উপমা বিতর্কে আক্রমণ জারি কংগ্রেসের
মোদী সংবেদনশীল, পাশে দাঁড়াল দল
পমা বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না নরেন্দ্র মোদীর! উল্টে কংগ্রেস, সমাজবাদী পার্টি, জেডিইউ-রা মিলে তাকে যে বড় আকার দিতে চলেছেন, তা-ও এ দিন স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতির মোকাবিলায় তাই আজ ব্যাখ্যা দিতে হয়েছে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়কে। মোদীর হয়ে নামতে হয়েছে বিজেপি মুখপাত্রদেরও।
গুজরাত দাঙ্গার ঘটনা নিয়ে তিনি অনুতপ্ত কি না প্রশ্ন করা হলে এক সাক্ষাৎকারে মোদী বলেছিলেন, “গাড়ির তলায় যদি একটা কুকুর ছানাও চলে আসে, সেটা তো অবশ্যই দুঃখের।” গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য ঘিরেই গত ২৪ ঘণ্টা ধরে তোলপাড় জাতীয় রাজনীতি। তাঁকে সংকীর্ণমনা সাম্প্রদায়িক নেতা বলে গাল পাড়ছেন কংগ্রেস, সপা, জেডিইউ নেতারা। পরিস্থিতি সামলাতে গত কালই একপ্রস্ত ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন মোদী। আজ ফের তাঁর সচিবালয়ের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়, “মোদীর বক্তব্যের অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে। অথচ তাঁর কথায় সংবেদনশীলতাই ধরা পড়েছে। তিনি একটি উপমা দিয়ে বোঝাতে চেয়েছিলেন, একটি কুকুর ছানা আহত হলেও মানুষ দুঃখ পায়। আর মানুষ মারা গেলে দুঃখ হবে না, সেটা ভাবাই যায় না!” আবার বিজেপি মুখপাত্র রাজীবপ্রতাপ রুডির কথায়, “কংগ্রেস ইচ্ছাকৃত ভাবে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। দাঙ্গা পীড়িতদের প্রতি মোদী সহানুভূতিই দেখাতে চেয়েছেন। মন্তব্যটি থেকে তাঁর শিশুর মতো কোমল হৃদয়ের পরিচয়ও পাওয়া যাচ্ছে।”
যদিও মোদী বা বিজেপি-র এই ব্যাখ্যায় ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলি সমালোচনা বন্ধ করছে না। তা ছাড়া এই প্রশ্নও উঠেছে: মোদী যে শব্দব্রহ্ম ছেড়েছেন, তা কি নিতান্তই মুখ ফসকে? নাকি ইচ্ছে করেই ভাসিয়ে দিয়েছেন উপমাটি!
কংগ্রেস এখন কৌশলে এই উপমা-বিতর্কে মোদীকেই পাল্টা বিঁধতে চাইছে। যাতে সেই বিতর্কের আড়ালে মূল্যবৃদ্ধি, দুর্নীতি, নীতি স্থবিরতা-সহ সরকারের ব্যর্থতার বিষয়গুলি ঢাকা পড়ে যায়। সে জন্য এ দিনও মোদীকে তুলোধোনা করতে ছাড়েননি কংগ্রেস নেতৃত্ব। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কপিল সিব্বল বলেন, “মোদী তো গাড়ির পিছনের আসনে ছিলেন না। উনিই তো মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন! ওঁরই তো রাজ্য চালানোর কথা! ওঁর হয়ে যদি কেউ গাড়ি চালায়, তা হলে তার দায়ও মোদীর।” গত কাল মোদী নিজেকে হিন্দু জাতীয়তাবাদী বলে তুলে ধরেছিলেন। সেই প্রসঙ্গেও তাঁকে কটাক্ষ করে কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহ আজ বলেন, “মোদী বিভাজনের রাজনীতি করছেন। নিজেকে ভারতীয় জাতীয়তাবাদী বলতে অসুবিধা কোথায়?”
তবে এই সব প্রকাশ্য চাপানউতোরের বাইরে কংগ্রেস নেতারা মোদীর প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়েও সন্দিহান। এবং ঠাওর করার চেষ্টা করেছেন, মোদী কেন ওই উপমাটি দিলেন?
কংগ্রেসের এক শীর্ষ সারির নেতার কথায়, এ ক্ষেত্রে দু’টি সম্ভাবনা রয়েছে। প্রথমত, মোদী হয়তো ভুল করেই উপমাটি ব্যবহার করেছিলেন। এখন বিতর্কের মুখে পড়ে ভুল শোধরাতে চাইছেন। কেন না বিজেপি তাঁকে কার্যত প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরার পর ইদানীং দেখা গিয়েছে, মোদী নিজে মেরুকরণের তাসটি খেলছেন না। তা করাচ্ছেন তাঁর অনুচর অমিত শাহকে দিয়ে। তাই বিশ্ব হিন্দু পরিষদের অনুরোধ সত্ত্বেও নিজে তিনি অযোধ্যা যাননি, কিন্তু অমিত শাহকে পাঠিয়েছেন। সহনশীল হিন্দুদের মন পেতে মোদী যদি সেই পথে হাঁটেন, তা হলে সুচিন্তিত ভাবে ওই উপমাটি তিনি দেবেন না।
কংগ্রেস নেতাদের কথায়, দ্বিতীয় সম্ভাবনাটি হল যে, মোদী পরিকল্পিত ভাবেই এই মন্তব্য করেছেন। যাতে সঙ্ঘ পরিবার এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা কর্মীরা তাঁর ওপর খুশি হন। আর তার মাধ্যমে তিনি যাতে দলের মধ্যে লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজদের মোকাবিলা করতে পারেন।
তবে যে কারণেই মোদী এ কথা বলে থাকুন, বিজেপি কিন্তু এখন ক্রমাগত ব্যাখ্যা দিয়েই চলেছে। সূত্রের খবর, গুজরাত দাঙ্গা সংক্রান্ত মন্তব্যটি নিয়ে বিতর্কের ঝড় ওঠার পর মোদী বিজেপি মুখপাত্রদের তা মোকাবিলার নির্দেশ দেন। বিজেপি মুখপাত্ররা এবং মোদীর নিজস্ব টিম তার পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় হয়ে ওঠে। সাক্ষাৎকারে মোদী প্রশ্নের জবাবে যা বলেছিলেন, তা ইংরেজি ও হিন্দিতে তর্জমা করে তুলে ধরা হয়।
তবে এত সহজে যে বিতর্ক মিটবে না, সেটা বিজেপি নেতৃত্বও বুঝতে পারছেন। তাঁদের বক্তব্য, মোদী কী বোঝাতে চেয়েছিলেন, তা কেউই এখন জানতে চাইবে না। রাজনীতিতে তা কেউ জানতে চায়ও না। মুখ থেকে এক বার বেরিয়ে যাওয়া শব্দ নিয়েই কাঁটাছেঁড়া হয়। এবং বিরোধীরা সব বুঝেও রাজনৈতিক কারণে বিপরীত অর্থ খুঁজে বের করে বিভ্রান্তি ছড়ান। সেটাই দস্তর। ফলে বিজেপি এখন যা-ই ব্যাখ্যা দিক কংগ্রেস, নীতীশ কুমার, মুলায়ম সিংহরা কেউই এখন সহজে ‘কুকুর ছানাকে’ মোদীর পিছু ছাড়তে দেবেন না।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.