|
|
|
|
ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে কংগ্রেসকে কটাক্ষ মোদীর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
কুকুরছানার উপমা নিয়ে গত দু’দিন ধরে লাগাতার আক্রমণ শানিয়েছে বিরোধীরা। আজ তার
কড়া জবাব দিলেন নরেন্দ্র মোদী। কংগ্রেস সঙ্কটে পড়লেই ধর্মনিরপেক্ষতার বোরখা পরে দৃষ্টি ঘোরানোর চেষ্টা করে বলে পুণের সভায় তোপ দাগলেন তিনি।
সকালে পুণের ফার্গুসন কলেজের অনুষ্ঠান থেকে বিকেলের জনসভা দু’বেলার বক্তৃতাতেই শাসক দলকে তুলোধোনা করেছেন মোদী। দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধি, দারিদ্র, বেকারত্ব নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ থেকে শুরু করে সনিয়া গাঁধী, রাহুল গাঁধীকে যেমন বিঁধেছেন, তেমনই কৌশলে আরও এক বার উস্কে দিয়েছেন সাম্প্রদায়িকতা বনাম ধর্মনিরপেক্ষতা বিতর্ক। যে প্রসঙ্গেই আজ তিনি বলেছেন, “যখনই কোনও সঙ্কট আসে, কংগ্রেস ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশ পরে বাঙ্কারে ঢুকে যায়। লক্ষ করে দেখুন, দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধি, সুপ্রিম কোর্টের কোনও নির্দেশ অথবা মন্ত্রীর জেল, ধর্ষণকাণ্ড কিংবা অনিশ্চয়তার বাতাবরণ এ রকম যে কোনও চ্যালেঞ্জের মুখে কংগ্রেস যখনই পড়ে, তারা কিন্তু জনতাকে জবাব দেয় না। কংগ্রেসের এই জড়িবুটি আর কাজে আসবে না।” যার উত্তরে কংগ্রেস নেতা শাকিল আহমেদ টুইটারে বলেছেন, “ধর্মনিরপেক্ষতার আবরণ ওঁদের সাম্প্রদায়িকতার চেয়ে ভাল।” |
|
ফের জবাব মোদীর। ছবি: পিটিআই। |
বিরোধী দলগুলি মনে করছে, আজকের মন্তব্যের মধ্যে দিয়েও মোদী ফের মেরুকরণের চেষ্টা করলেন। তা না হলে তিনি ধর্মনিরপেক্ষতার আড়াল নেওয়ার কথা বলতেন না। আসলে বিজেপি বরাবর কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু তোষণের অভিযোগ করে এলেও তারা এ-ও জানে, চেষ্টা করলেও সংখ্যালঘু ভোট তাদের ঝুলিতে পড়ার সম্ভাবনা কম। সেই কারণে অনেকে মনে করছেন, মোদী এখন পাল্টা মেরুকরণেরই কৌশল নিচ্ছেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু ভোটই টানতে চাইছেন বিজেপির প্রচার কমিটির প্রধান। ক’দিন আগেই উত্তরপ্রদেশে মোদীর ঘনিষ্ঠ নেতা অমিত শাহ রামমন্দির প্রসঙ্গ উস্কে দিয়েছিলেন। আজ পুণেতে ওই মন্তব্য করে মোদী নিজেও একই ধরনের ইঙ্গিত দিলেন। আজ সকালে ফার্গুসন কলেজের অনুষ্ঠানে সেখানকার প্রাক্তনী বিনায়ক দামোদর সাভারকরের কথা বারবার উল্লেখ করেন মোদী। শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে সঙ্ঘের অবস্থান মেনে ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশে বলেছেন, তিনি ‘গুরুকুল’ থেকে ‘বিশ্বকুল’-এ পৌঁছতে চান। তবে আধুনিকতার নামে শিক্ষার পশ্চিমীকরণ তাঁর লক্ষ্য নয়।
বিজেপির এক নেতার কথায়, কংগ্রেসের মতো সংখ্যালঘু তোষণের পথে হাঁটতে চান না মোদী। তিনি নিজেও বারবার স্পষ্ট করেছেন, তাঁর উন্নয়নের মডেলে ধর্মভেদ করা হয় না। গুজরাতেও এই নীতি অনুসরণ করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও মোদীকে ঘিরে বারবার সাম্প্রদায়িকতার প্রসঙ্গ তোলা হচ্ছে। অথচ কংগ্রেসের ব্যর্থতার দিকগুলি ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে।
বস্তুত, মোদীও আজ একের পর এক প্রসঙ্গ উল্লেখ করে কংগ্রেসের ব্যর্থতার দিকগুলি চিহ্নিত করতে চেয়েছেন। সনিয়া গাঁধীর স্বপ্নের খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প রূপায়ণে অর্ডিন্যান্স আনার ঘোর বিরোধিতা করেছেন তিনি। বলেছেন, “দারিদ্র দূরীকরণের প্রতিশ্রুতি রাখতে না পেরে কংগ্রেস এখন এক টুকরো কাগজ ধরিয়ে দিচ্ছে।” আবার দেশের আর্থিক দুরবস্থা ও টাকার দাম পড়ে যাওয়া নিয়ে নাম না করে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে বিঁধতে গিয়ে বলেছেন, “কংগ্রেস এমনই একটা ধারা, যেখানে সেরা অর্থনীতিবিদরাও ধ্বংসের পথে এগিয়ে যান।” সুরেশ কলমডীর শহর পুণেতে দাঁড়িয়ে তুলেছেন কমনওয়েলথ দুর্নীতির প্রসঙ্গও।
তবে তাঁর আক্রমণ সব চেয়ে চড়া ছিল রাহুল গাঁধীর বিরুদ্ধেই। এ ক্ষেত্রেও কংগ্রেস সহ-সভাপতির নাম করেননি তিনি। কিন্তু দরিদ্র ঘরে গিয়ে রাহুলের খেতে বসাকে (যেখানে সংবাদমাধ্যমও থাকে) কটাক্ষ করে বলেছেন, “স্বাধীনতার পর এত বছর কংগ্রেস মানুষকে কী ভাবে গরিব করে রেখেছে, তারই নমুনা দিতে চান শাহাজাদা।” এ-ও অভিযোগ করেছেন, দেশের সমস্যার মূলে রয়েছে পরিবারতন্ত্রের রাজনীতি। আজ মনমোহন সরকারকে প্রকাশ্য বিতর্কের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন মোদী। বলেছেন, অটলবিহারী বাজপেয়ীর ছ’বছর বনাম মনমোহন সিংহ সরকারের দশ বছরের জমানার তুল্যমূল্য বিচার হোক। তা হলেই দেখা যাবে, বাজপেয়ীর সরকার কত ‘শানদার’ ছিল।
|
পুরনো খবর: মোদী সংবেদনশীল, পাশে দাঁড়াল দল |
|
|
|
|
|