গুরু-শিষ্যের লড়াইতে শেষ পর্যন্ত জয় হল গুরুরই।
গুরুর আস্তিনে যে সত্যি জয়ের চাবিকাঠি লুকনো ছিল, গননাকেন্দ্রের বাইরে এসে একরাশ হতাশায় সে কথা স্বীকার করে নিলেন ‘শিষ্য’ ধরম কর্মকার। একশো ভোটের ব্যবধানে জিতে নিজের শিবিরে অবশ্য নির্লিপ্তই বসে থাকলেন ‘গুরু’ শ্যামল মজুমদার। হয়তো কিছুটা হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন মর্যাদার লড়াইতে সম্মানজনক অবস্থায় থাকতে পেরে।
সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতিতে এ বার কার্যত ধরাশায়ী হয়েছে কংগ্রেস। গত বারের ফলের ধারেকাছেও যেতে পারেনি দল। তবে গণনায় বিশেষ কৌতুহল ছিল ৯ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির আসনটি নিয়ে। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস সেই আসন ধরে রাখতে পেরে স্বস্তি কংগ্রেসে। এই আসনে সম্মুখ সমরে নেমেছিলেন দুই হেভিওয়েট প্রার্থী, কংগ্রেসের শ্যামল মজুমদার ও তৃণমূলের ধরম কর্মকার। রাজনীতির মধ্যগগনে যখন শ্যামলবাবুর ঘোরাফেরা তখন সদ্য ছাত্রাবস্থার গণ্ডি পেরোনো ধরম কর্মকারের রাজনীতিতে প্রবেশ।
রাজনীতির অআকখ কার্যত শ্যামলবাবুর কাছেই শিখেছিলেন ধরম। বস্তুত একাধিক পঞ্চায়েত নির্বাচনে শ্যামলবাবুর কাঁধে ভর করে জিতেছিলেন তিনি। গত বারও শ্যামলবাবু ধরমবাবুর হয়ে প্রচার করেছেন। কিন্তু জিতে আসার পরে ধরমবাবু শিবির পাল্টে চলে যান তৃণমূলে। আর এ বার তাঁরা মুখোমুখি হন ওই পঞ্চায়েত সমিতি আসনে। |
|
|
শ্যামল মজুমদার ও ধরম কর্মকার। —নিজস্ব চিত্র। |
|
সোমবার সকাল থেকেই গণনাকেন্দ্রের আশপাশে ঘোরাফেরা করতে দেখা গিয়েছে শ্যামলবাবুকে। গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রতিদ্বন্দ্বী দলীয় কর্মীদের সামলেছেন। সমিতির ব্যালটবক্স খোলা হতেই বোধহয় স্নায়ুর চাপে ভুগতে শুরু করেন তিনি। শিবিরের এককোনে চেয়ারে বসে ঘনঘন সিগারেটে টান দিতে থাকেন। কী হবে ফল? ঠোঁটের কোণে একচিলতে হাসি এনে বলেন, “গ্রাম পঞ্চায়েতের যা ফলাফল তাতে আর ভরসা করছি না।”
তৃণমূলের শিবিরে সকাল থেকে দেখা মেলেনি ধরমবাবুর। পঞ্চায়েত সমিতির ব্যালটবাক্স খোলার ঠিক আগে এসে হাজির হন। দলীয় কর্মীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় সেরেই সটান চলে যান গণনাকেন্দ্রে। কী হবে ফল, জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “আমি তো জিতব। এর আর নতুন কী।”
সমিতির গণনা যখন মাঝপথে, হাসিমুখে কেন্দ্রের বাইরে বেরিয়ে এলেন ধরমবাবু। জানালেন, গণনা চলছে। বেশ কিছু ভোটে এগিয়ে রয়েছেন তিনি। তখনও ধারপাশে দেখা যায়নি শ্যামলবাবুকে। তৃণমূলের অন্দরে ইতিমধ্যেই ধরমবাবুর পক্ষে হাওয়া বইতে শুরু করেছে।
গণনার একেবারে শেষলগ্নে সেই ধরমবাবুই বেরিয়ে এলেন সবার আগে। একরাশ হতাশা নিয়ে জানিয়ে দিলেন, “জিততে পারলাম না।” কী করে এমন হল? তাঁর দাবি, “সিপিএমের লোকেরা শেষমেশ কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছে। তাই হেরেছি।” ততক্ষণে খবর পৌঁছে গিয়েছে কংগ্রেসের শিবিরেও। শ্যামলবাবুর ধমকে অবশ্য মিইয়ে গেল আবির আনার তোড়জোড়। নিজে সেঞ্চুরি হাঁকলেও দল যে কুপোকাত। |