কয়েক দিনের বৃষ্টিতে রেললাইনে ধস নামায় সোমবার শিয়ালদহ মেন লাইনে ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে যায়। সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে নাজেহাল হন নিত্যযাত্রীরা। দমদম ও বেলঘরিয়ার মাঝখানে ঘটনাটি ঘটে এ দিন বেলা আড়াইটে নাগাদ। তার জেরে সন্ধ্যা পর্যন্ত মেন লাইনে সাতটি লোকাল ট্রেন বাতিল করতে হয়েছে। অন্যান্য লোকালও চলেছে অনেক দেরিতে।
পূর্ব রেল সূত্রের খবর, দমদম ও বেলঘরিয়ার মাঝখানে দীর্ঘদিন ধরেই রেললাইন খারাপ থাকায় মেরামতির কাজ চলছে। প্রায় এক মাস ধরে ওই জায়গায় ট্রেন চলছে খুব আস্তে। ফলে সময়ও লাগছে বেশি। এ দিন দুপুরে আচমকাই এক নম্বর লাইনের তলায় প্রায় ৩০ মিটার এলাকার মাটি বসে যায়। ফলে ওই লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দিতে হয়। আর একটি লাইনে ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে শিয়ালদহে সব লাইনেই ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটা। এ দিন হয়েছেও তা-ই। রেলের ইঞ্জিনিয়ারেরা জানান, অতিবর্ষণেই ধস নেমেছে। ঘটনাস্থলে যান শিয়ালদহের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার সুচিত্ত দাস এবং অন্যান্য পদস্থ কর্তা। মাটি ভিজে এমন ভাবে বসে গিয়েছে যে, ওভারহেড তারবাহী একটি বৈদ্যুতিক স্তম্ভও হেলে পড়ে। দীর্ঘ ক্ষণ সারাই চলে। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হতে রাত হয়ে যায়।
শুক্রবার রাতেও কাঁকিনাড়ার কাছে একটি লেভেল ক্রসিংয়ের লোহার দণ্ডটি ভেঙে ওভারহেড তার ছিঁড়ে দেয়। রাতে মেন লাইনে ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। লোকাল ট্রেনগুলি গড়ে দুই থেকে তিন ঘণ্টা দেরিতে চলাচল করে। যাত্রীরা চূড়ান্ত নাকাল হন। তাঁদের অভিযোগ, শিয়ালদহ শাখায় লোকাল ট্রেনের পরিষেবার মান ক্রমশই নেমে যাচ্ছে। কোনও না কোনও সমস্যায় প্রায় রোজই বিঘ্নিত হচ্ছে ট্রেন চলাচল। পরিকাঠামোর দশাও বেহাল। কিন্তু রেলকর্তাদের কোনও হেলদোল নেই।
অভিযোগ শুধু যাত্রীরাই করছেন না। পরিকাঠামো ও পরিষেবার দুর্দশা নিয়ে সরব রেলকর্মীদের একাংশও। তাঁদের বক্তব্য, রেলের নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বছর বর্ষা আসার আগেই রেললাইনে সারাইয়ের কাজ (‘মনসুন ওয়ার্ক’) সারার কথা। কিন্তু ঠিক সময়ে তা করার দিকে রেলকর্তারাই নজর দিচ্ছেন না। এই টালবাহানার সঙ্গে সঙ্গে কমে গিয়েছে যাঁরা লাইন মেরামত করেন, সেই গ্যাংম্যানের সংখ্যাও। নতুন নিয়োগও হচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে রেললাইন মেরামতির দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে ঠিকাদারের হাতে। ফলে যা হওয়ার, তা-ই হচ্ছে।
|