৬ নয়, লুঠ ৭৮ লক্ষ, বেরিয়ে এল তদন্তে
ব্যবসায়ীর অভিযোগ ছিল, সিআইডি অফিসার সেজে তাঁর অফিস থেকে লুঠ করা হয়েছে ছ’লক্ষ টাকা। কিন্তু তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারল, ওই ব্যবসায়ীর অভিযোগের তেরো গুণ, অর্থাৎ ৭৮ লক্ষ টাকা লুঠ করেছে অভিযুক্তেরা। এর মধ্যে ৭২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ। বাকি টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। অন্য দিকে, পুলিশের একাংশেই প্রশ্ন উঠেছে ধৃতদের বিরুদ্ধে লঘু ধারায় অভিযোগ দায়ের করা নিয়ে। লালবাজারের পুলিশকর্তাদের অবশ্য দাবি, অভিযোগকারীর লিখিত বয়ানের ভিত্তিতেই ধৃতদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, ষড়যন্ত্র এবং সরকারি কর্মীর ভুয়ো পরিচয় দিয়ে অপরাধ সংগঠিত করার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত এগোনোর সঙ্গে সঙ্গে চার্জশিট পেশের সময়ে নতুন করে ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা প্রয়োগ করা যেতে পারে।
উদ্ধার হওয়া টাকা। সোমবার, বড়বাজার থানায়। —নিজস্ব চিত্র
পুলিশ জানায়, সিআইডি অফিসার সেজে ওই টাকা লুঠের ঘটনায় চার পুলিশকর্মী-সহ সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের বাড়িতে রবিবার সারা রাত তল্লাশি চালিয়েই লুঠের টাকা মেলে। রবিবার বড়বাজার থানার পুলিশ তিন পুলিশকর্মী-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে। পরে সোমবার আরও এক কনস্টেবল-সহ দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের নাম বাজলে আহমেদ ও তপন চট্টোপাধ্যায়। তদন্তকারীরা জানান, বাজলে শিয়ালদহ ট্রাফিক গার্ডের কনস্টেবল। তপন দুষ্কৃতীদের ব্যবহার করা গাড়িটির চালক। তপন বাদে বাকি ছ’জনকে এ দিন আলিপুর আদালতে তোলা হয়। তাদের ১১ তারিখ পর্যন্ত জেল হেফাজত হয়েছে। আজ, মঙ্গলবার তপনকে আদালতে তোলা হবে।
লালবাজার ও রাজ্য পুলিশ সূত্রের খবর, অভিযুক্ত পুলিশকর্মীরা সাসপেন্ড হয়েছে। অভিযোগ, কর্তব্যরত অবস্থাতেই বড়বাজারের ব্যবসায়ীকে ভয় দেখিয়ে ৭৮ লক্ষ টাকা লুঠ করেছিল ওই চার পুলিশকর্মী। পুলিশের দাবি, ২৫ জুলাই বিকেলে বড়বাজারের ব্যবসায়ী সত্যনারায়ণ শর্মার রবীন্দ্র সরণির অফিস থেকে লুঠের পরে ওই পুলিশকর্মীরা বাকি দুষ্কৃতীদের সঙ্গে টাকার ভাগ বাঁটোয়ারা করে নিউ মার্কেট থানা এলাকার মেজ লেনের এক হোটেলে বসে। সন্ধ্যায় তারা ফের ডিউটিতে যোগ দেয়।
পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃত পুলিশকর্মীদের মধ্যে তিন জন ভিভিআইপি-দের নিরাপত্তার কাজে জড়িত। ঘটনার দিন তাদের কোথায় ডিউটি ছিল, তা জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। নজরদারি এড়িয়ে কী ভাবে তারা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ভিআইপি-দের সঙ্গে কাজ করার সুবাদে তারা সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে।
পুলিশের দাবি, লুঠের ঘটনার মূল পাণ্ডা কটন স্ট্রিটের ব্যবসায়ী ছত্রসিংহ সঙ্ঘভি ও কলকাতা পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের কনস্টেবল হাফিজুর রহমান। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ওই দু’জন পূর্ব পরিচিত। এক সময়ে বর্ধমানে ছত্রসিংহ বল বিয়ারিং-এর ব্যবসা করত। সেই ব্যবসায় যুক্ত ছিল হাফিজুর। পুলিশের দাবি, সেই পরিচয় বর্তমানেও ছিল। সেই সূত্র ধরেই রবীন্দ্র সরণির অফিসে এই লুঠের ঘটনা বলে পুলিশ জানায়।
পুলিশের দাবি, ছত্রসিংহের সঙ্গে ব্যবসা সূত্রে সত্যনারায়ণের পরিচয় ছিল। সে জানত, ওই ব্যবসায়ীর অফিসে হিসেব-বহির্ভূত টাকা থাকে। তদন্তের পরে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, হাফিজুর ও ছত্র ঠিক করে, সিআইডি অফিসার সেজে তারা ওই অফিসে ঢুকবে। ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জেনেছে, হাফিজুর প্রথমে জয়নাল আবেদিন, ওয়াজেদ মোমিন এবং বাজলে আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ২৫ তারিখ বিকেলে ছ’জন একটি গাড়ি ভাড়া করে সত্যনারায়ণের রবীন্দ্র সরণির অফিসের সামনে যায়। পুলিশ জানতে পেরেছে, চার পুলিশকর্মী হাফিজুর, জয়নাল, মোমিন এবং বাজলে গাড়ির চালক তপনকে নিয়ে অফিসের ভিতরে ঢোকে। পরিকল্পনা মতো নিজেদের সিআইডি অফিসার পরিচয় দিয়ে অফিসে তল্লাশি চালায়। পরে আলমারিতে রাখা ৭৮ লক্ষ টাকা ব্যাগে ভরে বেরিয়ে আসে। সেই সময়ে অফিসের ভিতরে থাকা সিসিটিভি-ও খুলে নেয় তারা।
পুলিশ জেনেছে, অফিসের ভিতরে থাকা ব্যবসায়ী ও কর্মীদের যাতে কোনও সন্দেহ না হয়, তাই ওই পুলিশকর্মীরা ওয়াকিটকি ও সার্ভিস রিভলভার নিয়ে অফিসে ঢুকেছিল। পরে ওই ব্যবসায়ীকে ভবানী ভবনে যেতে বলে তারা। নিজেদের গাড়িতেই সত্যনারায়ণবাবুকে তুলে ভবানী ভবনের বদলে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে নামিয়ে দেয়। পুলিশ জেনেছে, সেই সময়ে গাড়িতে ওই চার পুলিশকর্মী উপস্থিত ছিল।
পুলিশ জানায়, ৭৮ লক্ষ টাকা লুঠের পরে ব্যবসায়ীকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে সাত জন মিলিত হয় মেজ লেনের ওই হোটেলের ঘরে। পুলিশের দাবি, ওই ঘরটিতে দীর্ঘদিন ধরেই থাকত হাফিজুর। মুর্শিদাবাদের বড়ঞাতে বাড়ি হলেও কলকাতার কোনও পুলিশ আবাসনে থাকত না সে। রবিবার ওই হোটেল থেকেই তাদের ধরা হয় বলে পুলিশের দাবি।
তদন্তকারীরা জানান, রবীন্দ্র সরণির অফিসের বাইরের সিসিটিভি-র ছবি দেখেই প্রথমে ছত্রসিংহ সঙ্ঘভি ও এক পুলিশকর্মীকে শনাক্ত করা হয়। পুলিশের দাবি, শনিবার রাত থেকে ছত্রকে লাগাতার জিজ্ঞাসাবাদের পর সে ঘটনার কথা স্বীকার করে এবং বাকিদের নাম জানিয়ে দেয়। এর পরে ছত্রকে দিয়েই রবিবার নতুন করে টাকা ভাগ বাঁটোয়ারার টোপ দিয়ে অভিযুক্ত পুলিশকর্মীদের ডেকে আনা হয় নিউ মার্কেটের ওই হোটেলে। পুলিশ জানতে পেরেছিল, টাকার ভাগ বাঁটোয়ারা নিয়ে ধৃত পুলিশকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ আছে। এক পুলিশকর্তা জানান, হাফিজুর একাই ৪২ লক্ষ টাকা নিয়েছিল। যেখানে বাকিরা ৫ লক্ষ টাকা করে ভাগ পায়। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, হোটেলে তল্লাশি চালানোর সময়ে অভিযুক্ত পুলিশকর্মীরা উল্টে গোয়েন্দাদেরই বলে, “আমরা পুলিশের কর্মী, আপনারা কে?”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.