বয়স যা-ই হোক, চলতি দফায় পুরো মেয়াদই থাকছেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মালবিকা সরকার। তার পরেও তাঁর কার্যকাল আগামী বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অর্থাৎ ছ’মাস বাড়িয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। রাজ্যপাল তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য এম কে নারায়ণনের সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সোমবার জানান।
তবে ওই সময়ের মধ্যে সরকারের গড়া সার্চ বা সন্ধানী কমিটির মাধ্যমে পরবর্তী অস্থায়ী উপাচার্য বাছাইয়ের কাজ চূড়ান্ত হয়ে গেলে বর্তমান অস্থায়ী উপাচার্যের কার্যকাল ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত না-ও গড়াতে পারে বলে জানান উচ্চশিক্ষা দফতরের এক কর্তা। এ দিনই আবার মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জমা দেওয়া মেন্টর গ্রুপের রিপোর্টে ২০১৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মালবিকাদেবীর কার্যকাল বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু মেন্টর গ্রুপের এমন সুপারিশ করার এক্তিয়ার আছে কি না, সরকার তা খতিয়ে দেখার পক্ষপাতী।
প্রেসিডেন্সির অস্থায়ী উপাচার্য নিয়ে কয়েক দিন ধরেই চাপান-উতোর চলছিল। আগামী ১৫ অগস্ট মালবিকাদেবীর বয়স ৬৫ বছর পূর্ণ হচ্ছে। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় আইন মোতাবেক ১৫ অগস্টের পরে মালবিকাদেবী আর প্রেসিডেন্সির উপাচার্য-পদে থাকতে পারেন না। নিয়োগপত্রে তাঁর কার্যকাল ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেখানো হলেও ওই আইনের জন্যই তিনি পুরো মেয়াদ পদে থাকতে পারবেন কি না, তা নিয়ে টানাপোড়েন চলছিল। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে তাঁর জায়গায় নতুন অস্থায়ী উপাচার্য খোঁজার জন্য তিন সদস্যের সন্ধানী কমিটি গঠন করেছে। সেই কমিটির একটি বৈঠকও হয় গত বৃহস্পতিবার। কিন্তু ওই কমিটি গড়ার সরকারি সিদ্ধান্তের সমালোচনায় সরব হন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান। প্রেসিডেন্সির অনেক শিক্ষকও মালবিকাদেবীকে রেখে দেওয়ার দাবি জানান। রাজ্যপালের হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত রাজ্য সরকার আগের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে।
উচ্চশিক্ষা দফতর সূত্রে এ দিন বলা হয়, ১৫ অগস্ট মালবিকাদেবীর বয়স ৬৫ বছর হচ্ছে। ওই দিন থেকে আরও ছ’মাসের জন্য তাঁর মেয়াদ বাড়িয়ে দিচ্ছে রাজ্য সরকার। অর্থাৎ তিনি আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রেসিডেন্সির উপাচার্যের দায়িত্ব সামলাবেন। পরবর্তী উপাচার্য ঠিক করার জন্য গড়া সন্ধানী কমিটি ৩০ সেপ্টেম্বরের পরে কাজ শুরু করবে। কারণ, মালবিকাদেবীর বর্তমান নিয়োগপত্রে জানানো হয়েছে, তাঁর কার্যকাল ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তাঁর মেয়াদ বাড়ানোর ব্যাপারে সরকারি নির্দেশের কথা মালবিকাদেবী অবশ্য রাত পর্যন্ত জানতেন না।
প্রেসিডেন্সির মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান সুগত বসু এ দিনই তাঁদের পঞ্চম রিপোর্টটি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পেশ করেছেন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের পরামর্শ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা রাজ্যপালের কাছে আমরা বতর্মান উপাচার্য মালবিকা সরকারের কার্যকাল ২০১৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানোর সুপারিশ করছি। বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গেও আমরা কথা বলব।’ প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ৫৫ এবং ৫৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী উপাচার্যের মেয়াদ বাড়ানোর সুপারিশ করা হবে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। মেন্টর গ্রুপের বক্তব্য, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনেই উপাচার্যের কার্যকাল শেষ হওয়ার পরে এ ভাবে মেয়াদ বাড়ানোর সংস্থান আছে।
কিন্তু এ ভাবে উপাচার্যের মেয়াদ বাড়ানোর ব্যাপারে মেন্টর গ্রুপের সুপারিশ করার আইনগত ক্ষমতা আছে কি না, প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্যবাবু। তিনি বলেন, “মেন্টর গ্রুপের তরফে ঠিক কী সুপারিশ করা হয়েছে, জানি না। তবে যদি ২০১৫-র ৩০ জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর সুপারিশ করে থাকে, সে-ক্ষেত্রে তারা এমনটা করতে পারে কি না, এই ব্যাপারে আইনে কী আছে, সবই খতিয়ে দেখা হবে। আইনসম্মত ভাবে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আচার্যের সঙ্গে আলোচনা করেই।”
কেন তাঁরা মালবিকাদেবীর মেয়াদ দু’বছর বাড়ানোর সুপারিশ করেছেন, মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান সুগতবাবু অবশ্য তার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁদের রিপোর্টে বলা হয়েছে, “২০১১ সালের ১৮ অক্টোবর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে মালবিকাদেবী প্রেসিডেন্সির মানোন্নয়নে যোগ্য নেতৃত্ব দিয়েছেন। গত ১৬ জুলাই ৭৬ জন শিক্ষকের সঙ্গে মেন্টর গ্রুপের যে-বৈঠক হয়েছিল, সেখানেও উপাচার্যের ভূয়সী প্রশংসা করা হয়েছে।” মেন্টর গ্রুপের সুপারিশ সম্পর্কে মালবিকাদেবীর প্রতিক্রিয়া, “মেন্টর গ্রুপ যে আমার উপরে এতটা ভরসা রেখেছে, তাতে আমি খুশি।”
মেন্টর গ্রুপ চায়, ২০১৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মালবিকাদেবী কাজ করুন। তত দিনে বিশ্ববিদ্যালয় একটা স্থিতিশীল অবস্থায় পৌঁছে যাবে। বিধানসভায় প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় বিল পাশ হলেও এখনও তার বিজ্ঞপ্তি জারি হয়নি। বিজ্ঞপ্তি জারির পরে সেই আইন মেনে বিধি তৈরি করা সম্ভব। মেন্টর গ্রুপ বলছে, মালবিকাদেবীর মেয়াদ শেষের আগে সেই সব আইনি প্রক্রিয়া সারা হলে রাজ্য উচ্চ পর্যায়ের সন্ধানী কমিটি গড়ে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় আইন মোতাবেক নতুন উপাচার্য নিয়োগ করুক। সেই উপাচার্য চার বছরের মেয়াদে কাজ করবেন।
|