|
|
|
|
বালি-মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য |
আইএএস অফিসারকে সরিয়ে চাপের মুখে অখিলেশ সরকার |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
বালি-মাফিয়াদের বেআইনি কাজকর্মে বাধা দিয়েছিলেন যিনি, উত্তরপ্রদেশের সেই তরুণী আইএএস অফিসার দুর্গাশক্তি নাগপালকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। প্রবল চাপের মুখে পড়ে যে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার কথা ভাবতে হচ্ছে অখিলেশ সরকারকে।
রাজ্যের আইএএস অফিসারদের অ্যাসোসিয়েশন পাশে দাঁড়িয়েছে দুর্গার। তাঁকে পুনর্বহালের দাবিতে ওই
|
দুর্গাশক্তি নাগপাল |
অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের সঙ্গে দুর্গা আজ দেখা করেন মুখ্যসচিবের সঙ্গে। অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি পার্থসারথি সেনশর্মার বক্তব্য, দুর্গা পরিস্থিতির শিকার। অফিসারদের সঙ্গে আলোচনার পরে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মুখ্যসচিব অলোক রঞ্জন। সাসপেন্ড থাকাকালীন দুর্গাকে শুল্ক বোর্ডে রাখা হবে বলে জানানো হয়েছে।
উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব অবশ্য গত কাল সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট টুইটারে মন্তব্য করেছিলেন: “এটা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। একটি জায়গায় দেওয়াল ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।” অখিলেশের বক্তব্য, দুর্গার এই সিদ্ধান্তে হিংসা ছড়ানোর সম্ভাবনা ছিল। তাই তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়। তবে বিরোধীদের দাবি, বালি-মাফিয়াদের চাপেই দুর্গাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
২০০৯ সালের পঞ্জাব ক্যাডারের ২৮ বছরের ওই অফিসার মাত্র দশ মাস হল কাজে যোগ দিয়েছিলেন। উত্তরপ্রদেশের গৌতম বুদ্ধ নগরের মহকুমা শাসকের পদে গত বছর সেপ্টেম্বরে নিয়োগ করা হয়েছিল তাঁকে। বালি-মাফিয়াদের রমরমা রুখতে প্রথম থেকেই সরব ছিলেন তিনি। গত কয়েক মাস ধরে নয়ডা অঞ্চলে যমুনার তীর থেকে বেআইনি ভাবে অন্তত ৩০০ ট্রলি বালি তুলে নিয়ে যায় মাফিয়ারা। যেগুলিকে আটক করেন দুর্গা। অভিযুক্ত বালি মাফিয়াকে দু’কোটি টাকা জরিমানা করেন। যমুনার তীর বরাবর নজর রাখতে তৈরি করেন বিশেষ ফ্লাইং স্কোয়াডও। আইএএস অফিসারদের দাবি, এই সব কারণেই বালি মাফিয়াদের বিরাগভাজন হয়েছিলেন দুর্গা। তা ছাড়াও বেআইনি খননে কাজে লাগানো অন্তত ২৪টি ডাম্পার আটক এবং এই কাজে জড়িত ১৫ জনকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন তিনি। যার জেরে তাঁকে তড়িঘড়ি সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দুর্গা নিজেও আগে বলেছেন, “এদের বিরুদ্ধে কিছু করলেই এরা ভয় দেখাবে। কিন্তু এরা যা করছে, তাতে পরিবেশের বড় ক্ষতি হচ্ছে।”
এরই মধ্যে সরকারি জমিতে বেআইনি ভাবে একটি মসজিদ তৈরি হচ্ছিল, এমন অভিযোগ পেয়ে গত শনিবার সেটি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দেন দুর্গা। সরকারের অভিযোগ, দুর্গা ওই কাজ করতে গিয়ে আইনের ধার ধারেননি। কিন্তু দুর্গার দাবি, তিনি এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মাথায় রেখেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, সরকারি জমি দখল করে ধর্মীয় কোনও স্থাপত্য নির্মাণ করা যাবে না। আইএএস অফিসাররা বলছেন, এই সিদ্ধান্তে কোনও হিংসা ছড়ায়নি। তা ছাড়া গোটা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে সরকারি তরফে কোনও রিপোর্টও চাওয়া হয়নি। তার আগেই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে দুর্গাকে।
অফিসারদের দাবি, সমাজবাদী নেতা নরেন্দ্র ভাট্টি দলীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছিলেন বালি মাফিয়াদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছেন দুর্গা। যা তাদের দলের স্বার্থে আঘাত করবে।
বিজেপি এবং কংগ্রেসের অভিযোগ, উত্তরপ্রদেশের সরকার বালি মাফিয়াদের আড়াল করছে। দিল্লিতে বিজেপি মুখপাত্র প্রকাশ জাভড়েকর বলেছেন, “গুন্ডারাজ চলছে। এই সরকার মাফিয়াদের বাঁচায় আর যে সব সৎ অফিসার তাদের শাস্তি দিতে যান, তাঁদের সরিয়ে দেয়।” কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহের বক্তব্য, “উত্তরপ্রদেশে বালি মাফিয়া শুধু এই সরকারের জমানায় নয়, সক্রিয় ছিল মায়াবতীর সময়েও।”
বেআইনি খনন নিয়ে বারবারই শিরোনামে এসেছে উত্তরপ্রদেশের নাম। গত বছরই এই রাজ্যের বদায়ুনের জেলাপ্রশাসনের অফিসার নীরজ সিংহের গায়ে কেরোসিন ঢেলে তাঁকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করেছিল তেল মাফিয়ারা। কেরোসিনে ভেজাল মিশিয়ে অবাধে বিক্রি করত মাফিয়ারা। তাদের কাজে বাধা দিতে গিয়ে মাফিয়াদের রোষের মুখে পড়েন নীরজ আর তার সহযোগীরা। সমাজবাদী পার্টি ওই মাফিয়াদেরও মদত দেয় বলে অভিযোগ ওঠে সে বারও। |
|
|
|
|
|