লোকসভা ভোটের আগে মেরুকরণের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়লে কতটা উপকার হবে তাতে গোড়া থেকেই সন্দিহান ছিলেন কংগ্রেস নেতারা। তার ওপর নরেন্দ্র মোদী যে ভাবে মুসলিম তোষণের তকমা সেঁটে দিতে তৎপর, তা-ও হিন্দু ভোট হারানোর আশঙ্কা ঘনাচ্ছিল ২৪ আকবর রোডে। কংগ্রেস এ বার তাই হিন্দু তথা সংখ্যাগরিষ্ঠদেরও বার্তা দিতে নেমে পড়ল। বক্তব্য, নরেন্দ্র মোদী বা সঙ্ঘ পরিবারের অসহিষ্ণুতা ও ঘৃণার মতাদর্শ আসলে হিন্দুত্বই নয়। এক জন ভাল হিন্দু অন্য ধর্মের প্রতি সহনশীল।
বিজেপি মোদীকে লোকসভা ভোটের প্রচার কমিটির দায়িত্ব দেওয়ার আগে থেকেই কংগ্রেস নেতারা তাঁকে সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্নে বিঁধছেন। সেই আক্রমণের পুরোধা ছিলেন রাহুল গাঁধীর ঘনিষ্ঠ দিগ্বিজয় সিংহ। কৌশলে আজ দিগ্বিজয়কে দিয়েই হিন্দুদের বার্তা দেওয়ার কাজটি করতে চাইলেন রাহুল। এটাকে ভারসাম্যের রাজনীতি বলেই মনে করছেন দলের অনেকে।
দিগ্বিজয় আজ তাঁর ব্লগে লিখেছেন, “আমি এক জন হিন্দু। দ্বারকার জগৎগুরু শঙ্করাচার্যের কাছে দীক্ষা নিয়েছি। রোজ আধ ঘণ্টা প্রার্থনা করি এবং গায়ত্রী মন্ত্র জপ করি। রাঘোগড়ে আমার বাড়িতে ৯টি মন্দির রয়েছে। সেখানে রোজ পুজো হয়। একাদশীতে রাতভর চলে কীর্তন ও আমি উপোস করি। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবার আমার বিরুদ্ধে হিন্দু-বিরোধী বলে প্রচার চালাচ্ছে।” ব্লগে দিগ্বিজয়ের দাবি, বিজেপি-সঙ্ঘের হিন্দুত্বের সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক নেই। এরা মানুষকে বোকা বানাতে চাইছে। আর তাই এক জন প্রকৃত হিন্দু হিসেবে মিথ্যা প্রচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন তিনি।
পরে সাংবাদিকদের কাছে দিগ্বিজয় অভিযোগ করেন, গুজরাতের ভোটে প্রতি বার মোদী প্রচার শুরু করেন উন্নয়নের প্রশ্নে। কিন্তু পরের দিকে তোলেন সাম্প্রদায়িকতার প্রসঙ্গ। এ বার লোকসভা ভোটের আগেও ধর্মীয় মেরুকরণের বাতাবরণ গড়ে তুলতে চাইছেন। এটাই তাঁর রসায়ন। দিগ্বিজয়ের কথায় স্পষ্ট, মোদীর রসায়ন ঘেঁটে দিতেই হিন্দুত্ব জাহির করছেন তিনি। তাঁর নিশানায় হিন্দুদের দু’টি অংশ। এক, যাঁরা কংগ্রেসের প্রতি সহানুভূতিশীল কিন্তু ক্রমাগত ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে দলের সংখ্যালঘু ভোট পাওয়ার চেষ্টাকে ভাল চোখে দেখছেন না। দ্বিতীয় অংশটি হল শহুরে শিক্ষিত ও সহিষ্ণু হিন্দু, মোদীর উগ্র হিন্দুত্বের বার্তা যাঁরা মোটেই পছন্দ করছেন না। |