বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছিলেন ‘নামী কবি, সাংবাদিক ও লেখক’। ‘অমর কথাশিল্পী’ বলে খ্যাত শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ইংরেজি বিশেষণ, ‘ইমমর্টাল ওয়র্ডসওয়র্থ’। উৎপল দত্ত জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন ‘বাংলা’ সিনেমা ‘ভুবন সোম’-এ অভিনয়ের জন্য!
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন দফতরের প্রকাশিত বইয়ে এমন অজস্র ভুল তথ্য পাঠককে বিস্মিত করছে। ‘ম্যাপমাইইন্ডিয়া: ওয়েস্ট বেঙ্গল’ নামে এই বইটির উদ্দেশ্য, দেশি-বিদেশি পর্যটকের কাছে পশ্চিমবঙ্গকে আকর্ষণীয় ভাবে তুলে ধরা। মানচিত্র-গাইডটির প্রতি পাতায় লোগো-সহ ছাপা হয়েছে ‘পর্যটন দফতর, পশ্চিমবঙ্গ সরকার’-এর নাম। প্রশ্ন উঠছে, সরকারি তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত এমন বইয়ে এত ভুল হল কী করে।
বইয়ের ২০২ পৃষ্ঠা থেকে শুরু হয়েছে ‘নো ওয়েস্টবেঙ্গল বেটার...’ অধ্যায়টি। বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতী বাঙালিদের পরিচিতি ছাপা হয়েছে সেখানে। কেমন সেই পরিচিতি? |
শরৎচন্দ্রের লেখা একটি উপন্যাসের নাম বলে উল্লিখিত হয়েছে ‘ভারতী’, যা আদতে সেই সময়কার এক সাময়িকপত্র। ‘দেবদাস’-এর ইংরেজি নামকরণ হয়েছে ‘সার্ভেন্ট অফ দ্য গডস’, ‘বড়দিদি’ হয়েছে ‘বিগ সিস্টার’। এখানেই শেষ নয়। জানানো হয়েছে, অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের (সঙ্গের ছবিটিও তাঁর নয়) প্রথম অভিনীত ছবির নাম ‘তিন ভুবনের পারে’। শম্ভু মিত্র সম্পর্কে একটিই নাটকের উল্লেখ রয়েছে, ‘নবান্ন’। শুধু তাই নয়, তাঁর সেরা কাজের তালিকায় রয়েছে, ‘অভিনয় নাটক মঞ্চ’, ‘নাটক রক্তকরবী’, ‘প্রারম্ভিক’ এবং ‘চাঁদবণিকের পালা’। এর মধ্যে প্রথম দু’টি নাটকই নয়, প্রবন্ধের বই।
২০১২-তে প্রকাশিত (আইএসবিএন নম্বর ৯৭৮-৮১-৯২৪২৫৭-৬-৪) বইটি সম্পর্কে অবশ্য খোঁজই রাখেন না পর্যটনসচিব বিক্রম সেন। যদিও বইটির প্রকাশনা-সংস্থা স্পষ্ট লিখে দিয়েছে, এ বইয়ে প্রকাশিত তথ্যের দায় ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্যুরিজম’-এর। খবরটি শোনার পরে সচিবের বক্তব্য, “পরবর্তী সংস্করণে ভুলগুলো সংশোধন করা হবে।” পর্যটনমন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী বলেন, “বিষয়টি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। যার বা যাদের গাফিলতিতে এত ভুল হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |
কিন্তু তত দিন ভিনরাজ্য বা বিদেশি পর্যটকদের কাছে কোন পশ্চিমবঙ্গকে তুলে ধরবে এই বই? শিক্ষামন্ত্রী তথা বিশিষ্ট নাট্যকার ব্রাত্য বসু বলেন, “বইটি এখনও দেখিনি। তবে এমন সব ভুল হলে অমার্জনীয় অপরাধ হয়েছে। অবিলম্বে ভুল শুধরে নেওয়া উচিত।” সরকারের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কমিটিতে যুক্ত নাট্যকর্মী অর্পিতা ঘোষের প্রতিক্রিয়া, “এমন ভুল ছাপা হলে লজ্জার বিষয়। আরও সচেতন হয়ে এ ধরনের বই প্রকাশ করা উচিত।” নাট্যপরিচালক ও চলচ্চিত্রকার সুমন মুখোপাধ্যায় বলেন, “এমন দায়িত্বজ্ঞানহীনতা পশ্চিমবঙ্গবাসী হিসেবে আমাদের মুখই পোড়ায়। অবস্থাটা কোথায় পৌঁছেছে বোঝাই যাচ্ছে।” শহরের সাংস্কৃতিক পরিচয় দিতে গিয়ে নাট্যব্যক্তিত্ব হিসেবে বইতে রাখা হয়েছে ব্রাত্য-সুমনের নামও। |