সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারিতে ধৃতদের বিরুদ্ধে সব মামলা একত্র করে একটিই মামলা করার জন্য অনেক আগেই আবেদন জানান অভিযুক্তদের আইনজীবীরা। কিন্তু এত দিন সরকার পক্ষ তার বিরোধিতা করছিল। মঙ্গলবার সেই সরকার পক্ষই আপাতত সারদা কাণ্ডের দু’টি মামলাকে এক করার আবেদন জানাল। আর তার বিরোধিতা করলেন অভিযুক্তদের আইনজীবী!
সারদা কাণ্ডে দু’টি বেতন সংক্রান্ত মামলায় ওই গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন, ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায়, অরবিন্দ চৌহান ও মনোজ নাগেলকে এ দিন বিধাননগর এসিজেএম আদালতে তোলা হয়। তখনই সরকার পক্ষ দু’টি মামলাকে একত্রে আনার আবেদন জানায়। অভিযুক্তদের আইনজীবীরা তার বিরোধিতা করেন। বিচারক এই বিষয়ে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন ৭ অগস্ট। অভিযুক্তদের জামিনের আবেদন নাকচ করে ৩০ জুলাই পর্যন্ত তাঁদের ফের জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয় আদালত।
দু’টি মামলাকে কেন এক করা দরকার, তা ব্যাখ্যা করেন বিশেষ সরকারি আইনজীবী শেখর চক্রবর্তী। তিনি জানান, দু’টি মামলারই বিষয় এক। অভিযোগের প্রকৃতিও এক। তাই চার্জ গঠনের ক্ষেত্রে দু’টি মামলাকে এক করে একটি মামলা করা হোক। তার আবেদনও পেশ করা হয় আদালতে। অভিযুক্তদের পক্ষে অনির্বাণ গুহঠাকুরতা, সমীর দাস, সৌম্যজিৎ রাহা প্রমুখ আইনজীবী একযোগে এর বিরোধিতা করেন। তাঁদের বক্তব্য, প্রথম থেকে তাঁরা সারদা সংক্রান্ত সব মামলাকে এক করে একটিই মূল মামলা করার আবেদন জানিয়ে আসছিলেন। তখন সরকার পক্ষ বারবার এর বিরোধিতা করেছিল। সরকার পক্ষ এখন দু’টি মামলাকে এক করার নামে চার্জ গঠন ও শুনানি পিছিয়ে দিতে চাইছে। দু’পক্ষের সওয়াল-জবাবের ভিত্তিতে পরবর্তী দিন ধার্য করেন বিচারক।
আদালত সূত্রের খবর, বেতন সংক্রান্ত ওই দু’টি মামলায় অভিযুক্তদের চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এ দিন চার্জ গঠনের কথা ছিল। আইনজীবী মহলের একাংশের মত, রাজ্য সরকার সারদা কাণ্ডের দ্রুত নিষ্পত্তি চাইছে না। তদন্ত ও মামলার গতিপ্রকৃতি দেখেই সেটা স্পষ্ট হচ্ছে। তাই দু’টি মামলাকে একত্র করার আবেদন করা হয়েছে। বিশেষ সরকারি আইনজীবী জানান, দু’টি মামলার পৃথক তদন্ত হয়েছে। বিষয়বস্তু ও অভিযোগের গতিপ্রকৃতি একই রকম হওয়ায় তাঁরা মনে করছেন, দু’টি মামলাকে এক করা প্রয়োজন। তাই এই আবেদন। সারদা কাণ্ডে ধৃত দেবযানীর আইনজীবীর অভিযোগ, মামলাগুলিকে এক করা যে প্রয়োজন, সরকার পক্ষ তা এত দিন অস্বীকার করছিল। ঠিক চার্জ গঠন করে শুনানির সময়েই তারা মামলাগুলিকে এক করে ফের সময় নষ্ট করতে চাইছে।
সারদা-কাণ্ডের যথাযথ তদন্ত হচ্ছে না বলে এ দিন অভিযোগ তোলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। সেবি-র নির্দেশ সত্ত্বেও লক্ষ লক্ষ বিনিয়োগকারী টাকা ফেরত পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও দিয়েছেন তিনি। কয়েক মাস আগে বামফ্রন্টের সাংসদ ও বিধায়কেরা প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে সারদা-সহ বিভিন্ন অর্থ লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। কী ভাবে সেবি-সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থা ওই সব লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে, ৬ জুন কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক তা বিস্তারিত ভাবে জানায়।
সূর্যবাবু প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে লেখা চিঠিতে অভিযোগ করেছেন, রাজ্য সরকার যে-ভাবে সারদা কাণ্ডের তদন্ত করছে, তাতে বিনিয়োগকারীদের অর্থ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। দোষীদের শাস্তি পাওয়ার সম্ভাবনাও নেই। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত সারদার বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি বা দেওয়ানি মামলা রুজু করা হয়নি। বস্তুত, তৃণমূলের সাংসদেরা যে-ভাবে সারদা এবং অন্য অর্থ লগ্নি সংস্থা অ্যালকেমিস্টের সঙ্গে যুক্ত, তাতে যথাযথ তদন্তের জন্য সিবিআইয়ের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলেও সূর্যবাবু ওই চিঠিতে লিখেছেন।
সূর্যবাবু এ দিন বলেন, “আমাদের দাবি, সুপ্রিম কোর্ট বা হাইকোর্টের নজরদারিতে তদন্ত হোক। রাজ্য পুলিশ, সিবিআই, সেবি-সহ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থা একসঙ্গে তদন্ত করে লুঠ করা টাকা আমানতকারীদের দ্রুত ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করুক।”
|