|
|
|
|
উপমা টানতে গিয়ে বিতর্কে জড়ালেন মোদী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
জাতীয় স্তরে প্রচারে দলের হাল হাতে নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। তবু বিতর্ক তাঁর পিছু ছাড়ছে না।
বিজেপির প্রচার কমিটির প্রধান হওয়ার পরে মোদী একটি বিদেশি সংবাদসংস্থাকে প্রথম সাক্ষাৎকারটি দিলেন। গুজরাত দাঙ্গা থেকে মেরুকরণের প্রতীক যাবতীয় বিষয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করার মঞ্চ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সাক্ষাৎকারের ফাঁকে এমন একটি মন্তব্য করলেন তিনি, যা ঘিরে আজ গোটা দেশে বিতর্কের ঝড় উঠে গেল। এবং সেই মন্তব্যের বিরুদ্ধে কংগ্রেস, বাম, সমাজবাদী পার্টি, জেডি(ইউ) সকলেই সরব হয়ে আসরে নামার সুযোগ পেয়ে গেল।
কী বলেছিলেন মোদী?
মোদীকে প্রশ্ন করা হয়, গুজরাত দাঙ্গার জন্য আপনি কি অনুতপ্ত? জবাবে মোদী বলেন, সুপ্রিম কোর্টের গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দল যাবতীয় তদন্ত করেও তাঁকে ক্লিনচিট দিয়েছে। এর পরেই এক ধাপ এগিয়ে তিনি মন্তব্য করেন, “ধরুন কেউ গাড়ি চালাচ্ছে আর আপনি পিছনে বসে আছেন, সেই গাড়ির তলায় যদি একটা কুকুর ছানাও চলে আসে, সেটা তো অবশ্যই দুঃখের।” সঙ্গে যোগ করেন, “আমি মুখ্যমন্ত্রী হই বা না-হই, এক জন মানুষ তো বটেই। যদি কোথাও বাজে কিছু হয়, তা হলে খারাপ লাগাটা তো স্বাভাবিক।”
আর এই মন্তব্য নিয়েই ময়দানে নেমে পড়েছে কংগ্রেস, বাম, জেডিইউ, সমাজবাদী পার্টি। কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতা অজয় মাকেন বলেন, “সভ্য সমাজে কখনওই এমন উপমা দেওয়া হয় না।” সমাজবাদী পার্টির মুখপাত্র কামাল ফারুকি বলেন, “খুব দুঃখের, খুবই অপমানজনক মন্তব্য।” তাঁদের অভিযোগ, মোদী আসলে সংখ্যালঘুদেরই নিশানা করেছেন। তাঁর এই মন্তব্য বিকৃত মানসিকতারই পরিচয় দেয়।
সাক্ষাৎকারে এক প্রশ্নের জবাবে মোদী নিজেকে হিন্দু জাতীয়তাবাদী বলেও উল্লেখ করেছেন। বলেন, “আমি জন্মসূত্রে হিন্দু। জাতীয়তাবাদীও বটে। তা হলে তো আমি হিন্দু জাতীয়তাবাদীই হলাম।” কুকুর ছানার উপমার সঙ্গে সেই কথা জুড়ে মোদী-বিরোধীদের আরও বক্তব্য, নিজেকে হিন্দু নেতা বলে এবং সংখ্যালঘুদের প্রতি বিকৃত উপমা ব্যবহার করে মোদী তাঁর আসল রাজনৈতিক রংটি দেখিয়ে দিয়েছেন। কংগ্রেসের তরফে বলা হয়েছে, এই কারণেই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী তাঁকে একসময় রাজধর্ম পালনের কথা মনে
করিয়ে দিয়েছিলেন।
এই সমালোচনার জবাব দিতে এগিয়ে এসেছেন দলীয় নেতৃত্ব। দলের মুখপাত্র নির্মলা সীতারামন সাংবাদিকদের বোঝানোর চেষ্টা করেন, মোদী কোথাও এমন কথা বলার চেষ্টা করেননি যে, সংখ্যালঘুরা তাঁর নিশানা। বরং মানবিক দৃষ্টি থেকেই গোটা বিষয়টি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু নির্মলার বক্তব্যে হিতে বিপরীত হয়। মোদী-বিরোধীরা বলতে শুরু করেন, তা হলে সংখ্যালঘুদের নিশানা করার বিষয়টি যে পিছনে থাকতে পারে, তা মেনে নিচ্ছে বিজেপি! অবশেষে গোটা বিতর্কে জল ঢালার চেষ্টায় অবতীর্ণ হন খোদ মোদীই। তিনি টুইট করে বলেন, “আমাদের সংস্কৃতিতে যে কোনও ধরনের জীবনকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়, পুজো করা হয়। মানুষই আমার সাক্ষাৎকারের শ্রেষ্ঠ বিচারক।”
এই নিয়ে দিনভর বিতর্ক চলার পরে কিন্তু অন্য প্রশ্নও উঠছে। কেউ কেউ বলছেন, সত্যিই কি মোদী অজান্তেই এমন উপমা ব্যবহার করেছেন? নাকি এর পিছনেও তাঁর কোনও কৌশল ছিল? বিজেপির মধ্যে যাঁরা মোদী-বিরোধী, এই সুযোগে তাঁরা আরও এক বার বলতে শুরু করেছেন, মোদীকে দলের মুখ করলে এমন বিপত্তি আরও হবে।
বস্তুত, এমন সমস্যা যে ঘটতে পারে, লালকৃষ্ণ আডবাণীরা দল ও সঙ্ঘ নেতাদের আগেই বলেছেন। তাঁরা বলেন, এই মেরুকরণ হলে ভবিষ্যতে শরিকদের জন্যও পথ বন্ধ হয়ে যাবে। আজ যে ভাবে বিভিন্ন আঞ্চলিক দল মোদীর মন্তব্য নিয়ে সরব হয়েছে, তাতে সেই ইঙ্গিতই মিলেছে বলে মোদী-শিবিরের দাবি। তাঁদের আরও বক্তব্য, মোদী হিন্দু ভোটব্যাঙ্ককে ফিরে পাওয়ার জন্য যে ভাবে হিন্দুত্বকে ফের উস্কে দিতে চাইছেন, তার খেসারতও দলকে দিতে হবে। পরে আর তিনি চাইলেও নিজেকে উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরতে পারবেন না।
এর জবাবে মোদী শিবিরের নেতাদের দাবি, এ দিন সাক্ষাৎকারের ভুল ব্যাখ্যা করেছে সংবাদমাধ্যম। আর সেই ব্যাখ্যাই কাজে লাগাতে নেমে পড়েছে অন্য রাজনৈতিক দলগুলি। মোদী শিবিরের আরও বক্তব্য, বরং তিনি যে সংখ্যাগরিষ্ঠ ও সংখ্যালঘুদের মধ্যে কোনও বিভেদ করতে চান না, সেটিই স্পষ্ট করেছেন।
গোটা বিতর্কে শরিকদেরও পাশে পেয়েছেন মোদী। অকালি দলের বক্তব্য, কংগ্রেস অকারণেই এনডিএ-র বদনাম করতে চাইছে। শিবসেনাও বলেছে, মোদী যে নিজেকে হিন্দু জাতীয়তাবাদী বলেছেন, সে জন্য আজকের দিনে হিম্মত লাগে।
|
পুরনো খবর: গুজরাতের ঘটনা দেশের কলঙ্ক, বললেন প্রধানমন্ত্রী |
|
|
|
|
|