্ষুলজ্জার কোনও অবকাশ নেই। বাইরে থেকে থেকে তিনি ক্রমশই অধৈর্য হয়ে পড়ছেন। মিডিয়া আর ক্রিকেট মহলের একটা অংশ ভেবেছিল, তাঁকে টাইট করে দেবেন অরুণ জেটলি আর রাজীব শুক্ল। স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারি উত্তর এঁরা বোর্ডে শুদ্ধকরণ আনার পক্ষে অনেক লম্বা-চওড়া কথাও বলেছিলেন। অথচ কলকাতার রবিবাসরীয় বৈঠকে দুজনেই আমি পাস দিলাম এমন ভঙ্গিতে বিতর্ক থেকে সরে যান। জেটলি তো চাইছিলেন শুক্রবারের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে না-ই যেতে। অর্থাৎ শ্রীনি ফিরে এলেন আবার সেই ‘পাপে’র অংশীদার জেটলি থাকলেন না। প্রথমে কথা ছিল সভা হবে মুম্বইয়ে। জেটলি নাকি জানান, তিনি অত দূর যেতে পারবেন না। তখন ঠিক হয়, নয়াদিল্লিতেই বৈঠক বসবে। আর রাজীব শুক্ল তদন্ত রিপোর্ট পেশ হওয়ার পর টিভি ক্যামেরার চিরকালীন লোভনীয় হাতছানিতেও সাড়া দেননি।
কারও কারও মনে হয়েছিল, জগমোহন ডালমিয়ার আস্তিনে কোনও লুকনো তাস থাকলেও থাকতে পারে। এমন আশাবাদীদের মধ্যে শ্রীনি সম্পর্কে বীতশ্রদ্ধ কিছু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কর্তাও ছিলেন। তাঁরা বোঝেননি, ভোট সর্বস্ব ভারতীয় ক্রিকেট বাজারে হাতে ভোট না থাকলে তার কোনও দাম নেই। আর ভোট ব্যাঙ্কে বাংলার এই মুহূর্তে ভারতীয় ক্রিকেটে অবস্থান আরএসপি-র লোকসভায় অবস্থানের সমতূল্য। ৩১ সদস্য বিশিষ্ট প্যানেলে ডালমিয়াদের হাতে থাকা ভোট ২। সিএবি আর এনসিসি। এমনকী পূর্বাঞ্চলের অন্য কোনও রাজ্যও হাতে নেই।
তাই শ্রীনির অশ্বমেধের ঘোড়া আটকানোর মতো জবরদস্ত কোনও ক্রিকেট প্রশাসকের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। চিরবিদ্রোহী বিষেণ বেদী এ দিন টুইট করেছেন, ‘চার পাশের পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, হাতে লাঠি যার মোষ তার।’ কীর্তি আজাদ উত্তেজিত ভাবে বলেছেন, “বিসিসিআই কি এত বড় হয়ে গিয়েছে যে দেশের আইনশৃঙ্খলারও ঊর্ধ্বে? মুম্বই আর দিল্লি পুলিশ তদন্ত শেষ করার আগেই তারা কী করে নিজেরা সিদ্ধান্তে চলে যেতে পারে?”
সমস্যা হল আজাদ বা বেদী কারও ভোট নেই। তাই ক্ষতি করার ক্ষমতাও নেই। বোর্ডে শ্রীনি-বিরোধী সংখ্যালঘিষ্ঠরা সপ্তাহের প্রথম দিন সামান্য তৃপ্তি পেয়েছিলেন, যখন ক্রীড়ামন্ত্রক থেকে বলা হয় মুম্বই পুলিশ তদন্ত শেষ করার আগে বোর্ড যেন তাড়াহুড়ো না করে। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটের ফলের মতোই ছবিটা পরিষ্কার হতে থাকে। বোঝা যায়, ক্রীড়ামন্ত্রকের আবেদনকে বোর্ড পাত্তাই দেবে না। সন্ধেবেলা অবশ্য মুম্বই পুলিশের তরফে বিবৃতি আসে, বিসিসিআই বড্ড তাড়াহুড়ো করছে। কীসের ভিত্তিতে আমাদের তথ্য প্রমাণ হাতে না পেয়েই ওরা হড়বড়িয়ে নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতে পারে? আসলে ওরা তদন্ত চালাতে যত না আগ্রহী তার চেয়ে বেশি আগ্রহী তদন্তটা শেষ করে ফেলতে।
দ্বিতীয় দিনের শেষেও আসলে লড়াইটা প্রথম দিনের দুই প্রতিদ্বন্দ্বীতেই থেকে গেল। শ্রীনি বনাম মুম্বই পুলিশ। সরি, পওয়ার প্রভাবিত মুম্বই পুলিশ।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.