এখন দম ফেলারও সময় নেই। এক বার এই গ্রাম তো পরের বার বহু কিলোমিটার দূরের আর একটি গ্রাম। প্রতি দিনই উত্তরাখণ্ডের বিস্তীর্ণ অঞ্চল চষে ফেলতে হয় তাঁকে। তিনি ক্যাপ্টেন ভূপেন্দ্র। উত্তরাখণ্ডের অসামরিক বিমানচালকদের মধ্যে অন্যতম। মূলত পুণ্যার্থীদের নিয়ে হেলিকপ্টারে করে চারধামের বিভিন্ন দুর্গম অঞ্চলে নিয়ে যাওয়াই তাঁর কাজ।
সেই কারণেই চারধামের প্রতিটা অঞ্চলই তাঁর হাতের তালুর মতো চেনা। আর সেই অভিজ্ঞতাকেই কাজে লাগিয়েছিল উত্তরাখণ্ড সরকার। ১৬ জুন মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে বাকি রাজ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে কেদারনাথ ও সংলগ্ন বেশ কয়েকটা গ্রাম। ঠিক কী ঘটেছে তা জানতে ১৭ জুন ভূপেন্দ্রকেই প্রথম পাঠিয়েছিলেন বহুগুণা সরকার।
ভূপেন্দ্রর কথায়, “প্রবল কুয়াশা ভেদ করে যাওয়াটাই বেশ কঠিন ছিল। ভাবলাম আগে এক বার রামওয়াড়াটা ঘুরে যাই। কিন্তু হেলিকপ্টারটা যত এগোতে লাগল ততই ভয় করতে লাগল। কোথায় রামওয়াড়া? দু’দিন আগেও যেখানে তীর্থযাত্রীদের নিয়ে গিয়েছি, সেই গোটা জনপদটাই উধাও।” ঘোর কাটতেই বেশ কিছু ক্ষণ সময় লেগে গিয়েছিল ভূপেন্দ্রর। ধীরে ধীরে যত এগোতে লাগলেন, ধ্বংসের ভয়াবহতাটাও তত স্পষ্ট হতে লাগল।
একই অভিজ্ঞতা ক্যাপ্টেন ডি এস চৌধুরীরও। প্রাক্তন এই বায়ুসেনা অফিসার ভূপেন্দ্রর মতোই অসামরিক বিমানচালক। এখন উদ্ধারকাজে ব্যস্ত। বললেন, “এই অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে বিমান চালানো এমনিতেই কষ্টকর। তার উপর পুরো উপত্যকা জুড়েই হাই টেনশন তার ছড়িয়ে রয়েছে। তাই কোনও দুর্গত এলাকায় প্রাণ হাতে করে নামতে হচ্ছে।” আবার ভূপেন্দ্র জানালেন, উদ্ধারকাজ চালানোর জন্য যে অস্থায়ী হেলিপ্যাডগুলো তৈরি করা হয়েছে, তার বেশিরভাগই আকারে এত ছোট যে হেলিকপ্টার নামানোই প্রায় অসম্ভব। তা ছাড়া অনেক জায়াগাতেই দু’টো পাহাড়ের মধ্যে ফাঁক এত কম যে পাহাড়ের সঙ্গে কপ্টারের ডানাগুলোতে ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা থাকে। ওই এলাকাগুলোতে উল্টোপাল্টা দিকে আর এত জোরে হাওয়া বয়ে যায় যে কপ্টারের দিক নির্দেশও কঠিন হয়ে পড়ে।
পদে পদে এত বিপদ আর মৃত্যুর আশঙ্কা সত্ত্বেও নিজেদের কর্তব্য থেকে এতটুকু বিচ্যুত হতে রাজি নন ভূপেন্দ্ররা। বরং ভারত-তিব্বত সীমান্ত পুলিশের সঙ্গে সমান তালে উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আর সেই সঙ্গে একটাই প্রার্থনা, তাঁরা পৌঁছনোর আগে আর যেন কারও মৃত্যু না হয়। |