|
|
|
|
দেরি নিয়ে ক্ষুব্ধ রাহুল |
খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প সময়ে চালুর ব্যাপারে বাধা কংগ্রেসি রাজ্যগুলিই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের রূপায়ণ আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু করার সঙ্গে তাল মিলিয়ে একই সময়ে সংসদে এই সংক্রান্ত বিলটি পাশের পরিকল্পনা নিয়েছিলেন সনিয়া ও রাহুল গাঁধী। তাঁদের কৌশল ছিল, সে ক্ষেত্রে লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রকল্পটি নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা হবে এবং এই প্রকল্পের জন্য রাজনৈতিক কৃতিত্ব নিতে পারে কংগ্রেস। কিন্তু মা-ছেলের সেই কৌশল কিছুটা হলেও আজ ধাক্কা খেল।
কংগ্রেস সূত্রে খবর, খাদ্য সুরক্ষা বিল নিয়ে সরকার অর্ডিন্যান্স জারি করার পর হাইকম্যান্ডের প্রস্তাব ছিল, ২০ অগস্ট রাজীব গাঁধীর জন্মদিনে কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলিতে প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু করে দেওয়া হোক। সেই সঙ্গেই সংসদের বাদল অধিবেশন কিছুটা পিছিয়ে ওই সময় নাগাদ ডাকার কৌশলও নিয়েছে কংগ্রেস। যাতে এক দিকে যখন কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলিতে প্রকল্পটি শুরু হবে, তখন সংসদে এই সংক্রান্ত বিলটি পাশ হবে। এই দুইয়ের যোগফলে লোকসভা ভোটের আগে বড় ধরনের রাজনৈতিক কৃতিত্ব নিতে পারবে কংগ্রেস। কিন্তু কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠক ডেকে সনিয়া-রাহুল আজ জানতে পারলেন, তাদের বেশির ভাগই রাজীব গাঁধীর জন্মদিনে প্রকল্পটি শুরু করার ব্যাপারে এখনও প্রস্তুত নয়। ১৩টি কংগ্রেস শাসিত রাজ্যের মধ্যে ওই দিন থেকে প্রকল্প শুরু করার ব্যাপারে সম্মতি দিয়েছে মাত্র দু’টি রাজ্য। দিল্লি ও হরিয়ানা। এই প্রকল্প চালু হলে যেখানে উপকৃতের সংখ্যা তুলনায় কম। ফলে এই দুই রাজ্য থেকে ফায়দা তোলার সুযোগও কম। রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, অসম, কর্নাটকের মতো রাজ্য, যেখানে উপকৃতের সংখ্যা তুলনায় বেশি, তারা এই প্রকল্প শুরুর জন্য আজ আরও সময় চেয়েছে। |
|
দশ জনপথের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী, সনিয়া, অ্যান্টনি ও রাহুল। ছবি: রমাকান্ত কুশওয়াহা। |
এ দিনের বৈঠকের পরে কংগ্রেস সূত্রে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রকল্প শুরু করার দিন বদলানো হচ্ছে না। রাজীব গাঁধীর জন্মদিন থেকেই তা শুরু করা হবে। চেষ্টা হচ্ছে, আরও দু’টি বা তিনটি কংগ্রেস শাসিত রাজ্য যাতে ওই দিন থেকে প্রকল্পটি শুরু করে দিতে পারে। এই প্রকল্প রূপায়ণে কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলির প্রস্তুতির বহর দেখে রীতিমতো অসন্তুষ্ট রাহুল গাঁধী। দলের মুখ্যমন্ত্রীদের তিনি জানান, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় তাঁরা যেন প্রস্তুতি শুরু করে দেন। ২০ অগস্টে না হলেও সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে যেন কংগ্রেস শাসিত ১৩টি রাজ্যে খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প শুরু হয়ে যায়। বৈঠকে রাহুল এ-ও বলেন, অকংগ্রেসি রাজ্যগুলির অনেকেই এই প্রকল্প শুরু করার ব্যাপারে খুব একটা তৎপর নয়। ফলে কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলি যদি দ্রুত প্রকল্প রূপায়ণ করতে পারে, তা হলে অকংগ্রেসি রাজ্যগুলিতে দল তাকে প্রচারের হাতিয়ার করতে পারবে।
গত লোকসভা ভোটে একশো দিনের কাজ প্রকল্পটিকে প্রচারের হাতিয়ার করেছিল কংগ্রেস। এ বার তাদের লক্ষ্য, খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পকেও সে ভাবেই কাজে লাগানো। কংগ্রেস নেতারাই বলছেন, বিজেপি নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরার পর খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের ওপর তাঁদের রাজনৈতিক নির্ভরতা আরও বেড়েছে। কারণ, মেরুকরণের রাজনীতি থেকে বেশি লাভের আশা করছে না দল। সনিয়া-রাহুলের মতে, খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের সুষ্ঠু রূপায়ণ হলে রাজনীতির হাওয়া অনেকটাই বইতে পারে কংগ্রেসের অনুকূলে।
কংগ্রেস নেতারা এ-ও বুঝতে পারছেন, খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প রূপায়ণ করতে গিয়ে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। গত লোকসভা ভোটের দেড় বছর আগে গোটা দেশে একশো দিনের প্রকল্প শুরু হয়ে গিয়েছিল। এ বার খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প এখনও শুরু করাই যায়নি! যদিও কংগ্রেসের প্রধান মুখপাত্র অজয় মাকেন বলেন, “অন্ধ্রপ্রদেশ এবং কর্নাটকের মতো কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলি ইতিমধ্যেই কম দামে গরিব মানুষকে খাদ্য সরবরাহ করছে। বাকি কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলিও বৈঠকে জানিয়েছে, তারা উপভোক্তা তালিকা তৈরি করে ফেলেছেন। প্রকল্প শুরু করতে বেশি দেরি হবে না।” কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলিতে প্রকল্প রূপায়ণে এ ভাবে জোর দেওয়ার পাশাপাশি দেশ জুড়ে বিষয়টিকে প্রচারেও তুলে ধরতে মরিয়া হাইকম্যান্ড। সোমবার থেকে সর্বভারতীয় কংগ্রেসের তরফে দলের মুখপাত্রদের বিভিন্ন রাজ্যে পাঠানো হবে। তাঁরা সেখানে গিয়ে রাজ্য নেতাদের নিয়ে কর্মশালা করবেন। যাতে রাজ্য স্তরে খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প নিয়ে জোরদার প্রচার শুরু করা যায়। তবে রাজনৈতিক প্রচার চালানো ও প্রকল্পের সুষ্ঠু রূপায়ণের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। সনিয়া-রাহুল চাপ দিলেও কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলি কতটা সুষ্ঠু ভাবে প্রকল্পটি রূপায়ণ করতে পারে, এখন সেটাই দেখার। |
পুরনো খবর: খাদ্য সুরক্ষা বিল দ্রুত রূপায়ণ চাইছেন সনিয়া |
|
|
|
|
|