জমি আন্দোলনের কী হবে, সংশয়ে লোবা
স্বপ্ন পূরণ হল না লোবার কৃষিজমি রক্ষা কমিটির। জমি আন্দোলনের পক্ষে ভোট সে ভাবে না পড়ায় কমিটিকে কার্যত উড়িয়ে দিয়ে লোবা পঞ্চায়েত দখল করল শাসকদল তৃণমূল। ১৪টি আসনের মধ্যে কৃষিজমি রক্ষা কমিটি পেয়েছে মাত্র ২টি।
লোবায় প্রাস্তাবিত খোলামুখ কয়লা খনি গড়তে আসা সংস্থার জমি কেনার পদ্ধতিকে ঘিরে ক্ষোভ এবং উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবিতে যে আন্দোলন গড়ে উঠেছিল তা বড় আকার নেয় ২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর। ওই দিনই কয়লা খনি গড়তে আসা সংস্থার মাটি কাটার যন্ত্র আটকে নিজেদের হেফাজতে রাখেন কমিটি ও স্থানীয় বাসিন্দারা। খনি গড়তে আসা সংস্থার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সখ্যতা এবং অন্যায় সুযোগ নিয়ে স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে দালাদের মাধ্যমে জমি কিনিয়ে দেওয়ার আভিযোগ যেমন আগের আগের বাম সরকারের কিছু স্থানীয় নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ছিল, সেই একই আভিযোগ উঠতে শুরু করে ২০১০-এ রাজ্যে ক্ষমতায় আসা শাসকদল তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধেও। তখনই সেটা সামনে আনে কৃষি জমি রক্ষা কমিটি ও স্থানীয় মানুষ।
এই যন্ত্র সরাতে এসেই ঝামেলায় পড়েছিল প্রশাসন। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত।
যদিও প্রথম থেকেই ওই আন্দোলনকে একটা বিচ্ছিন্ন আন্দোলন হিসাবেই দেখে এসেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু সেই আটকে রাখা গাড়ি ছাড়াতে গত ৬ নভেম্বর লোবায় পুলিশি আভিযানের পর থেকে আন্দোলন প্রকাশ্যে আসে। ওই দিনের ঘটনায় পাঁচ গ্রামবাসী আহত হয়েছিলেন, কমিটি ও গ্রামবাসীদের প্রত্যাঘাতে জখম হয়েছিলেন বেশ কিছু পুলিশ কর্মীও। বিষয়টি রাজ্য রাজনীতি তোলপাড় হয়েছিল। তখন খেকেই স্থানীয় মানুষের সমর্থন তাদের সঙ্গে রয়েছে ধরে নিয়েই কমিটি ভোটে লড়েছিল। কিন্তু ৯টি আসন পেয়ে লোবা পঞ্চায়েত দখল করে তৃণমূল এবং ৩টি আসন পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সিপিএম।
স্বাভাবিক ভাবে একটা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, কমিটির জমি আন্দোলন স্থায়ী হবে তো? তৃণমুলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বক্তব্য, “আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি জমি আন্দোলনের নামে এখানে যেটা হয়েছে, সেটা কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ জোর করে শিল্পের বিরোধিতা করছিলেন। মানুষের ক্ষতি করে তাঁদের ঠকিয়ে জমি নেওয়ার পক্ষে আমরা আগেও ছিলাম না এখনও নই। আমাদেরকে ফের ক্ষমতায় এনে সেটাই মানুষ প্রমাণ করল।” শুধু অনুব্রত মণ্ডল নন, সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আরুণ মিত্রও কৃষি জমি রক্ষা কমিটির ফল নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। তিনি বলেন, “আন্দোলনের কোনও দিশা না থাকলে এবং শিল্প আটকে এ ভাবে বিরোধিতার ফল এমনই হওয়ার ছিল।” তবে কমিটির আন্দোলনকে কটাক্ষ করলেও তৃণমূলের পক্ষে যাওয়া ফলাফলকে এলাকায় তৃণমূলের সন্ত্রাসের নামান্তর বলেই মনে করছেন অরুণবাবু। তাঁর দাবি, “নির্বাচনের আগে যে ধরনের সন্ত্রাস লোবা অঞ্চলের মেটেগ্রামে তারা চালিয়েছে, তার প্রভাব পড়েছে ভোট বাক্সে।”
যে জমি আন্দোলনকে টিকিয়ে রাখতে ভোটে লড়ার সিদ্ধান্ত, যে লড়াইয়ে পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখল করে নিজেদের দাবিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ ছিল কমিটির সামনে, ভোটের ফলে তা ধাক্কা খাওয়ায় এলাকার একটা বড় অংশের মানুষ মনে করছেন জমি আন্দোলন এ বার তলানিতে ঠেকে যাবে। ভোটের ফলে মন খারাপ হলেও নিজেদের আন্দোলন থেকে সরে আসবেন না বলে জানিয়েছেন কৃষি জমি রক্ষা কমিটির সম্পাদক জয়দীপ মজুমদার। তিনি বলেন, “শাসকদলের চাপ ও সন্ত্রাসের ফলে সব ক’টি আসনে প্রার্থীই দিতে পারিনি। তিনটি বুথে এজেন্ট পর্যন্ত দিতে পরানি। আক্রান্ত হয়েছেন আমাদের সদস্যরা। তাই বলে মানুষের সমর্থন আমাদের সঙ্গে নেই এটা কিছুতেই বলা যাবে না। তা ছাড়া, আমাদের দুই সদস্য তো পঞ্চায়েতে যাচ্ছেন। তাঁরা নিজেদের বক্তব্য ঠিকই পেশ করবেন।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.